শিরোনাম
বুধবার, ২ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

কেন চলচ্চিত্র ছাড়লেন তাঁরা...

কেন চলচ্চিত্র ছাড়লেন তাঁরা...

এক সময় রুপালি পর্দা দাপিয়ে বেড়িয়েছেন তাঁরা। নানা খেতাবেও ভূষিত হয়েছেন। পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় সম্মাননা। আজ তাঁরা চলচ্চিত্রে নেই।  এমন কয়েকজন অভিনেত্রীকে নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন - আলাউদ্দীন মাজিদশবনম

 

১৯৬১ সালে মুস্তাফিজের ‘হারানো সুর’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অভিনেত্রী হিসেবে ঢালিউডে অভিষেক ঘটে শবনমের। এরপর চান্দা, তালাশ, রাজধানীর বুকে, নাচের পুতুল, সন্ধিসহ অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেন। ১৯৮৮ সালে তিনি পাকিস্তানে গিয়ে স্থায়ী হন। ১৯৯৯ সালে পুনরায় বাংলাদেশে এসে কাজী হায়াতের ‘আম্মাজান’ ছবিতে অভিনয় করেন। এরপর তাঁকে আর বড় পর্দায় দেখা যায়নি। তাঁর কথায় মনের মতো চরিত্র পাননি বলে চলচ্চিত্রে অভিনয় ছেড়েছেন।

 

সুচন্দা

১৯৬৬ সালে সুভাষ দত্তের ‘কাগজের নৌকা’ ছবির মাধ্যমে অভিনেত্রী হিসেবে সুচন্দার বড় পর্দায় অভিষেক ঘটে। তুমুল জনপ্রিয়তা নিয়ে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত অভিনয় করে যান তিনি। একই সঙ্গে চলচ্চিত্র নির্মাণও করেন। এরপর মানসম্মত গল্পের অভাবে অভিনয় থেকে অবসর নেন বলে জানান কোহিনূর আক্তার সুচন্দা।

 

শাবানা

১৯৬৭ সালে এহতেশামের ‘চকোরী’ ছবিতে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পান শাবানা। তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় এবং ২৫টি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন। ১১ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন। ১৯৯৬ সালে আজিজুর রহমানের ‘ঘরে ঘরে যুদ্ধ’ ছবিটিতে ছিল তাঁর শেষ অভিনয়। এরপর সন্তান আর সংসারের টানে ১৯৯৯ সালে অভিনয় থেকে অবসর নিয়ে আমেরিকায় সন্তানদের কাছে চলে যান তিনি। 

 

ববিতা

১৯৬৮ সালে জহির রায়হানের ‘সংসার’ ছবির মাধ্যমে চিত্রজগতে অভিষেক ববিতার। এরপর ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রায় আড়াইশ ছবিতে অভিনয় করেন। এই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অভিনেত্রী ২০১৫ সালে সর্বশেষ অভিনয় করেন নার্গিস আক্তারের ‘পুত্র এখন পয়সাওয়ালা’ ছবিতে। তাঁর কথায় এরপর অনেক নির্মাতাই ছবির প্রস্তাব নিয়ে আসেন তাঁর কাছে। কিন্তু গল্প আর চরিত্র পছন্দ না হওয়ায় অভিনয় থেকে দূরে সরেন তিনি।

 

অলিভিয়া

অলিভিয়া প্রথম বড় পর্দায় নায়িকা হয়ে আসেন এস এম শফি পরিচালিত ‘ছন্দ হারিয়ে গেল’ ছবির মাধ্যমে। ১৯৭২ সালে ছবিটি মুক্তি পায়। এরপর জনপ্রিয়তা নিয়ে ‘দি রেইন’, মাসুদ রানা, যাদুর বাঁশি, বাহাদুর, পাগলা রাজাসহ অর্ধশতাধিকের বেশি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। ১৯৯৫ সালে মুক্তি পায় তাঁর সর্বশেষ অভিনীত চলচ্চিত্র ‘দুশমনি’। চলচ্চিত্রকার এস এম শফিকে ১৯৭২ সালে বিয়ে করেন অলিভিয়া এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ১৯৯৫ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান শফি। এরপর চলচ্চিত্র জগৎ ত্যাগ করেন অলিভিয়া। পরে বিয়ে করেন ফতুল্লার মুনলাইট টেক্সটাইল মিলের কর্ণধার হাসানকে। বর্তমানে বসবাস করছেন বনানীর ডিওএসএইচের বাড়িতে।

 

জয়শ্রী কবির

১৯৭৫ সালে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা আলমগীর কবিরের হাত ধরে বড় পর্দায় আসেন কলকাতার নায়িকা জয়শ্রী রায়। তাঁর প্রথম ছবি ‘সূর্যকন্যা’। এরপর সীমানা পেরিয়ে, রূপালী সৈকতে, পুরস্কারসহ হাতে গোনা কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেন এবং জনপ্রিয়তা পান। চিত্রপরিচালক আলমগীর কবিরকে বিয়ে করে এ দেশে থেকে যান। প্রায় এক যুগের মতো তিনি এ দেশের চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। আশির দশকের মধ্যভাগে আলমগীর কবিরের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর চরম হতাশায় তিনি কলকাতায় পাড়ি জমান ও অভিনয় ছাড়েন। আলমগীর কবির ১৯৮৯ সালের ২০ জানুয়ারি মারা গেলে একমাত্র সন্তান লেনিন সৌরভ কবিরকে নিয়ে জয়শ্রী চলে যান লন্ডনে। লন্ডনের সিটি কলেজে ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষাদান শুরু করেন তিনি।

 

অঞ্জু ঘোষ

১৯৮২ সালে এফ কবীর চৌধুরী পরিচালিত ‘সওদাগর’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে অঞ্জু ঘোষের। ১৯৮৯ সালে তাঁর অভিনীত ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ অবিশ্বাস্য রকমের ব্যবসা করে এবং সৃষ্টি করে নতুন রেকর্ড। তিনি ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ ছেড়ে কলকাতার চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে থাকেন। একই সঙ্গে যাত্রাপালাও করেন। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সাইদুর রহমান সাইদ বলেন, তাঁকে নিয়ে ১৯৯৫ সালে ‘নেশা’ শিরোনামে একটি চলচ্চিত্রের নির্মাণ শুরু করেন তিনি। কিন্তু বিভিন্ন নির্মাতা ও স্থানীয় মাস্তানদের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে অঞ্জুর ওপর। মাস্তানরা নানাভাবে হয়রানি শুরু করলে ১৯৯৬ সালে বাধ্য হয়ে সপরিবারে কলকাতা চলে যান অঞ্জু ঘোষ। ২০১৮ সালে ঢাকায় এসে তিনি সাইদুর রহমান সাইদ পরিচালিত ‘মধুর ক্যান্টিন’ ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হলেও এখনো ছবিটির কাজ শুরু হয়নি। বর্তমানে কলকাতায় কাটছে তাঁর জীবন।

 

শাবনাজ

প্রখ্যাত চিত্রপরিচালক এহতেশাম ১৯৯১ সালে ‘চাঁদনী’ ছবির মাধ্যমে শাবনাজকে বড় পর্দায় আনেন। প্রথম থেকে প্রায় সব ছবিতেই তাঁর নায়ক ছিলেন নাঈম। একসময় তাঁরা ভালোবেসে বিয়ে করেন এবং নব্বই দশকের শেষ ভাগে চলচ্চিত্র থেকে স্বেচ্ছায় বিদায় নিয়ে সংসার জীবন শুরু করেন শাবনাজ। নাঈম বলেন, ১৯৯৪ সালটা ছিল আমার জীবনের জন্য অনেক কষ্টের বছর। ওই বছর প্রথম প্রযোজনায় এলাম। ‘আগুন জ্বলে’ শিরোনামের একটি ছবি নির্মাণ করলাম। ছবিটি সফলতার মুখ দেখল না। চরম আর্থিক ক্ষতির শিকার হলাম। এরপরই প্রিয় বাবাকে হারালাম। এই দুটি ঘটনা, বিশেষ করে বাবাকে হারানোর কষ্ট আমাদের চলচ্চিত্রবিমুখ করে দেয়।

 

শাবনূর

১৯৯৩ সালে প্রখ্যাত চিত্রপরিচালক এহতেশাম নূপুর নামের এক কিশোরীকে বড় পর্দায় নিয়ে আসেন। তাঁকে নিয়ে নির্মাণ করেন ‘চাঁদনী রাতে’ ছবিটি। প্রায় দেড় শতাধিক ছবিতে অভিনয় এবং জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন তিনি। ২০১২ সালে গোপনে সহশিল্পী অনিককে বিয়ে করেন এবং ২০১৩ সালে মা হন। তাঁর অভিনীত সর্বশেষ ছবি ‘পাগল মানুষ’ মুক্তি পায় ২০১৮ সালে। ২০১৩ সাল থেকেই সংসার-সন্তানের টানে শাবনূর চলচ্চিত্র থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে যান। চলতি বছরের প্রথমদিকে দেশে ফিরেন তিনি। স্বামী অনিকের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ২০২০ সালে তাঁকে তালাক দিয়ে ফের অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান এবং আর অভিনয়ে না ফেরার কথা জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর