করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের দরুন গত বছরের ধারাবাহিকতায় আবারও নতুন করে অচল হয়ে পড়ছে বিশ্ব। বিশ্ব বিনোদনেও এর প্রভাব পড়েছে ব্যাপকভাবে। একে একে বহু দেশে বন্ধ হয়েছে প্রেক্ষাগৃহ থেকে শুরু করে সব ধরনের শুটিং। তবে বাংলাদেশে এর বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে। গতবার করোনা আতঙ্কে সব নাটকের শুটিং বন্ধ থাকলেও এবার তা হচ্ছে না। লকডাউনের মধ্যেও চলবে নাটকের শুটিং! তবে বিষয়টি নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। গত বছরের মতো অভিনয়শিল্পীদের পুরোপুরি শুটিং থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেবে না অভিনয় শিল্পী সংঘ। কারণ, সামনের ঈদ উৎসবকে ঘিরে এ সেক্টরে রয়েছে প্রচুর লগ্নি। এই মুহূর্তে শুটিংয়ের ধুম চলছে আসন্ন রমজানের ঈদকে উপলক্ষ করে। প্রায় সব তারকাই ব্যস্ত রয়েছেন টিভি ও অনলাইন প্ল্যাটফরমের জন্য নাটক-টেলিছবিসহ নানারকম নির্মাণের শুটিংয়ে। এ বিষয়ে অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি ও অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘যাঁরা এই লকডাউনে এখনো কাজের শিডিউল তৈরি করেননি তাঁদের কাজ করতে আমরা নিরুৎসাহিত করব। তবে যাঁদের শিডিউল ও সরঞ্জাম চূড়ান্ত করা হয়েছে তাঁরা নিজ দায়িত্বে শুটিং করতে পারেন। এ বিষয়ে সংঘের কোনো মন্তব্য নেই। তবে আমরা মনে করি, জীবনের প্রয়োজনে আমাদের ঘরে থাকা উচিত। জীবনের চেয়ে কাজ বড় নয়। সবাই সচেতন হলে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আমরা মোকাবিলা করতে পারব।’ তবে অনেক প্রতিষ্ঠিত শিল্পীই কাজ না করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। আবার অনেক নির্মাতাই চাচ্ছেন, সময় কমিয়ে কাজ শেষ করতে। এদিকে এমন পরিস্থিতিতে ১২ ঘণ্টা শুটিং বন্ধ না করে চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নাটক সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো। ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলবে শুটিং। যদিও অন্যদিকে সংগঠনগুলো শুটিং করাকে অনুপ্রাণিত করছে না। একান্ত প্রয়োজনে কেউ চাইলে সকাল ৬টায় শুরু করে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শুটিং করতে পারেন বলে সংগঠনগুলো জানিয়েছে। তবে তা করতে হবে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে। কেউ কেউ মনে করছেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় শুটিং বন্ধের ঘোষণাও আসতে পারে অচিরেই। যদিও সংগঠনগুলো সরাসরি শুটিং বন্ধ বলতে পারছে না। এই নিয়ে সংগঠন, শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীদের মধ্যে রয়েছে দ্বিধাদ্বন্দ্ব। ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি সালাউদ্দীন লাভলু জানান, ‘আমরা শুটিংয়ের পক্ষেও নই, বিপক্ষেও নই। তবে শিগগিরই শুটিং নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে। এমনও হতে পারে, শুটিং বন্ধ।’ সংগঠনগুলোর শুটিং করার সিদ্ধান্তে অভিনেতা সজলের মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। অন্যদিকে গুণী অভিনয় শিল্পী দিলারা জামান দিলেন ভিন্নমত। তিনি বলেন, ‘এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছে অনেকেই। শিল্পী কাজ না করে থাকতে পারে, কিন্তু শিল্পীর সঙ্গে যাদের জীবন-জীবিকা জড়িত তাঁদের কি হবে? কাজ হলে অন্তত তাঁরা কিছুটা হলেও ভালো থাকতে পারবে। আমি ৪-৫ মাস কাজ না করলেও সমস্যা নেই। কিন্তু এই পেশার সঙ্গে জড়িত তাঁদের তো চলবে না। আমি মনে করি, সাবধানতা অবলম্বন করে শটিং করতে পারলে ঠিক আছে। তবে গতবারও দেখেছি সেটা সম্ভব নয়। আমি সাবধানতা মেনে চললেও কলা-কুশলীরা তা মেনে চলছেন না। শিল্পীদের মধ্যে অনেকেই কিন্তু আক্রান্ত হয়েছেন- এটা কিন্তু চিন্তার বিষয়। নিজের জন্য ও অন্যের জন্য আমাদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সম্ভব হলে অল্প করে শুটিং করা যেতে পারে। তবে তা কতটা সম্ভব? আমি আপাতত শুটিং করছি না। দুই সপ্তাহ দেখি, তারপর সিদ্ধান্ত নেব।’ এ প্রজন্মের জনপ্রিয় মুখ জোভান এই পরিস্থিতিতে শুটিং করতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘আপাতত শুটিং করছি না। রিস্ক নিতে চাই না। ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কীভাবে শুটিং করা সম্ভব! সময় সীমিত। এই সময়ে আসলে কে কতটা সাবধানতা অবলম্বন করে শুটিং করতে পারবে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তাই আমি শুটিং করছি না।’ এদিকে জনপ্রিয় শিল্পীদের সবাই ইতিমধ্যে চলতি সপ্তাহ শিডিউল দিয়েছেন। সে অনুযায়ী শুটিং স্পট ও সরঞ্জাম ভাড়া হয়েছে। তাই প্রতিকূলতা থাকলেও ঈদকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিত বেশির ভাগ কাজই শেষ করার চেষ্টা করবেন নাটক-সংশ্লিষ্টরা।