বুধবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা
ক থো প ক থ ন

আমি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলাম

আমি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলাম

পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী অভিনেত্রী গুলশান আরা চম্পা। বাণিজ্যিক এবং ভিন্নধারাসহ কয়েক শ সিনেমায় অভিনয়ের পাশাপাশি নাটকেও কাজ করেছেন তিনি। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাস পদ্মা নদীর মাঝি অবলম্বনে তৈরি সিনেমায় মালা চরিত্রে অভিনয় করে পেয়েছিলেন প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন - সাইফ ইমন

 

আপনার ভক্তরা আপনাকে মিস করে অভিনয়ে...

এটা ঠিক যে, আমি কাজ কমিয়ে দিয়েছিলাম। এর সঙ্গে যুক্ত হয় করোনা সংকট। এরপরই আসলে অনেকটা পিছিয়ে গেছি। একটা সময় ছিল যখন আমি অনেকদিন ধরে নম্বর ওয়ান পজিশন ধরে রেখেছিলাম। সব শিল্পীর জীবনেই উত্থান-পতন আসে। ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের জীবনে উত্থান-পতনটা বেশি বেশি আসে। একটা সময় ইন্ডাস্ট্রিতে আমি ক্রাইসিসের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম। এক নম্বর অবস্থানে থেকেও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলাম। অনেক কিছুই আছে আমি বুঝতে পারছিলাম কিন্তু তা কখনো আচরণে প্রকাশ করিনি। এটা আমার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে যায় না। তাই পাশ কাটিয়ে গেছি। সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা যে, আমার মাথার ওপর অনেক বড় ছায়া আছে। আমার পরিবার অনেক স্ট্রং। এটা আমাকে চলচ্চিত্রের দুঃখ-কষ্ট ভুলে থাকতে সহযোগিতা করেছে। ইদানীং অনেক গল্প হচ্ছে যেখানে কোনো নায়ক-নায়িকা নেই। এখানে সবাই নায়ক সবাই নায়িকা। যেখানে গল্পটাই হচ্ছে নায়ক বা নায়িকা। আমাদের সময় গল্পের ক্রাইসিসের মধ্যেও পড়েছিলাম। ঘুরেফিরে একই প্রেমকাহিনি মানুষ পছন্দ করে না। আবার বয়সও একটা ফ্যাক্ট। জোয়ার-ভাটার মতো কাজ করে।

 

একজন সাহসী অভিনেত্রী হিসেবে প্রশংসিত ছিলেন সব মহলে, আপনার সিনসিয়ারিটি সবসময়ই প্রশংসিত...

সারা জীবন আমি সিনসিয়ারিটির সঙ্গে কাজ করেছি। কখনো কোনো প্রোডিওসারকে বা ডিরেক্টরকে বসিয়ে রাখিনি। সবসময় প্রার্থনা করতাম যেন সুস্থ থাকতে পারি। যেন আমার কারণে কখনো আমার প্রোডিওসারদের কোনো ক্ষতি না হয়। আমি প্রফেশনকে একদম প্রফেশনাল মুডেই নিয়েছি। আমি মন দিয়ে আত্ম দিয়ে অভিনয়কে ভালোবেসেছি। যখনই কোনো কাজ করেছি আমি তা আমার নিজের মনে করে করেছি।

 

এখন মেধাবী হওয়ার চেয়ে সৌন্দর্যসর্বস্ব নায়িকার সংখ্যা বেশি...

এখনকার নায়িকারা আমাদের চেয়ে ভালো বুঝে। ওরা অনেক বেশি আধুনিক। তবে অনেক ক্ষেত্রে আশপাশ ঠিকঠাক নাই মনে করি। একটি চলচ্চিত্রের সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত। অনেক রকম মানুষ জড়িত। এমন কিছু মানুষ থাকে যারা শিল্পীকে ভালো হতে দেয় না। এরা একজন শিল্পী স্টার হওয়ার আগেই তাকে স্টার বানিয়ে দেয়। অল্প বয়সে এমনিতেই সবাই ভেসে বেড়ায়। আর সুবুদ্ধি দেওয়ার লোকের অনেক অভাব। স্টারডম চলে এলে মনের মধ্যে অমনোযোগী হয়েই যায়। এখনকার সময়ের নায়িকারা অনেক গুণী। কিন্তু এই গুণগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে আশপাশের মানুষের কারণে।

 

কোনো অভিমান রয়েছে কি?

২০২২ সালে এসে আমার মনটা ভেঙেচুরে গেছে। বিশ্বসুন্দরী চলচ্চিত্রে কাজ করেছিলাম। এই চলচ্চিত্রে আমি স্বীকৃতি পেলাম না। কেন পেলাম না এটা আমি জানি। এরপর আমি ভাবলাম, এই যে আমি এত কষ্ট করলাম কী লাভ হলো। সবাই পরীক্ষা দিয়ে আশা করে ভালো রেজাল্টের। এটা একজন শিল্পীকে আরও ভালো কাজ করতে উৎসাহী করে। ভালো কাজ করে স্বীকৃতি না পেলে কষ্ট লাগবেই। পরীক্ষায় পাস করলেই যে আপনি পুরস্কৃত হবেন তা নয়, এই পৃথিবী অন্যরকম।

 

আপনার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের সেরা তিনজন নায়কের নাম জানতে চাই

নায়করাজ রাজ্জাক ভাই অবশ্যই। তাঁর অভিনয়শৈলী অনন্য। এরপর ফারুক ভাই। গ্রামীণ চলচ্চিত্র মানেই তিনি। আর জাফর ইকবাল ভাই স্টাইলিস আইকন হিসেবে সেরা। আরও অনেকেই আছেন অসাধারণ। শুধু সংখ্যা দিয়ে আসলে আলাদা করা যায় না।

 

আপনার রত্নগর্ভা মা সম্পর্কে জানতে চাই...

আমার মা ছিলেন অসাধারণ একজন মানুষ এবং সাংস্কৃতিকমনা। তাঁর স্মৃতি আমার খুব বেশি মনে নেই। আমি খুব ছোট ছিলাম। তিনি ছিলেন ডাক্তার। তাঁর আয়ের একটা অংশ তিনি আলাদা করে রাখতেন গরিব দুঃখীদের জন্য।

সর্বশেষ খবর