বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বলিউডের দুর্ধর্ষ যত ভিলেন

বলিউডের দুর্ধর্ষ যত ভিলেন

অমরেশ পুরি

বলা হয়ে থাকে একজন নায়কের প্রকৃত হিরোইজম বের করে আনে ভিলেন। নায়ককে একের পর বিপদে ফেলে, চ্যালেঞ্জ ছুড়ে সে নিজের নেতিবাচক দিক তুলে ধরে। জবাবে নায়ক তাকে পিটিয়ে ন্যায়ের ঝান্ডা উড়িয়ে দর্শকদের হাততালি আর শিস বাগিয়ে নেয়। বলিউডের এমন শক্তিমান কয়েকজন ভিলেনের গল্প তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

অমরেশ পুরি

চার শরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন। ‘মি. ইন্ডিয়া’ (১৯৮৭) ছবিতে তাঁর ভিলেন চরিত্রটির নাম ছিল মোগাম্বো। এতে তাঁর ‘মোগাম্বো খুশ হুয়া’ সংলাপটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। ‘করণ অর্জুন’, ‘ঘায়েল’, ‘বাদশাহ’, ‘কয়লা’, ‘গাদ্দার’, ‘লোহা’ ছবিগুলোতে তাঁর খলঅভিনয় উল্লেখযোগ্য। হলিউডের বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা স্টিভেন স্পিলবার্গ তাঁর ‘ইন্ডিয়ানা জোন্স অ্যান্ড দ্য টেম্পল অব ডুম’ সিনেমায় তাঁকে প্রধান ভিলেন চরিত্র ‘মোলা রাম’ হিসেবে অভিনয় করান। অমরেশ পুরির দুর্দান্ত অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়ে স্পিলবার্গ বলেছিলেন, ‘অমরেশ আমার পছন্দের ভিলেন- পৃথিবীর বুকে তাঁর চেয়ে সেরা কেউ ছিল না, হবেও না।’

 

আমজাদ খান

আমজাদ খান

‘শোলে’ (১৯৭৫) ছবিতে গাব্বার সিং চরিত্রে দুর্ধর্ষ অভিনয় করে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন আমজাদ খান। এই ছবিতে আমজাদ খানের বেশ কয়েকটি সংলাপ ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এর মধ্যে রয়েছে ‘কিতনে আদমি থে’, ‘ইয়ে হাত হামকো দেদে ঠাকুর’ প্রভৃতি। তাঁর উল্লেখযোগ্য অন্য ছবি হচ্ছে- ‘খুন পাসিনা’, ‘পারভারিস’, ‘মুকাদ্দার কা সিকান্দার’, ‘সুহাগ’, ‘কালিয়া’, ‘লাওয়ারিশ’, ‘বারসাত কি এক রাত’ ইত্যাদি।

 

ড্যানি ডেনজংপা

পদ্মশ্রী সম্মাননা পাওয়া শক্তিমান অভিনেতা ড্যানি ডেনজংপা। ‘অগ্নিপথ’ ছবির খলচরিত্র কাঞ্চা চিন্না তাঁর সেরা কাজ। এ ছাড়া ‘হাম’, ‘ক্রান্তিবীর’, ‘বিজয়পথ’, ‘বারসাত’, ‘ঘাতক’ তাঁর ত্রাস জাগানিয়া অভিনয়। ‘সেভেন ইয়ারস ইন তিব্বত’ ছবিতে তিনি হলিউড অভিনেতা ব্রাড পিটের সঙ্গে অভিনয় করেন। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

 

প্রেম চোপড়া

‘প্রেম নাম হ্যায় মেরা, প্রেম চোপড়া’ অথবা ‘নাঙ্গা নায়েঙ্গে ক্যায়া অর নিছোরেঙ্গে ক্যায়া’ সংলাপ যেন প্রেমের জন্যই তৈরি হয়েছে। তিসরি মাঞ্জিল, ও কৌন থি, দো রাস্তে, কাটি পাতাঙ্গ সিনেমাগুলো ভিলেনরূপে হাজির হয়ে তিনি নিজের সক্ষমতা জানান দেন। প্রেম চোপড়া বলিউডের একজন বিরল শ্রেণির খলনায়ক। এখনো তাঁকে বিভিন্ন সিনেমায় অভিনয় করতে দেখা যায়। প্রায় তিন শ ছবিতে অভিনয় করেন তিনি।

 

গুলশান গ্রোভার

‘ব্যাডম্যান’ বলিউড সিনেমাপ্রেমীদের জন্য গুলশান গ্রোভারকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য এই দুটো শব্দই যথেষ্ট। তাঁর কিছু উল্লেখযোগ্য খলচরিত্রের নাম ও ছবি হলো- কেসারিয়া ভিল্যায়াটি/‘ব্যাডম্যান’ (রাম লক্ষণ), নাটওয়ার শাহ (আঁখে), তাপসী গুঞ্জাল (বিশ্বাত্মা), ছাপ্পান ‘জিমি’ টিকল (স্যার), বানকে (রাজা বাবু), টাইসন (মহড়া), শক্তি (বিজয়পথ), কাবিরা (হেরা ফেরি সিরিজ), জামওয়াল (দাস) ইত্যাদি। গুলশান গ্রোভার হলিউডেও নিজের কৃতিত্বের সাক্ষর রেখেছেন। ২০০১ সালে বিবিসি অ্যাওয়ার্ড জিতেছিলেন তিনি। ভারতের অ্যাকশন সিনেমা সিরিজ ‘খিলাড়ি’র আটটি সিনেমার মধ্যে পাঁচটিতেই খলচরিত্রে অভিনয় করেছেন গুলশান। হলিউডের ‘নেফিলিম অ্যান্ড প্রিজনারস অব দ্য সান’ চলচ্চিত্রেও তিনি অভিনয় করেছেন। চার শরও বেশি সিনেমায় অভিনয় করেন গুলশান গ্রোভার।

 

কাদের খান

কাদের খান

অমিতাভ বচ্চন অভিনীত ‘কুলি’ ছবির দুর্ধর্ষ ভিলেন ছিলেন কাদের খান। খলনায়ক চরিত্রে তাঁর অভিনীত অন্য উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হলো- গঙ্গা যমুনা সরস্বতী, শারাবি, কুলি, দেশ প্রেমী, সুহাগ, মুকাদ্দার কি সিকান্দার, পারভারিস এবং অমর আকবর অ্যান্থনি, মি. নাটওয়ারলাল, খুন পাসি না, দো অর দো পাঁচ, সাত্তে পে সাত্তা, ইনকিলাব, নসিব, গ্রেফতার, হাম, অগ্নিপথ, হিম্মতওয়ালা, কুলি নাম্বার ওয়ান ম্যায় খিলাড়ি তু আনাড়ি, কানুন আপনা আপনা, খুন ভারি মাং, কার্মা, সালতানাত, সারফারোশ, জাস্টিস চৌধুরী, ধরম বীর। এসব ছবির চিত্রনাট্যও লিখেন তিনি। কাদের খান ৪৫০টিরও বেশি হিন্দি এবং উর্দু সিনেমায় অভিনয় করেন। একসময় খলনায়কের ভূমিকা ছেড়ে কমেডিয়ান হিসেবে অভিনয় শুরু করেন এবং এক্ষেত্রেও সফল হন। কাদের খানকে চলচ্চিত্রে আনেন কিংবদন্তি অভিনেতা দিলীপ কুমার।

 

শক্তি কাপুর

প্রায় তিন দশক ধরে শক্তিমান খলঅভিনেতা হিসেবে বলিউড মাতান শক্তি কাপুর। ১৯৮০ সালে জনপ্রিয় অভিনেতা-নির্মাতা ফিরোজ খান তাঁর ‘কোরবানি’ ছবিতে তাঁকে খলচরিত্রে ব্রেক দেন। এই ছবিতে দুর্ধর্ষ অভিনয় তাঁকে বলিউডে খলনায়কের পথ প্রশস্ত করে দেয়। এর আগে অবশ্য অভিনেতা-নির্মাতা সুনীল দত্ত তাঁর ‘রকি’ ছবিতে শক্তি কাপুরকে অভিনয়ের সুযোগ করে দেন ও তাঁর প্রকৃত নাম ‘সুনীল সিকান্দারলাল কাপুর’ বদলে শক্তি কাপুর রাখেন। চলচ্চিত্রটিতে তাঁর অভিনীত চরিত্র আরডি ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায়। আশির দশকে জিতেন্দ্র, শ্রীদেবী, জয়া প্রদা অভিনীত ‘তোফা’ ছবিতে একই সঙ্গে খলনায়ক ও কৌতুক চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করে তুমুল জনপ্রিয় হন। এই ছবিতে তাঁর একটি সংলাপ ‘আও ললিতা’ ব্যাপক জনপ্রিয় হয়। একসময় তিনি জনপ্রিয় কমেডিয়ান হিসেবেও অভিনয় করেন। প্রায় দুই দশক ধরে শতাধিক ছবিতে অদম্য জনপ্রিয়তা নিয়ে অভিনয় করে যান তিনি।

 

আরও যাঁরা...

উল্লিখিত খলনায়ক ছাড়াও বলিউডে আরও বেশ কয়েকজন দাপুটে অভিনেতা খলচরিত্রে অভিনয় করেছেন। প্রাণ, জীবন, অজিৎ, কুলভূষণ খারবান্দা, অনুপম খের, ওম পুরি, মুকেশ ঋষি, কিরণ কুমার, পরেশ রাওয়াল, রঞ্জিত, রাজা মুরাদ, গোগা কাপুর প্রমূখ।

সর্বশেষ খবর