শনিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : শাহীন সামাদ

নজরুলসংগীত অনেক কারুকার্যময়, শেখাটা কঠিন

নজরুলসংগীত অনেক কারুকার্যময়, শেখাটা কঠিন

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংগীতশিল্পী শাহীন সামাদ। শুদ্ধ সংগীতের প্রসারে তাঁর অবদান অনেক। নজরুলসংগীতেও এক উজ্জ্বল শিল্পী তিনি। তাঁর দেখানো পথে হাঁটছেন অনেকে।  জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে এই প্রথিতযশা শিল্পীর বলা কথা তুলে ধরেছেন - আলাউদ্দীন মাজিদ

 

নজরুল প্রয়াণ দিবসে কবিকে নিয়ে আপনার আয়োজন কেমন?

প্রতি বছরই দিনটিকে ঘিরে প্রচুর ব্যস্ততা থাকে আমার। এবারও বেশ কিছু সংগঠন ও টিভি চ্যানেল আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নেব। বলতে পারেন এবারও এই দিনে বেশ ব্যস্ত থাকছি। মূলত নজরুলসংগীতকে ঘিরেই আমার যত ব্যস্ততা।

 

রবীন্দ্র কিংবা নজরুলসংগীতে ফিউশন হচ্ছে আজকাল। কীভাবে দেখছেন?

আমার কাছে ফিউশন ব্যাপারটি ভালোই লাগে। বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যেহেতু ফিউশন করা হয়, সেহেতু আমার মনে হয় গানের কথা ও সুর ঠিক রেখে যেভাবেই গান গাওয়া হোক না কেন তাতে কোনো অসুবিধা নেই। তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, ফিউশনের নামে গানের কথা ও সুর পাল্টে ফেলা হচ্ছে। এ বিষয়টির প্রতি একটু খেয়াল রেখেই বর্তমান প্রজন্মের উচিত গানে ফিউশন করা।

 

নজরুলসংগীত নিয়ে একাডেমিক শিক্ষা চালু হওয়ার প্রভাব কতটা পড়েছে আমাদের সংগীতাঙ্গনে?

গানের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। নজরুল কিংবা রবীন্দ্রসংগীত, সব গানেই একাডেমিক শিক্ষাটা জরুরি। আমি যেমন ছায়ানটে শিক্ষা নিয়েছি। ঠিক তেমনি অনেক শিক্ষার্থী এখন ছায়ানটসহ বিভিন্ন একাডেমি থেকে গানবিষয়ক শিক্ষা গ্রহণ করছে। তবে এ সময়ের শিল্পীরা মিডিয়ার সামনে নিজেদের তুলে ধরার চেষ্টা করছে বেশি। মিডিয়ায় নিজেকে দেখানোর লোভ সংবরণ করতে পারলেই একাডেমিক শিক্ষা আরও সুফল বয়ে আনবে।

 

নজরুলসংগীত সংরক্ষণে উদ্যোগ যথেষ্ট বলে মনে করেন?

নজরুল ইনস্টিটিউট নজরুলের গান, উপন্যাস, ছোট গল্প, কবিতাসহ নজরুলের সব নথিপত্র সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছে। এখন সবাই নজরুল ইনস্টিটিউট থেকেই নজরুলবিষয়ক যে কোনো কিছুই সংগ্রহ করতে পারবেন। এসব উদ্যোগকে একেবারেই অপ্রতুল বলা যাবে না।

 

আগের ও বর্তমানের নজরুলসংগীত শিল্পীদের মধ্যে কোনো পার্থক্য কী আছে?

আমাদের সময়ের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের নজরুলসংগীত যারা গায়, তাদের মূল পার্থক্য হলো সাধনায়। নজরুলসংগীত গাওয়ার জন্য অনেক সাধনার দরকার হয়। সত্যিই নজরুলকে ভালোবাসলে তাঁর গান গাওয়ার জন্য দীর্ঘদিনের সাধনার দরকার। নতুন প্রজন্মের মধ্যে এই সাধনার প্রবণতা কম। যারা নজরুলসংগীত গায় তাদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, তারা যেন এর জন্য কঠোর সাধনা করে।

 

বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে নজরুলসংগীত শেখার আগ্রহ কেমন?

অনেক নতুন ছাত্রছাত্রী নজরুলসংগীত শিখছে। নজরুলসংগীত অনেক কারুকার্যময়, শেখাটা আসলে অনেক কঠিন। এ জন্য আগে ছাত্রছাত্রী কম আসত। তবে এখন অনেকেই আসছে। তারা অনেক সুন্দর গাইছে। এটি একটি আশাজাগানিয়া দিক। তবে এর বিপরীত দিকও আছে। এখনকার ছেলেমেয়েরা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে খুব বিভ্রান্ত হয়ে যায়। কিছুদিন নজরুলসংগীত শুরু করলে কেউ বলে- তাকে দিয়ে ফোক গান ভালো হবে, কেউ বলে- সে আধুনিক গানে ভালো করবে। ফলে নিজেদের মধ্যে সে আগ্রহ থাকে না। তারা দ্বিধান্বিত হয়ে যায়। সবকিছু মিলিয়ে তাদের পথচলার রাস্তা ভাগ হয়ে যায়। তাই আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তবে এখনকার ছেলেমেয়েরা খুব অস্থির হলেও তাদের মধ্যে মেধা আছে। অনেক বেশি নিজেদের ফোকাস করা নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে লক্ষ্যের দিকে তাদের মনোযোগ শূন্য। তবে এর মধ্যে কেউ কেউ আছেন যাদের গায়কি অসাধারণ।

 

নজরুলসংগীতের সুরের ক্ষেত্রে নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের মধ্যে কোনো বিচ্যুতি লক্ষ্য করেন?

আমাদের সময় আমরা স্বরলিপি পেতাম। সে অনুযায়ী নজরুলসংগীত শিখতাম। অনেক বছর ধরে নজরুল ইনস্টিটিউটে স্বরলিপি করছে। তারা ৩ হাজারের মতো সংগীতের স্বরলিপি করেছে। যারা নজরুলসংগীত শেখাচ্ছেন, তারা যেন এই স্বরলিপি সংগ্রহ করে তা শেখান। তা ছাড়া বিভিন্ন জেলায় নজরুলসংগীত গাওয়ার ক্ষেত্রে আঞ্চলিক উচ্চারণের একটা সমস্যা দেখা যায়, এগুলো ঠিক করে নিতে হবে।

 

দেশে নজরুলসংগীত শিক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠান কী যথেষ্ট?

একজন শিল্পীকে গড়ে তোলার পেছনে একটি প্রতিষ্ঠান অনেক বড় ভূমিকা রাখে। আমি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কথা বলতে পারব না, তবে ছায়ানটের কথা বলতে পারি। আমাদের দেশের যত বড় প্রতিষ্ঠিত নজরুলসংগীত শিল্পী আছেন তাঁরা সবাই ছায়ানটের ছাত্রছাত্রী। এখানে একজনকে শিল্পী হয়ে ওঠার পেছনে গানের পাশাপাশি সব ধরনের শিক্ষা দেওয়া হয়। আরও বেশি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা উচিত। তবে মানসম্মত প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে হলে সব নিয়ম-কানুন মেনে শিক্ষক-ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে সব বিষয়ে মতামত নিয়ে একটি প্রতিষ্ঠান চালানো উচিত বলে আমি মনে করি।

সর্বশেষ খবর