বুধবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

জনি ডেপ এখন...

জনি ডেপ এখন...

‘পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান’-এর জ্যাক স্প্যারো কিংবা ‘চার্লি অ্যান্ড দ্য চকলেট ফ্যাক্টরি’র উইলি ওয়াঙ্কা চরিত্র দুটি যে কোনো মুভি প্রেমীর মনে দাগ কাটতে বাধ্য। এর চরিত্রায়ণ করেছিলেন হলিউড কিংবদন্তি অভিনেতা জনি ডেপ। ৬০টি বসন্ত অতিক্রম করেও তিনি আজ অনবদ্য। বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছেন বহুবার। নানা কারণে সমালোচিতও হয়েছেন। তাঁকে নিয়ে লিখেছেন- সাইফ ইমন

 

মোদির বায়োপিক নিয়ে পরিচালনায়

২৬ বছর পর পরিচালনার কাজে ফিরছেন জনি ডেপ। ‘মোদি’র বায়োপিক পরিচালনা করবেন তিনি। জীবনীচিত্র তৈরি করছেন জনি ডেপ নিজেই। তবে আপনি যার কথা ভাবছেন তিনি সেই মোদি নন। ইতালীয় শিল্পী আমেদিও মোদিল্লিয়ানির জীবননির্ভর ছবি পর্দায় ফুটিয়ে তুলবেন এই হলিউড তারকা। বন্ধুমহলে ‘মোদি’ নামে পরিচিত ছিলেন মোদিল্লিয়ানি, সে থেকেই এমন নাম ছবির। ইতোমধ্যেই ছবির প্রি-প্রোডাকশনের কাজ অনেকদূর এগিয়েছে। জানা যাচ্ছে, আমেদিও মোদিল্লিয়ানির চরিত্রে থাকছেন রিকার্ডো স্ক্যামারসিয়ো। অন্যদিকে হলিউড লেজেন্ড আল পাচিনো এই ছবিতে থাকবেন শিল্প সংগ্রাহকের ভূমিকায়। আগামী বছরের শুরুতেই বুদাপেস্টে শুরু হবে ছবির শুটিং। জনি ডেপের সঙ্গে কাজ করতে মুখিয়ে রয়েছেন কিংবদন্তি শিল্পী আল পাচিনো। ১৯৯৭ সালে ‘দ্য ব্রেভ’ নামে একটি ছবি পরিচালনা করেছিলেন জনি ডেপ। তারপর প্রায় ২৬ বছর কেটেছে। এই দুই মহাতারকার রসায়ন দেখতে অপেক্ষা করে আছে বিশ্বজুড়ে অগণিত ভক্ত।

 

সম্প্রতি বিলিয়ে দিলেন ১০ লাখ ডলার

দানবীর হিসেবে জনি ডেপের সুনাম ছড়িয়েছে বহু আগে থেকেই। ক্যারিয়ারে কখনো টাকার পেছনে ছুটেননি এই কিংবদন্তি। বরং টাকাই তাঁকে খুঁজে নিয়েছে। তবে ঝামেলাও পিছু ছাড়েনি তাঁকে। তাঁর সাবেক স্ত্রী অ্যাম্বার হার্ডের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছেন এটা পুরনো খবর। এই দম্পতির মামলা-পাল্টা মামলা শেষ হয়েছে। এ নিয়ে বিশ্বজুড়েই ছিল আলোচনা-সমালোচনা। অভিযোগের নিষ্পত্তি বাবদ সাবেক স্ত্রীর কাছ থেকে ১০ লাখ পেয়েছেন জনি ডেপ। অবশ্য সেই অর্থ নিজের কাছে রাখেননি তিনি। গত বছর ভার্জিনিয়ার আদালতে ৫ কোটি ডলারের ক্ষতিপূরণের মামলায় জেতেন জনি ডেপ। পরবর্তীতে ১০ লাখ ডলারে তাঁরা মীমাংসায় পৌঁছেন। ওই রায়ের পর মেয়ে বিয়াঙ্কা বুটিকে নিয়ে স্পেনে চলে যান অ্যাম্বার হার্ড। সেখানে ঝামেলাহীন জীবন কাটানোই তাঁর লক্ষ্য। অ্যাম্বার হার্ডের কাছ থেকে নিষ্পত্তির অর্থ পেয়েছেন জনি ডেপ। যা তাঁর বীমা কোম্পানির মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়। ওই টাকা নিজের কাছে রাখেননি অভিনেতা, পাঁচটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানে সমান ভাগে ভাগ করে দিয়েছেন।

 

গানের ভুবনে

ছোটবেলায় নিজের অদ্ভুত আচরণ সম্পর্কে নানা সাক্ষাৎকারে বলেছেন জনি ডেপ। এর থেকে মুক্তি দিতেই বা পরিবর্তন আনতে তাঁর মা জনির ১২ বছর বয়সে গিটার উপহার দেন। এ থেকেই শুরু জনির সংগীত জীবন। নিজের কৈশোর সম্পর্কে জনি বলেন, আমার কৈশোর ছিল অনেকটা অস্পষ্ট। নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে গিটার বাজানোয় আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতাম। ১২ বছর বয়স থেকে জনি গ্যারেজ ব্যান্ডগুলোতে গিটার বাজাতেন। ১৬ বছর বয়সে রক মিউজিসিয়ান হওয়ার স্বপ্নে স্কুল ত্যাগ করে দ্য কিডস নামক ব্যান্ডে যোগ দেন তিনি। দুই সপ্তাহ পর আবার পড়াশোনা চালু করতে চাইলে প্রিন্সিপালের উৎসাহে গানের ভুবনে পুরোপুরি প্রবেশ করেন জনি। স্থানীয়ভাবে দ্য কিডস বেশ পরিচিতি অর্জন করেন। তাঁদের গানের রেকর্ডিংয়ের অফার আসে ঠিকই, কিন্তু রেকর্ডিং হওয়ার আগেই দলটি ভেঙে যায়। কিন্তু থামেনি জনি ডেপের কণ্ঠ। নিয়মিতই গান করেন তিনি। বিভিন্ন দেশে স্টেজ পারফর্ম করতেও দেখা যায় তাঁকে।

 

যেভাবে অভিনয়ে

জনি ডেপের প্রথম ছিলেন স্ত্রী লরি, ছিলেন জনি ডেপের ব্যান্ড মেম্বারও। লরি তার প্রাক্তন প্রেমিক নিকোলাস কেইজের সঙ্গে জনির পরিচয় করিয়ে দেন, যিনি জনিকে অভিনয়ে ক্যারিয়ার গড়ার পরামর্শ দেন। একজন হলিউড এজেন্টের সঙ্গে কেইজ জনির পরিচয় করিয়ে দেন। বেশ কিছু সিনেমায় এক্সট্রার অভিনয় করার পর হরর ফিল্ম নাইটমেয়ার অন এলম স্ট্রিট (১৯৮৪) দিয়ে বড় পর্দায় প্রধান চরিত্রে অভিষেক ঘটে জনি ডেপের। সেই থেকে বিখ্যাত এই অভিনেতার অভিনয় জীবনের সূচনা।

 

প্রেম বারবার এসেছিল জীবনে

প্রথম স্ত্রী লরি অ্যালিসনের পর অভিনেত্রী জেনিফার গ্রে এবং শারলিন ফেনের সঙ্গে প্রেম করেন জনি ডেপ। তাঁদের আংটি বদল হলেও শেষ পর্যন্ত তা বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়নি। অভিনেত্রী উইনোনা রাইডারের প্রেমে পড়েন। জনির ডান বাহুতে ‘উইনোনা ফরেভার’ ট্যাটু আঁকা আছে। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত জনি ডেপের সঙ্গে ইংরেজ সুপার মডেল কেট মসের প্রণয় ছিল বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। মসের সঙ্গে ব্রেকআপের পর ১৯৯৮ সালে দ্য নাইন্থ গেইটের সহশিল্পী ফ্রেঞ্চ অভিনেত্রী ভেনেসা পেরাডিসের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। তাঁদের দুটি সন্তান আছে- লিলি-রোজ মেলোডি ডেপ (১৯৯৯) এবং জন ‘জ্যাক’ ক্রিস্টোফার ডেপ তৃতীয় (জন্ম ২০০২)। ডেপ এবং পেরাডিসের বিচ্ছেদ ঘটে ২০১২ সালের জুন মাসে। ২০১১ সালে মডেল ও অভিনেত্রী অ্যাম্বার হার্ডের সঙ্গে সম্পর্কের পর ২০১৫ সালে বিয়ে করেন। ২০১৬ সালে শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যাচারের কারণ দেখিয়ে হার্ড বিচ্ছেদের আবেদন করেন। এই ঘটনায় অনেক কাদা ছোড়াছুড়ির পর ২০১৬ সালের ১৬ আগস্টে কোর্ট থেকে এই সিদ্ধান্ত দেওয়া হয় যে, হার্ড ৭ মিলিয়ন ডলার পাবেন আর জনির ওপর থেকে নিরোধক আদেশ তুলে নেওয়া হবে। পরবর্তীতে ঘটনা গড়ায় অনেকদূর। অবশেষে জয়ী হন জনি ডেপ। এতে ভক্তকুলের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। তবে জীবনে কোনো কিছুতেই থেমে যাননি তিনি। এগিয়ে চলছেন, স্বাক্ষর রাখছেন প্রতিভার প্রতিটি ক্ষেত্রে। তবে বিতর্কও পিছু ছাড়েনি তাঁকে। নানা সময়ে উদ্ভট সব কাণ্ড ঘটিয়ে শিরোনাম হয়েছেন।

 

জীবনের কিছু অজানা দিক

♦ জনি ডেপের বাল্যকাল কেটেছে ২০টি ভিন্ন শহরে।

♦ মাত্র ১২ বছর বয়সেই তিনি সিগারেট আর বিভিন্ন ড্রাগ সেবন করতে শুরু করেন।

♦ নিজের শরীরের বিভিন্ন অংশে কাটাকুটি শুরু করেন, যার কিছু চিহ্ন তাঁর শরীরে আজও রয়ে গেছে।

♦ ১৬ বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দিয়ে তিনি ‘দ্য কিডস’ ব্যান্ডে যোগ দেন।

♦ ১৯৮৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘এ নাইটমেয়ার অব এল্ম স্ট্রিটে’ তিনি প্রথমবারের মতো মৌলিক কোনো চরিত্রে অভিনয় করেন।

♦ ১৯৯৩ সালে ‘হোয়াট’স ইটিং গিলবার্ট গ্রেপ’-এর শুটিংয়ের সময় তিনি সহশিল্পী লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওকে একটি পচা ডিমের গন্ধ শুঁকার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। ডিক্যাপ্রিও সেটা করার পর তাঁকে তিনি ৫০০ ডলার উপহার দিয়েছিলেন।

♦ একসময় যৌথ মালিকানায় লস অ্যাঞ্জেলেসে ‘দ্য ভাইপার রুম’ নামে একটি নাইট ক্লাব খুলেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর