রবিবার, ১৬ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

চলচ্চিত্রে শাবানা ও জাভেদ দম্পতির সাত সতেরো

চলচ্চিত্রে শাবানা ও জাভেদ দম্পতির সাত সতেরো

বলিউড সাম্রাজ্যে সত্তরের দশকে দুই নক্ষত্রের আবির্ভাব ঘটে। একজন অভিনেত্রী শাবানা আজমি, অন্যজন কবি, গীতিকার ও চিত্রনাট্যকার জাভেদ আখতার। দুজনের সৃজনশীল কাজে বলিউড পায় অনন্য সমৃদ্ধি। একসময় দাম্পত্য বন্ধনে আবদ্ধ হন তাঁরা। এই দম্পতির কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

এক নজরে শাবানা আজমি-জাভেদ আখতার

শাবানা আজমির জন্ম ১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৫০ সালে ভারতের হায়দরাবাদে। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি সমাজকল্যাণমূলক কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। তিনি উর্দু ভাষার কবি কাইফি আজমি ও মঞ্চ অভিনেত্রী শওকত কাইফির কন্যা। তিনি পুণের ভারতীয় চলচ্চিত্র ও দূরদর্শন সংস্থার প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তাঁর চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে ১৯৭৪ সালে। শাবানা চলচ্চিত্রে তাঁর কাজের জন্য ভূয়সী প্রশংসা ও একাধিক পুরস্কার অর্জন করেছেন, তন্মধ্যে রয়েছে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে রেকর্ডসংখ্যক পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সম্মাননা। এ ছাড়া তিনি পাঁচটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার এবং ৩০তম ভারতীয় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘চলচ্চিত্রে নারী’ সম্মাননা লাভ করেন। শিল্পকলায় অবদানের জন্য ভারত সরকার তাঁকে ১৯৮৮ সালে দেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মশ্রী এবং ২০১২ সালে দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মভূষণে ভূষিত করে। ২০১২ সালে অপ্সরা ফিল্ম পুরস্কারেও ভূষিত হন। শাবানা মুম্বাইয়ের কুইন ম্যারি স্কুলে পড়াশোনা করেন। তিনি মুম্বাইয়ের সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্র ও দূরদর্শন সংস্থানে ভর্তি হন। ১৯৭২ সালে তাঁর শ্রেণিতে শীর্ষস্থান অর্জন করেন। পুণের ভারতীয় চলচ্চিত্র ও দূরদর্শন সংস্থান থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে ১৯৭৩ সালে খাজা আহমেদ আব্বাসের ফাসলা চলচ্চিত্রে চুক্তিবদ্ধ হন। তাঁর অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র হলো শ্যাম বেনেগালের অভিষেক চলচ্চিত্র ‘অঙ্কুর’। ১৯৯৬ সালে দীপা মেহতার ফায়ার চলচ্চিত্রে অভিনয় করে ৩২তম শিকাগো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব থেকে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে সিলভার হুগো পুরস্কার এবং লস অ্যাঞ্জেলেস আউটফেস্ট থেকে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার অর্জন করেন। অন্যদিকে জাভেদ আখতারের জন্ম ১৭ জানুয়ারি, ১৯৪৫ সালে। তিনি ভারতের মূলধারার একজন লেখক এবং তাঁর বেশির ভাগ সফল এবং জনপ্রিয় কাজগুলো সেলিম খানের সঙ্গে করেছেন। তাঁর কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১০ বার ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে ভূষিত হন। তাঁর আসল নাম ছিল জাদু। তাঁর বাবার লেখা একটা কবিতা ‘লম্বা, লম্বা কিসি জাদু কা ফাসানা হোগা’ থেকে এই নাম নেওয়া হয়। পরবর্তীতে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি ‘জাদু’ নামের সঙ্গে মিল রেখে জাভেদ নাম নেন। তিনি লক্ষেèৗর কলভিন তালুকদার কলেজ এবং মিন্টো সার্কেলে পড়াশোনা করেন। তিনি আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। সেলিম খানের সঙ্গে প্রথম জাভেদ আখতারের সাক্ষাৎ হয় ‘সরহাদি লুটেরা’ ছবি তৈরির সময়। এই ছবি ছিল সেলিম খানের সর্বশেষ অভিনীত ছবিগুলোর একটা। এরপর তিনি চিত্রনাট্য লেখার দিকে মন দেন। এ সময় থেকে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। সেলিম খান চিত্রনাট্য লিখতেন আর জাভেদ আখতার তাঁকে সংলাপ দিয়ে সাহায্য করতেন। সে সময় থেকে তাঁরা সেলিম-জাভেদ জুটি নামে ব্যাপক পরিচিতি পান। ১৯৮২ সালের আগ পর্যন্ত তাঁরা এভাবেই কাজ চালিয়ে যান। অভিনেতা রাজেশ খান্না প্রথম সেলিম খান এবং জাভেদ আখতারকে তাঁর ‘হাতি মেরে সাথি’ চলচ্চিত্রে কাজ করার সুযোগ দেন। তাঁরা একত্রে প্রায় ২৪টির মতো চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন এবং ১৯৮২ সালে ব্যক্তিগত কারণে আলাদা হয়ে যান। সেলিম-জাভেদ জুটিকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সফল চিত্রনাট্যাকার বলা হয়। জাভেদ আখতার ২০০৯ সালে রাজ্যসভার সদস্য মনোনীত হন। তিনি পাঁচবার জাতীয় পুরস্কার পান। এ ছাড়াও পদ্মশ্রী এবং পদ্মভূষণ, সাহিত্য একাদেমি পুরস্কার লাভ করেন তাঁর কবিতাসংগ্রহ ‘লাভা’র জন্য।

 

শাবানা-জাভেদের জটিল প্রেম পরিণয়

১৯৮৪ সালের ৯ ডিসেম্বর কবি, গীতিকার ও চিত্রনাট্যকার জাভেদ আখতারের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন শাবানা। এটি ছিল জাভেদ আখতারের দ্বিতীয় বিবাহ। আগে তিনি বলিউডের চিত্রনাট্যকার হানি ইরানিকে বিয়ে করেছিলেন। শাবানা আজমির চলচ্চিত্রজীবনের মতো ব্যক্তিগত জীবনও রঙিন। বলা যায়, গীতিকার তথা কবি জাভেদ আখতার এবং শাবানা আজমির প্রেমকাহিনি কোনো সিনেমার চেয়ে কম ছিল না।

১৯৭০ সালে শাবানার বাবা কাইফি আজমির কাছে জাভেদ লেখালেখির শিল্পকলা শিখতে আসা শুরু করেন। সেই সূত্রে শাবানার সঙ্গে রোজ দেখা হতো তাঁদের। এভাবে একে অপরের কাছে আসতে শুরু করেন। বাড়িতে জাভেদের স্ত্রী হানি ও দুই সন্তান ফারহান এবং জোয়া আখতার রয়েছে। তারপরও জাভেদ-শাবানা একে অপরের প্রেমে রীতিমতো পাগল। হানি জানতে পারেন তাঁর স্বামীর সঙ্গে শাবানার এই সম্পর্কের কথা। এ নিয়ে জাভেদের সঙ্গে হানির নিত্য অশান্তি শুরু হয়। অশান্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছালেও জাভেদ তাঁর সন্তানদের ছেড়ে বেরিয়ে আসতে রাজি হননি। অবশেষে প্রতিদিনের অশান্তি থেকে মুক্তি পেতে হানি তাঁর স্বামীকে শাবানার কাছে চলে যাওয়ার সম্মতি দেন। হানি জাভেদকে ভরসা দেন যে, সন্তানদের দেখাশোনা তিনি ভালোভাবেই করবেন। হানি তাঁদের সম্পর্ক মেনে নিলেও শাবানার বাড়িতে চরম অশান্তি শুরু হয়। শাবানার বাবা কাইফি আজমি কিছুতেই মানতে পারেন না যে, তাঁর মেয়ে একজন বিবাহিত পুরুষকে বিয়ে করবে। কিন্তু জাভেদের প্রেমে পাগল ছিলেন শাবানা।

বাবার কথা তিনি শোনেন না। অনেক সংঘর্ষের পর অবশেষে প্রেমের জয় হয়। জাভেদ তাঁর প্রথম স্ত্রী হানিকে তালাক দিয়ে শাবানাকে বিয়ে করেন।

সর্বশেষ খবর