শুক্রবার, ২১ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

কেমন চলছে আবৃত্তিচর্চা

পান্থ আফজাল

কেমন চলছে আবৃত্তিচর্চা

প্রয়োগ শিল্পের কনিষ্ঠতম হলেও আবৃত্তি সেই প্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত সর্বপ্রধান ও সর্বপ্রথম বাচিক শিল্প। এটির প্রয়োজনীয়তাকে উপলব্ধি করে একসময় গড়ে ওঠে সাংগঠনিক আবৃত্তিচর্চা। গত দুই বছরে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে অন্যান্য শিল্পমাধ্যমের মতো আবৃত্তিচর্চা হয়ে পড়ছে অনলাইননির্ভর। কারণ করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউন। আর মাধ্যম হিসেবে সহজ ও সুবিধাজনক হওয়ায় এখন দলের আবৃত্তিচর্চা, প্রতিযোগিতা, সাংগঠনিক মিটিং, প্রশিক্ষণ ও উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে। ফিজিক্যালি একত্রিত না হতে পারলেও দেশের ছোট-বড় আবৃত্তি দলগুলো এখন নিয়মিত আবৃত্তিচর্চা, মিটিং, প্রশিক্ষণ, প্রতিযোগিতা বা উৎসব করছে অনলাইনে। এ বছর আবৃত্তিকে অনন্য স্থানে নিতে সম্প্রতি ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতীয় আবৃত্তি পদক’ প্রবর্তন করেছে বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ। ২০২১-এ এই পদক পান কিংবদন্তি আবৃত্তিশিল্পী গোলাম মুস্তাফা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম আহকাম উল্লাহ বলেন, ‘এ বছর প্রথমবারের মতো ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতীয় আবৃত্তি পদক’ পাচ্ছেন প্রয়াত বরেণ্য আবৃত্তিশিল্পী গোলাম মুস্তাফা। বিশ্বজুড়ে বাংলা ভাষার আবৃত্তিশিল্পীদের মধ্যে নির্বাচিত গুণীকে প্রতি বছর ৩১ মার্চ ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতীয় আবৃত্তি পদক’ প্রদান করা হবে। তবে এ বছর করোনা পরিস্থিতির হঠাৎ অবনতি হওয়ায় আগামী অক্টোবরে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ আয়োজিত জাতীয় আবৃত্তি উৎসবের প্রথম দিন পদকটি প্রদান করা হবে।’ এদিকে এই লকডাউনে সাংগঠনিক আবৃত্তিচর্চা নিয়ে বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও বিশিষ্ট আবৃত্তিশিল্পী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছরের প্রথমদিকে কয়েক মাস বন্ধ ছিল সাংগঠনিক আবৃত্তিচর্চা। পরে ব্যাপকভাবে শুরু হয়ে এখনো চলছে। অনলাইন প্রযুক্তিতে আবৃত্তিচর্চা আরও বেড়েছে। আগে তো যে কোনো দলকে অডিটোরিয়াম ভাড়া, কস্টিউম, লাইট, মিউজিকসহ বিপুল খরচের বোঝা বহন করতে হতো একটি প্রযোজনায়। এখন প্রযুক্তির সহায়তায় খুব কম খরচে দেশ ও দেশের বাইরের শিল্পীরা অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হচ্ছেন। ব্যক্তি আবৃত্তিচর্চা বেড়েছে বহুগুণ। যদিও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। দলীয় আবৃত্তিচর্চা কম হচ্ছে। তবে দুই-একটি প্রযোজনা হয়েছেও। অনলাইন প্রযুক্তিতে দেশব্যাপী অসংখ্য অনুষ্ঠান হয়েছে। তবে, মঞ্চের দর্শক-আবৃত্তিশিল্পীদের সরাসরি সংযোগটা হচ্ছে না। আর জাতীয় পর্যায়ে আবৃত্তির জন্য পদক ঘোষণা ইতিবাচক দিক। এর আগে আবৃত্তিতে প্রথমবারের মতো একুশে পদক পেয়েছেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতীয় আবৃত্তি পদক’ প্রবর্তন করেছে বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ। সামনে স্বাধীনতা পদকেও আবৃত্তিশিল্পীরা অন্তর্ভুক্ত হবে আশা করছি।’ বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের (ঢাকা জোন) সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান উল্লাহ তমাল বলেন, ‘এখন তো আবৃত্তিচর্চা অনেকটাই অনলাইননির্ভর। শিশু সংগঠন থেকে শুরু করে বড় দলগুলো অনলাইনেই তাদের চর্চা অব্যাহত রেখেছে। কর্মশালা ও একক আবৃত্তি প্রযোজনা বেড়েছে অনেক। মাঝে স্থবির ছিল। করোনাকালে দল ও সংগঠনগুলোর একসঙ্গে বসা না হলেও নিয়মিত চলছে অনলাইনে আবৃত্তিচর্চা। যেহেতু ফিজিক্যাল ডিসট্যান্স বজায় রাখাটা জরুরি সেহেতু আবৃত্তির দলগুলো জুম বা স্টিমইয়ার্ডে আয়োজন করছে তাদের অনুষ্ঠান।’ জনপ্রিয় আবৃত্তিকার মাহিদুল ইসলাম মাহি বলেন, ‘করোনার সময় তো মঞ্চ বন্ধ। সবকিছু সীমিত পরিসরে চালু রয়েছে। সাংগঠনিক আবৃত্তিচর্চা এখন অনলাইনের মাধ্যমে সচেষ্ট রয়েছে। যদিও এটা যথেষ্ট নয়। আসলে, যদি আবৃত্তির পেশাদারিত্বের কথা বলি, তবে বলব পৃষ্ঠপোষকতা দরকার রাষ্ট্রীয়, ব্যক্তি ও বেসরকারিভাবে। আশার কথা, এখন আবৃত্তিশিল্পে স্বীকৃতি মিলছে। তবে দরকার স্বীকৃতির সংগ্রাম নয়, পেশাদারিত্বের সংগ্রাম।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর