শুক্রবার, ১১ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

সেই চির-অনন্যা এখন...

সেই চির-অনন্যা এখন...

বিটিভির সোনালি যুগের অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা। নাটকের অভিনেত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় তকমাটি তাঁর ক্ষেত্রে ব্যবহার করলে মনে হয় ভুল হবে না। বাবা বিখ্যাত অভিনেতা-আবৃত্তিকার গোলাম মুস্তাফা। সে হিসেবে বলাই যায়, যোগ্য বাবার যোগ্য কন্যা তিনি। নন্দিত এই অভিনেত্রী সব মাধ্যমেই দ্যুতি ছড়িয়েছেন এবং এখনো ছড়িয়ে যাচ্ছেন। এই চির-অনন্যাকে নিয়ে আজকের আয়োজন সাজিয়েছেন- পান্থ আফজাল

 

তিনি অনন্যা, তিনি সুবর্ণা

সুবর্ণা মুস্তাফা চির-অনন্যা, একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। সোনালি সময় থেকে এ পর্যন্ত যত অভিনেত্রী রয়েছেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেত্রী তিনি। তাঁর নামটাই যেন একটি ব্র্যান্ড। বিনোদনের সব ক্ষেত্রেই রয়েছে তাঁর পদচারণা। তিনি একাধারে একজন নির্মাতা, আবৃত্তিশিল্পী, উপস্থাপক ও সংসদ সদস্য। ক্যারিয়ারের সুবর্ণ সময়ে লাক্স সাবানের মডেল হয়েছিলেন সুবর্ণা। অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৯ সালে সরকার তাঁকে একুশে পদকে ভূষিত করে। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও। অন্যদিকে বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ গোলাম মুস্তাফার যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে সুবর্ণাকে ‘গোলাম মুস্তাফা আবৃত্তি পদক’-এ ভূষিত করে।

 

অভিনয়ে এখন অনিয়মিত...

রুচিশীল অভিনয় আর মিষ্টি হাসিতে কয়েক প্রজন্মের ভালোবাসা অর্জন করা অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা। এ প্রজন্মের অনেক অভিনেত্রীও তাঁকে আদর্শ মানেন। তবে এ তারকা এখন অভিনয়ে অনিয়মিত। ইচ্ছা ও ভালো গল্প-নির্মাতা হলে মাঝে মাঝে অভিনয় করে থাকেন। তাঁকে সর্বশেষ ‘গন্ডি’ সিনেমায় দেখা গেছে। ইমদাদুল হক মিলনের লেখা উপন্যাস ‘সুরভী’ অবলম্বনে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘সুরভী’তে অভিনয়ও করেছিলেন তিনি। বর্তমানে সুবর্ণা মুস্তাফা বাংলাদেশ সরকারের একজন সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

 

সোশ্যাল মিডিয়ায় আছেন; সিনেমাও দেখেন

অভিনয় তেমন না করলেও সুবর্ণা মুস্তাফা তাঁর ভাবনা, চিন্তা প্রকাশ করতে ও বিভিন্ন প্রিয় মানুষকে শুভেচ্ছা জানাতে সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক ব্যবহার করেন। প্রিয় মানুষদের জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী অথবা আনন্দের সংবাদে নিজের অনুভূতি তিনি এ মাধ্যমেই জানান। এরই মাঝে প্রিয় মানুষ আফজাল হোসেনের জন্মদিনে তিনি শুভেচ্ছা জানান। আর ঢাকা থিয়েটারের ৫০ বছর পূর্তিতে জানান শুভ কামনা। একা বা সমবেতভাবে কোথাও বেড়াতে বা ঘুরতে গেলেও তিনি মাঝে মাঝে সেই মুুহূর্তগুলো ফেসবুকে পোস্ট করেন। বিভিন্ন ইস্যুতে তিনি সরবও থাকেন। এ বছর তিনি মুক্তি চয়নিকা চৌধুরীর ‘প্রহেলিকা’ দেখতে সিনেমা হলে গিয়েছিলেন।

৬৪ বসন্তের অপেক্ষায়...

আশির দশকে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় টিভি তারকা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন সুবর্ণা মুস্তাফা। পরবর্তীতে রুপালি পর্দায়ও অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন। টিভি নাটক ও সিনেমার পাশাপাশি দীর্ঘ ২২ বছর তিনি মঞ্চেও অভিনয় করেছেন। সেই কিংবদন্তি অভিনেত্রী তেষট্টি পেরিয়ে সামনের ডিসেম্বরের ২ তারিখে ৬৪ বসন্তে পা দেবেন।

 

সুবর্ণা-সৌদের ১৫ বছর!

বদরুল আনাম সৌদের সঙ্গে ১৫টি বসন্ত পার করেছেন সুবর্ণা মুস্তফা। আফসানা মিমির সোপ অপেরা ‘ডলস হাউস’ সহপরিচালনার সময় সুবর্ণা মুস্তাফার সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান সৌদ। সেই সূত্রে পারিবারিক আয়োজনে ২০০৮ সালের ৭ জুলাই বিয়ে করেন তারা। তাই এই দিনটি উপলক্ষে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাসও দেন সুবর্ণা।

 

অভিনয়ের সুবর্ণ নক্ষত্র

অভিনয়ের এক সুবর্ণ নক্ষত্র সুবর্ণা মুস্তাফা। তাঁর চেহারায় বাঙালি রমণীর শাশ্বত সৌন্দর্যের মৌন রূপ স্পষ্ট এবং স্মিত আবেদন ও রহস্যময় ঘরানার সৌন্দর্য তাঁর সামগ্রিক সৌন্দর্যকে প্রায় ক্ল্যাসিক রূপ দিয়েছে। অভিনয় ক্যারিয়ারে রয়েছে তাঁর কেবলই সফলতার গল্প। অভিনেত্রীদের মধ্যে একটি প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করেছেন সুবর্ণা। সুবর্ণা বলেন, ‘আমার সব কিছুই প্রায় একসঙ্গে হয়েছে। টেলিভিশনে নাটক, ঢাকা থিয়েটারে সেলিম আল-দীনের নাটক ‘জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন’-এ অভিনয় আর তার বছরখানেকের মধ্যে ঘুড্ডি চলচ্চিত্রে কাজ।’ তিনি অভিনয় প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমার অভিনয় করেই ভালো লাগে, মাধ্যম যেটাই হোক। তবে সবচেয়ে আনন্দ দিয়েছে টেলিভিশন। তিন থেকে চার ক্যামেরার সামনে কাজ করেছি। কাজ শিখেছি মঞ্চে; বুঝেছি চরিত্র কীভাবে নির্মাণ করতে হয়। একজন অভিনেতার আল্টিমেট লক্ষ্য সিনেমা। আমি শটকার্টে কোনো কাজ করতে পারি না। শতভাগ দিয়ে কাজ করি।’

 

মুনা নামে যিনি নন্দিত

৮০’র দশকে তিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় টিভি অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। বিশেষ করে আফজাল হোসেন এবং হুমায়ুন ফরীদির সঙ্গে তাঁর জুটি ব্যাপক দর্শক সমাদর লাভ করে। তিনি হুমায়ূন আহমেদের লেখা ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে মুনা চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক পরিচিতি পান। যেই মুনা ছিলেন বিখ্যাত চরিত্র বাকের ভাই (আসাদুজ্জামান নূর)-এর প্রেমিকা। এখনো সবাই তাঁর সেই ‘মুনা’ চরিত্রটি মনে রেখেছে। বাকের ভাইয়ের ফাঁসির পরে তার মৃতদেহ বহন করতে আসেনি কেউই; এসেছিল শুধু মুনা। তথাকথিত কোনো সম্পর্ক তাদের মাঝে না থাকলেও বাকের ভাইয়ের নিথর, প্রাণহীন দেহের পাশে দাঁড়িয়ে নীরবে কেঁদে যাচ্ছিল মুনা। সেখানে ছিল না আর কেউ। ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের শেষ পর্বে টেলিভিশন পর্দায় কাঁদছিলেন মুনারূপে সুবর্ণা আর তাঁর সঙ্গে সঙ্গে কাঁদছিল দেশের হাজারো দর্শক। শুধু নিজের অভিনয় দিয়ে মুনার বেদনায় তিনি দেশবাসীকে সমব্যথী করে তুলেছিলেন। এ ছাড়াও হুমায়ূন আহমেদের ‘আজ রবিবার’ ও ইমদাদুল হক মিলনের লেখা ‘বারো রকম মানুষ’-এ অভিনয় করেও তিনি খ্যাতি অর্জন করেন।

 

চলচ্চিত্রেও যিনি অনবদ্য

সুবর্ণা নিয়মিত গড়পড়তা চলচ্চিত্রে কখনো অভিনয় করেননি। জীবনঘনিষ্ঠ কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। মূলধারার কিছু ছবিতেও তাঁর উপস্থিতি লক্ষণীয়। তবে অনেকের মতে, টিভি পর্দায় তিনি যতটা ভরাট ও আকর্ষণীয়, চলচ্চিত্রের পর্দায় অতটা নন। সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকীর ‘ঘুড্ডি’ দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে আসার পর তিনি করেছেন নতুন বউ, নয়নের আলো, কমান্ডার, অপহরণ, লাল সবুজের পালা,  সুরুজ মিয়া, শঙ্খনীল কারাগার, পালাবি কোথায়, আঁখি ও তার বন্ধুরা, গহীন বালুচর ও গন্ডি। রুপালি পর্দায় সাফল্য পেলেও সুবর্ণা নিয়মিত হননি।

 

আফজাল-সুবর্ণা জুটি

আফজাল-সুবর্ণা জুটি ছিলেন সোনালি সময়ের নাটকের উত্তম-সুচিত্রা। এই জুটির রসায়ন নিয়ে দর্শকদের মধ্যে ছিল দারুণ উত্তেজনা। তাদের জুটির জনপ্রিয়তা এখনো মানুষকে নস্টালজিক করে তোলে।

সর্বশেষ খবর