সোমবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

আজও ভালোবাসার উদাহরণ তাঁরা

আজও ভালোবাসার উদাহরণ তাঁরা

সচরাচর দেখা যায় তারকাদের বিয়ে, সংসার মানেই তাসের ঘর। কারণ তারকাদের দাম্পত্য জীবনে বিচ্ছেদের খবরটাই বেশি শোনা যায়। কিন্তু শোবিজে এমন কিছু তারকা দম্পতি আছেন যাঁরা যুগযুগ ধরে সুখের সংসার সাজিয়েছেন, টিকিয়ে রেখেছেন। বিচ্ছেদের ভিড়ে দাম্পত্য জীবনে নিঃসন্দেহে ভালোবাসার চির উদাহরণ তাঁরা।  এমনই কয়েকটি সুখী দম্পতির কথা তুলে ধরেছেন - আলাউদ্দীন মাজিদ

 

শাবনাজ-নাঈম

চলচ্চিত্র নির্মাতা এহতেশাম পরিচালিত চাঁদনী ছবির মাধ্যমে বাংলা সিনেমায় নাঈম-শাবনাজ জুটির অভিষেক হয়। এরপর থেকে রুপালি পর্দায় তাঁরা জুটি বেঁধে দারুণ সাড়া ফেলেন। নাঈম-শাবনাজ অভিনীত অধিকাংশ ছবিই ব্যবসাসফল। সফল স্ক্রিনে নাঈম-শাবনাজ বাস্তব জীবনেও সফল। অভিনয় করতে গিয়েই প্রেম। প্রেম থেকেই বিয়ে। ১৯৯৪ সালের ৫ অক্টোবর তাঁরা দুজন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের ঘরে রয়েছে দুই কন্যাসন্তান। এরই মধ্যে দাম্পত্য জীবনের দুই যুগেরও বেশি সময় পার করেছেন তাঁরা।

 

বিপাশা-তৌকীর

তৌকীর আহমেদ ও বিপাশা হায়াত। তাঁদের প্রথম পরিচয় হয় বাংলাদেশ টেলিভিশনের ২৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে। দুজন একসঙ্গে প্রথম অভিনয় করেন ১৯৯২ সালে সোনালি রোদ্দুর নামের একটি নাটকে। একসঙ্গে নাটক করতে গিয়ে তাঁদের ভালোবাসার শুরু। ১৯৯৯ সালে তাঁরা পারিবারিকভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। দীর্ঘ ২২ বছরের দাম্পত্য জীবনে তাঁদের সংসার আলো করে এসেছে আদরের দুই সন্তান।

 

মৌসুমী-সানী

সিনেমার বাইরেও তারকা জগতের জনপ্রিয় দম্পতি ওমর সানী ও মৌসুমী। ১৯৯৫ সালে বিয়ে করেন এ দম্পতি। তৎকালীন শেরাটন হোটেলে জাঁকজমকপূর্ণভাবে তাঁদের বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। দুই দশকেরও বেশি সময়ের সংসারে এক ছেলে ফারদিন ও এক মেয়ে ফাইজাকে নিয়ে বেশ সুখেই আছেন তাঁরা।

 

জাহিদ-মৌ

অভিনেতা জাহিদ হাসান এবং অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী সাদিয়া ইসলাম মৌ, দুজনের প্রথম পরিচয় হয় হানিফ সংকেতের ইত্যাদি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে পারফরম করতে গিয়ে। সেই পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব; অতঃপর প্রেম।  ১৯৯৭ সালে তাঁরা ভালোবাসার ঘর বেঁধেছেন। ক্যারিয়ার এবং প্রেমে চূড়ান্ত সাফল্যের পর এই জুটি দাম্পত্য জীবনেও দারুণ সুখী বাবা-মা। মেয়ে পুষ্পিতা ও ছেলে পূর্ণকে নিয়ে তাঁদের এখন সুখের সংসার।

 

আজিজুল হাকিম-জিনাত হাকিম

আজিজুল হাকিম ও জিনাত হাকিম। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে আজিজুল হাকিম ছিলেন জনপ্রিয় নাট্যাভিনেতা। তখন এক দিন নাটকের মহড়া করতে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে। একসময় জানা যায়, এ হলেই থাকতেন তাঁর জীবনসঙ্গী জিনাত। ভালোবেসে তাঁরাও কাটিয়ে দিলেন প্রায় দুই দশকের বেশি সময়। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে এখন তাঁদের সুখের সংসার।

 

রোজী-সেলিম

১৯৯৩ সালের বিজয় দিবসে রোজী-সেলিম দম্পতির যুগল জীবনের শুরু। বিয়ের বছর থেকেই রোজী সিদ্দিকী ঢাকা থিয়েটারে কাজ শুরু করেন। তারও এক দশক আগে থেকেই শহীদুজ্জামান সেলিম এই নাট্যদলের কর্মী ছিলেন। বিয়ের পর একই ছাদের নিচে গুণে গুণে কাটিয়ে দিয়েছেন ২৭টি বছর। সংসার জীবনে তাঁদের ঘর আলো করে এসেছে দুই মেয়ে।

 

ফারুকী-তিশা

নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিশাকে। কিন্তু বিয়েটা হবে হচ্ছে করেও বছরের পর বছর আটকে ছিল। অবশেষে ২০১০ সালের ১৬ জুলাই ফারুকী ও তিশা ঘটা করে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। জনপ্রিয় এই তারকা জুটি এরই মধ্যে আদর্শ দম্পতি হিসেবে একসঙ্গে কাটিয়ে দিয়েছেন অর্ধযুগেরও বেশি সময়। চলতি বছর তাঁদের ঘর আলো করে এসেছে নতুন অতিথি। এক কন্যাসন্তানের জনক-জননী তাঁরা এখন।

 

মোশাররফ করিম-জুঁই

গত দশকের শুরুর দিকে সেগুনবাগিচায় একটি কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করতেন মোশাররফ করিম। একই কোচিংয়ে পড়তেন জুঁই। তখন থেকেই জুঁইকে পছন্দ করতেন, কিন্তু বলতে পারেননি। পরবর্তী সময় জুঁইও সেই কোচিংয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। মোশাররফ করিম তাঁর মনের কথা জুঁইকে বলেন।  ২০০৪ সালে বিয়ে করেন তাঁরা। এরই মধ্যে এক যুগেরও বেশি সময় পার করেছে এ দম্পতি। বর্তমানে একমাত্র সন্তান রোবেন রায়ান করিমকে নিয়ে এখন তাঁদের সুখের সংসার।

 

ফেরদৌসী মজুমদার-রামেন্দু মজুমদার

রামেন্দু মজুমদার ও ফেরদৌসী মজুমদার। ১৯৬১ সালে একই সঙ্গে ভর্তি হন দুজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁদের সাবসিডিয়ারি ছিল সমাজবিজ্ঞান। সেখানেই তাঁদের দেখাসাক্ষাৎ, তারপর প্রেম। ১৯৬৫ সালে পড়াশোনা শেষ করার পর থেকেই তাঁদের মধ্যে বিয়ের ভাবনা জোরালো হতে থাকে। কিন্তু তৎকালে ধর্মের বেড়াজাল পেরিয়ে একে অন্যের গলায় মালা পরানো ছিল কঠিন। তারপরও শত বাধা ডিঙিয়ে ১৯৭০ সালে তাঁরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

 

লায়লা হাসান-হাসান ইমাম

অভিনেতা, নির্দেশক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব  সৈয়দ হাসান ইমাম ও নৃত্যশিল্পী, অভিনেত্রী লায়লা হাসান দেশের এ দুই গুণী মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ভালোবেসে বিয়ে করেন ১৯৬৫ সালের ৩০ জুন। এই দম্পতিকে দেশীয় সাংস্কৃতিক জগতের পুরোধা ব্যক্তিত্ব বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের সফল ও আদর্শ দম্পতিদের তালিকায় ঘুরেফিরে প্রথম সারিতে আসে এই দম্পতির নাম। সদা হাসিখুশি এই তারকা দম্পতি শুধু সফল জুটিই নয়, সফল বাবা-মাও। এক ছেলে ও দুই মেয়ের সফল পিতা-মাতা এই দম্পতি।

 

ইনামুল হক-লাকী ইনাম

ড. ইনামুল হক একটা সময় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। একই সঙ্গে নাট্যচর্চা। তাঁর দীর্ঘ জীবনের দাম্পত্য সঙ্গী বরেণ্য নাট্যশিল্পী লাকী ইনাম। লাকী ইনাম ১৯৭২ সালে ‘নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়’ দলে যোগ দেন। একই দলে কাজ করতেন ইনামুল হক। সেখান থেকেই তাঁদের পরিচয়, পরবর্তী সময়ে ঘনিষ্ঠতা। এ দম্পতি তাঁদের বিবাহিত জীবনের প্রায় তিন যুগের বেশি সময় পার করেছেন। গত বছর না ফেরার দেশে চলে যান ইনামুল হক।

 

রফিকুল আলম-আবিদা সুলতানা

বাংলাদেশ বেতারে প্রথম দেখা হয় রফিকুল আলম ও আবিদা সুলতানার। সে সময় ঢাকা স্টেডিয়ামে একটি সংগীত সম্মেলনে তাঁদের পরিচয় করিয়ে দেন গুণী শিল্পী লাকী আখন্দ। এরপরই গানের জগতে বিচরণ করতে গিয়ে একে অন্যের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ পান। ১৯৭৪ সালে তাঁদের প্রেমের সূচনা, ১৯৭৫ সালে তাঁরা বিয়ে করেন। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে একই ছাদের নিচে বসবাস করছেন তাঁরা।

 

আলী যাকের-সারা যাকের

আলী যাকের ও সারা যাকের দম্পতি দীর্ঘদিন ধরে বিনোদন ভুবনের সঙ্গে জড়িত। নাটকের দল নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের মাধ্যমে দুজনের পরিচয়। একসঙ্গে থিয়েটার করার সূত্র ধরেই আলী যাকের আর সারা যাকেরের কাছে আসা। পরিচয়ের পর চুপিসারে একে অন্যকে নিজের প্রিয় বই উপহার দিতেন। ইংরেজিতে বেশ কৌশলী চিঠি লিখতেন আলী যাকের। ঝরঝরে সুন্দর হাতের লেখা আর সাবলীল অনুভূতিতে মুগ্ধ হতেন সারা। তিনিও জবাবটা দিতেন মজা করে। মনের অজান্তে দিন দিন বন্ধুত্ব থেকে একসঙ্গে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেন তাঁরা। এরপর তাঁরা ১৯৭৭ সালে সুখের নীড় রচনা করেন। ২০২০ সালে আলী যাকের না ফেরার দেশে চলে গেলেও জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তাঁদের ভালোবাসা ছিল অটুট। তাঁদের ঘরে জন্ম নিয়েছে ইরেশ যাকের ও শ্রেয়া সর্বজায়া।

সর্বশেষ খবর