রবিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

চলচ্চিত্র শিল্পীদের নেতৃত্বে যারা এলেন

সুষ্ঠু এবং স্বচ্ছভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ১৭তম দ্বিবার্ষিক নির্বাচন। এ নির্বাচনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন বিপরীত দুটি প্যানেলের দুই প্রার্থী। বিজয়ের পর দুই মেরুর দুই নেতার প্রতিক্রিয়ার কথা তুলে ধরেছেন-আলাউদ্দীন মাজিদ

চলচ্চিত্র শিল্পীদের নেতৃত্বে যারা এলেন

আমার কনসেপ্ট শিল্পীরা বুঝতে পেরেছেন : ইলিয়াস কাঞ্চন

আমি একটা কথাই নির্বাচনের পূর্ব থেকে বলে আসছি যে, শিল্পীরা হলেন চলচ্চিত্র উন্নয়নের মূল শক্তি। শিল্পীরা যদি নিঃস্বার্থভাবে চলচ্চিত্রের উন্নয়নে ঐক্যবদ্ধ হন তাহলে এই শিল্পের সুদিন ফিরতে বাধ্য। অতীতেও এর উদাহরণ আছে। আশির দশকে শিল্পীরা ক্যাপাসিটি ট্যাক্স দূর করার জন্য আন্দোলন করায় তখন ছবির সংখ্যা, শিল্পীর সম্মানী বেড়ে যায়। পুরো চলচ্চিত্র জগতের উন্নয়ন হয়। আমার এই কনসেপ্ট শিল্পীরা বুঝতে পেরেছেন বলেই তারা আমাকে বিপুলভাবে বিজয়ী করেছেন। শিল্পী, চলচ্চিত্র জগতের সব মানুষ এবং সাংবাদিক ভাইদের প্রতি রইল আমার কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ। আমি আবারও বলতে চাই- চলচ্চিত্রের সব সংগঠনকে একসঙ্গে নিয়ে চলচ্চিত্রশিল্পের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাব। আমি বলতে চাই- চলচ্চিত্রশিল্প আমাকে সব দিয়েছে। আজ আমি ইলিয়াস কাঞ্চন হয়েছি এই শিল্পের কল্যাণে। তাই এই শিল্পকে এখন শুধুই কিছু দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব। আমার নেওয়ার আর কিছু নেই। জায়েদ খান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় তাকে আমি অভিনন্দন জানাই। সে আমার ছোট ভাই। সে অন্য প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়ে এলেও দিন শেষে আমরা তো আমরাই। আমাদের মধ্যে কোনো মতানৈক্য থাকবে না। মিলেমিশে শিল্পী ও শিল্পের কল্যাণে কাজ করে যাব। এটিই আমার প্রত্যয়।

নির্বাচিত হলেন তারা

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ১৭তম নির্বাচনে সভাপতি পদে জয়ী হন ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি পেয়েছেন ১৯১  ভোট। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী মিশা সওদাগর পান ১৪৮  ভোট। সাধারণ সম্পাদক পদে ১৭৬  ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন জায়েদ খান। তার প্রতিদ্বন্দ্বী নিপুণ ১৬৩ ভোট পান। ২১৯ ভোট  পেয়ে ডিপজল ও ১৯১ ভোট পেয়ে সহসভাপতি পদে রুবেল নির্বাচিত হয়েছেন। সহসাধারণ সম্পাদক পদে সাইমন সাদিক জয়ী হয়েছেন ২১২  ভোট নিয়ে। তার কাছে সিনিয়র অভিনেতা সুব্রত হেরেছেন ১২৭  ভোট পেয়ে। এ পদে চিত্রনায়ক রিয়াজ ১৫৬ এবং অভিনেতা ডি এ তায়েব ১১২ ভোট পেয়েছেন। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে শাহনূর ১৮৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। পরাজিত প্রার্থী আলেকজান্ডার পেয়েছেন ১৫৫ ভোট। আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক পদে ২০৫ ভোট পাওয়া জয়  চৌধুরীর কাছে নিরব  হেরেছেন ১৩৪ ভোট  পেয়ে। আজাদ খান  কোষাধ্যক্ষ হয়েছেন ১৯৩ ভোট পেয়ে। তাঁর কাছে ফরহাদ  হেরে গেছেন ১৪৬ ভোট পেয়ে। কার্যকরী সদস্য পদে সর্বোচ্চ ২৪০  ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন নায়ক  ফেরদৌস।

 মৌসুমী পেয়েছেন ২২৫, অঞ্জনা ২২৫, রোজিনা ১৮৫, অরুণা বিশ্বাস ১৯২, আলীরাজ ২০৩, সুচরিতা ২০১,  কেয়া ২১২, অমিত হাসান ২২৭,  জেসমিন ২০৮ ও চুন্নু ২২০  ভোট।

 

দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল : জায়েদ খান

গত দুই মেয়াদে শিল্পীদের কল্যাণে যতটুকু কাজ করার চেষ্টা করেছি তা সম্মানিত শিল্পীরা বিবেক দিয়ে অনুধাবন করতে পেরেছেন বলেই আবার আমার ওপর তারা আস্থা রাখতে পেরেছেন। আমাকে বিজয়ী করেছেন। এ জন্য তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। সবাইকে অন্তর থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি বলতে চাই- আমার এই হ্যাটট্রিক বিজয়ে এখনই আমি কোনো উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে চাই না। আমি তখনই খুশি হব যেদিন শিল্পী ও চলচ্চিত্রের জন্য আমার প্রতিশ্রুত সব ওয়াদা পূরণ করতে পারব। এবার আমার প্রথম কাজ হবে ভূমিহীন অসহায় শিল্পীদের আবাসনের ব্যবস্থা করা। শিল্পীদের সামগ্রিক কল্যাণে সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে কাজ করব। শিল্পী সমিতিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাব। শ্রদ্ধেয় ইলিয়াস কাঞ্চন সাহেব আমার অভিভাবক। অন্য প্যানেল থেকে নির্বাচিত হলেও তিনি কিন্তু শিল্পীদের রায় নিয়ে সভাপতির আসনে আসীন হচ্ছেন। তাই এই শিল্প ও শিল্পীদের কল্যাণ চাইলে সব ভেদাভেদ ভুলে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

 

আট নারীই জিতলেন

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে ২১টি পদের মধ্যে আটজন নারী শিল্পী এবার নির্বাচন করেছেন এবং মজার বিষয় হলো আটজনই বিজয়ের মালা গলায় পরেছেন। এ আট নারী শিল্পী হলেন- সুচরিতা, অঞ্জনা, রোজিনা, অরুণা বিশ্বাস, মৌসুমী, শাহনূর, কেয়া ও জেসমিন। যদিও নির্বাচনী ব্যালট পেপার ও ফলাফল তালিকায় পরীমণির নাম রয়েছে, কিন্তু প্রথমে নির্বাচনী ফরম জমা দিলেও পরবর্তীতে নির্বাচন থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন এই নায়িকা। তবে এর আগেই ব্যালট পেপার ছাপা হয়ে যাওয়ায় তার নামটি রয়ে যায় এবং কিছু ভোটার না জেনে-বুঝেই তাকে ভোট দিয়ে দেন।

 

সর্বোচ্চ ভোট পেলেন ফেরদৌস

যে কোনো নির্বাচনেই জনপ্রিয়তার নিরিখে কোনো প্রার্থী সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে থাকেন। আর এর মাধ্যমে তাকে সর্বোচ্চ জনপ্রিয় ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির এই নির্বাচনে সেই জনপ্রিয়তার সম্মান পেলেন অভিনেতা ফেরদৌস। তিনি সর্বোচ্চ ২৪০ ভোট পেয়ে সমিতির কার্যকরী পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। দর্শক ও চলচ্চিত্রকারদের কাছে দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা হিসেবে ফেরদৌসের গ্রহণযোগ্যতা গত প্রায় তিন দশক ধরে অটুট রয়েছে। এবারের নির্বাচনে আবারও তা প্রমাণ করে দিলেন তিনি।

 

সহসভাপতির দুই পদই মিশা-জায়েদের

এবারের নির্বাচনে সহসভাপতির দুটি পদের জন্য দুই প্যানেল থেকে নির্বাচন করেছেন চার প্রার্থী। এদের মধ্যে দুজন মিশা- জায়েদ প্যানেলের প্রার্থী ডিপজল ও রুবেল এবং ইলিয়াস কাঞ্চন- নিপুণ প্যানেলের দুজন প্রার্থী হলেন রিয়াজ ও ডি এ তায়েব। মজার বিষয় বিজয়ী দুজনই হলেন মিশা-জায়েদ প্যানেলের ডিপজল ও রুবেল। মানে কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেলের রিয়াজ-তায়েব ভোটযুদ্ধে ধরাশায়ী হয়েছেন। তারা একজনও তাদের প্যানেলের জন্য অন্তত একটি পদ বয়ে আনতে পারেননি।

 

কোন প্যানেল থেকে কতজন জয়ী

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাহী কমিটির পদের সংখ্যা মোট ২১টি। এ ২১ পদের বিপরীতে এবারের নির্বাচনে অংশ নেওয়া দুটি প্যানেল [ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ এবং মিশা সওদাগর-জায়েদ খান]। এ দুই প্যানেল থেকে নির্বাচন করেছেন মোট ৪৪ জন প্রার্থী। এতে ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেল লাভ করে ৯টি ও মিশা সওদাগর-জায়েদ প্যানেল পায় ১১টি পদ। ২১ পদের মধ্যে কার্যকরী পরিষদ সদস্য পদ হলো ১১টি। এই ১১ পদের বিপরীতে লড়েছেন দুই প্যানেলের ২৪ প্রার্থী। এর মধ্যে ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেল জয়ী হয়েছে ৩টি এবং মিশা-জায়েদ পেয়েছে ৮টি পদ।

 

হাসতে পারলেন না রিয়াজ

আলোচনায় ছিলেন অভিনেতা রিয়াজ। রিয়াজের কান্না নিয়ে আলোচনা হয়েছে সর্বত্র। ইলিয়াস কাঞ্চনের প্যানেল থেকে সহসভাপতি পদে নির্বাচন করা রিয়াজ জয়ের মালা পরতে পারেননি।  ভোটারদের কথা, কেঁদে-কেটে নির্বাচনে জয়ের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন রিয়াজ। ভেবেছিলেন কান্না করে ভোটারদের সহানুভূতি নিয়ে জিতে বিজয়ের হাসি হাসবেন তিনি। কিন্তু বিধিবাম। শেষ পর্যন্ত পরাজিত।

জায়েদ খানের হ্যাটট্রিক

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে টানা তিনবার সাধারণ সম্পাদক পদে বিজয়ী হয়ে হ্যাটট্রিক করার রেকর্ড গড়লেন অভিনেতা জায়েদ খান। ২০১৮-২০২০, ২০২০-২০২২ এবং ২০২২-২০২৪ মেয়াদের নির্বাচনে বিপুলভাবে বিজয়ী হন। এই হ্যাটট্রিকের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে  জায়েদ খান বলেন, ‘আমি কখনো আমার পদ নিয়ে অহংকার বা দুর্নীতি করিনি। শিল্পীদের দুঃসময়ে তাদের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের মুখে হাসি-খুশি হওয়াকেই প্রাধান্য দিয়েছি। আমার এই মানসিকতা আর স্বার্থহীন কাজের বিষয়টি স্বচ্ছভাবে সবার সামনে ফুটে উঠেছে বলেই তৃতীয়বারের মতো আমার শ্রদ্ধেও শিল্পীরা আমাকে এই সম্মানের আসনে বসিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর