শুক্রবার, ২৮ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

সেই অপর্ণা সেন এখন

সেই অপর্ণা সেন এখন

অপর্ণা সেন, ওপার বাংলার এ কিংবদন্তি অভিনেত্রী এখন পরোক্ষ ভাবে রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হয়েছেন। তিনি একাধারে অভিনেত্রী, চিত্রপরিচালক, চিত্রনাট্যকার, নাট্যমঞ্চশিল্পী, সাংবাদিক। সর্বক্ষেত্রেই তিনি তাঁর অসাধারণ প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়েছেন। এ প্রখ্যাত ব্যক্তিত্বের বর্তমান সময় ও চলচ্চিত্র জীবন নিয়ে লিখেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

মুখ্যমন্ত্রীকে খোলা চিঠি

সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে অনুষ্ঠিত বাংলার পঞ্চায়েত নির্বাচনে হিংসা, প্রাণহানি দেখে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে খোলা চিঠি লেখেন ক্ষুব্ধ-আতঙ্কিত বিশিষ্টজনদের একাংশ। ওই চিঠি একটি অনুষ্ঠানে পাঠ করে সবাইকে শোনালেন অভিনেত্রী অপর্ণা সেন। কলকাতার ভারতসভা হলে গত বৃহস্পতিবার মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআরের এক আলোচনাচক্রের পরে ওই চিঠি প্রকাশ্যে আসে। আলোচনাচক্রে রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনার পরে সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। সেখানে পঞ্চায়েত ভোটকে কেন্দ্র করে চলা হিংসার ঘটনায় অন্যান্য রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি এ রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা তৃণমূল সরকারেরও তীব্র নিন্দা করেন বর্ষীয়ান এ অভিনেত্রী। তিনি বলেন, ‘এই পরিবর্তন আমরা কেউ চাইনি’। শুধু তৃণমূলকেই নয়, রাজ্যের সব রাজনৈতিক দলকেই দুর্নীতিগ্রস্ত বলে আক্রমণ করেন অপর্ণা।

 

স্টাইল আইকন

অপর্ণা সেন শুধু অভিনেত্রী, পরিচালকই নন; তিনি বাঙালির স্টাইল আইকন। শুধু অভিনয়ের ক্ষেত্রেই নয় পরিচালনার জগতেও সেরা শিরোপা ছিনিয়ে নিয়েছেন এ বঙ্গকন্যা।

 

সাংবাদিকতা

অপর্ণা সেন সাংবাদিকতা পেশায়ও সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। সত্তরের দশকে তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় নারীবিষয়ক ম্যাগাজিন পত্রিকা ‘সানন্দা’। এ ম্যাগাজিনটি এখনো সমান জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে পাঠকের মাঝে।

 

সামাজিক আন্দোলন

অপর্ণা সেন সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলেই আটকে থাকেননি। নাগরিক সমাজের উজ্জ্বল মুখ তিনি। নন্দীগ্রাম আন্দোলন থেকে হাল আমলের প্রাইমারি টেট আন্দোলন; সবেতেই মুখ খুলেছেন অপর্ণা। এ মুহূর্তের জ্বলন্ত ইস্যু প্রাইমারি টেট আন্দোলন নিয়ে দিন কয়েক আগে সরকারের বিরোধিতা করে আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন অপর্ণা সেন।

 

মহানায়কের শেষ ইচ্ছা পূরণে অক্ষম

তখনকার দিনে উত্তম কুমারের সঙ্গে কাজ করা মানে একটা বিরাট ব্যাপার। যে সময় লোকে উত্তমের পাশে সুচিত্রাকে চাইত, আর ওই সময়টাতেই দাঁড়িয়ে উত্তমের সঙ্গে ১৪টি ছবি করেছেন। সেসব ছবিও বেশ হিট। ‘মেমসাহেব’, ‘আলোর ঠিকানা’, ‘সোনার খাঁচা’, ‘রাতের রজনীগন্ধা’ সহ আরও অনেক ছবি। এ ১৪ এর জায়গায় ১৫ হতে পারত কিন্তু নিজের কারণেই এ ১৫ হতে দেননি। এর জন্য এখনো আফসোস করেন অপর্ণা সেন। উত্তম কুমার অভিনীত শেষ ছবি ‘ওগো বধূ সুন্দরী’তে উত্তম কুমারের স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করার জন্য সুযোগ এসেছিল কিন্তু অপর্ণা সেন রাজি হননি, কারণ এটা ছিল সেকেন্ড লিড চরিত্র, তাই তিনি করেননি। তাই তাঁর আক্ষেপ। আর এ ছবিটি করতে করতেই উত্তম কুমার মারা যান। অপর্ণা সেনের আফসোস এ কারণেই, যদি জানতেন উত্তম কুমারের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ তিনি আর পাবেন না, তাহলে এ সুযোগ হারাতেন না।

 

ঢাকায় এসে মাটির ময়নার প্রশংসা করলেন অপর্ণা সেন

ভারতীয় অভিনেত্রী অপর্ণা সেন ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকায় আসেন। ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিতে বাংলাদেশে এসেছিলেন এ অভিনেত্রী-নির্মাতা- সাংবাদিক। তখন তিনি বাংলাদেশি চলচ্চিত্র নিয়ে বলেন, প্রয়াত চলচ্চিত্রনির্মাতা তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’ চলচ্চিত্রটি দেখেছি। মুগ্ধ হয়েছি। অসাধারণ তারেক মাসুদ দারুণ একজন নির্মাতা ছিলেন।

 

ছোটবেলা ও পরিবার জীবন

অপর্ণা সেন ২৫ অক্টোবর ১৯৪৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন চলচ্চিত্র সমালোচক ও চলচ্চিত্রনির্মাতা চিদানন্দ দাশগুপ্ত। তাঁর মা সুপ্রিয়া দাশগুপ্ত ছিলেন সম্পর্কে প্রখ্যাত বাংলা কবি জীবনানন্দ দাশের খুড়তুতো বোন। অপর্ণা সেন তাঁর ছোটবেলা কাটিয়েছেন হাজারীবাগ এবং কলকাতা শহরে। তিনি কলকাতার মডার্ন হাইস্কুল ফর গার্লস-এ লেখাপড়া করেছেন। তিনি কলকাতার বিখ্যাত প্রেসিডেন্সি কলেজে ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে পড়েছিলেন, যদিও তিনি ডিগ্রি নেননি। অপর্ণা সেন পরবর্তীকালে সঞ্জয় সেনকে বিয়ে করেন। তাঁর দুই মেয়ে কমলিনী ও কঙ্কনা এবং জামাতা রণবীর শুরে (কঙ্কনার স্বামী)।

 

অভিনয় জীবন

অপর্ণা সেন ১৯৬১ সালে ‘তিন কন্যা’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অভিনয় জীবনে পদার্পণ করেন। ১৯৮১ সাল থেকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি চলচ্চিত্রের পরিচালনায়ও আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তাঁর পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র হলো ‘৩৬ চৌরঙ্গী লেন’। এ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে। এরমধ্যে ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস লইয়ার’ এর জন্য তিনি দ্বিতীয়বার শ্রেষ্ঠ পরিচালকের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত হন।

 

সম্মাননা

১৯৮৭ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কার পান তিনি। ১৯৭০ সালে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে বিএফযে পুরস্কার পান ‘অপরিচিতর’ জন্য। ১৯৭৫-এ ‘সুজাতা’, ১৯৮৮-তে ‘একান্ত আপন’, ১৯৯৩-তে ‘শ্বেত পাথরের থালা’, ২০০১ সালে ‘পারমিতার একদিন’-এর জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পান। ১৯৯২ ও ১৯৯৭ সালে শ্রেষ্ঠ সহঅভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন ‘মহাপৃথিবী’ ও ‘অভিশপ্ত প্রেম’-এর জন্য। অপর্ণা পরিচালিত ‘পরমা’ ছবিটিও জাতীয় পুরস্কারের মঞ্চে সেরা বাংলা ছবি হিসেবে ভূষিত হয়। ২০১৩ সালে লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কারে সম্মানিত হন। ২০০২ সালে শ্রেষ্ঠ নামকরণের জন্য আনন্দলোক পুরস্কারপ্রাপ্ত হন। ১৯৯৩ সালে নাট্যমঞ্চে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে কলাকার পুরস্কারে সম্মানিত হন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর