রবিবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

আমার শিল্পকর্ম মানুষ জানুক আমাকে না চিনলেও হবে

চন্দন সিনহা

আলাউদ্দীন মাজিদ

আমার শিল্পকর্ম মানুষ জানুক আমাকে না চিনলেও হবে

‘গান তো আমার পেশা নয়, নেশা। আর এ নেশার জন্য জাতীয় স্বীকৃতি পাওয়া আমার জন্য অনেক বড় সম্মানের, গৌরবের।’ বললেন প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী চন্দন সিনহা। ২০২২ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো সেরা গায়ক হিসেবে সম্মাননা পেলেন। ১০ বছর আগে প্রথমবার এ সম্মান পান তিনি ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী’ ছবিতে ‘তুমি আছ বলে তারা জ্বলে নেভে’ গানটিতে কণ্ঠ দিয়ে। বীর চট্টগ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান চন্দন সিনহার গানে প্রতিষ্ঠা প্রখ্যাত চলচ্চিত্র ও নাট্যব্যক্তিত্ব প্রয়াত আবদুল্লাহ আল মামুনের হাত ধরে। এ নাট্যব্যক্তিত্ব তাঁর জীবদ্দশায় এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমি তখন জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক। একদিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা আমাকে এসে বললেন তাঁর এক ভাগ্নে আছে এবং সেই ভাগ্নেটি অসম্ভব গানপাগল। গানের টানে সে দেশ ছেড়ে সুদূর মুম্বাইও পাড়ি দিয়েছিল। এ ছেলেটির নাম চন্দন সিনহা।’ আবদুল্লাহ আল মামুন আরও বলেন, ‘আমি তখন (১৯৯৩ সাল) একটি নতুন ধারাবাহিক নাটক নির্মাণ করতে যাচ্ছিলাম। এর শিরোনাম ‘শীর্ষবিন্দু’ এবং এ নাটকে আমি প্রথমবারের মতো টাইটেল গান ব্যবহার করলাম এবং ‘পৃথিবীর এই খেলাঘরে দুই দিনের এই জলসায়’ গানটি গাইল চন্দন। গানটি খুবই জনপ্রিয় হলো। তারপর থেকে চন্দনকে আর পেছন ফেরে তাকাতে হয়নি।’ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘চন্দন সিনহাকে প্রতিষ্ঠার পথে আরও এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল আমার আরেকটি ড্রামা সিরিজ বাংলাদেশের প্রথম ডেইলি সোপ ‘জোয়ার ভাটা’র টাইটেল গানটি। সেটিও চন্দন গেয়েছিল।’ এদিকে পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী নচিকেতাও চন্দন সিনহার দরদভরা কণ্ঠের গানে মুগ্ধ। প্রথমবার চন্দন সিনহা জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার পর তিনি অভিভূত হয়ে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের একজন কণ্ঠশিল্পী আমার খুব প্রিয়। তাঁকে আমি আগে থেকেই চিনি। দীর্ঘ ১২ বছর পর গেয়ে তিনি জাতীয় সম্মান অর্জন করেছেন। এটি অবশ্যই গর্বের ব্যাপার।’ গত মঙ্গলবার ঘোষণা করা হয়েছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০২২। যেখানে ‘হৃদিতা’ চলচ্চিত্রে ‘ঠিকানাবিহীন তোমাকে’ গানের জন্য চন্দন সিনহা এবং ‘অপারেশন সুন্দরবন’ চলচ্চিত্রে ‘এ মন ভিজে যায়’ গানের জন্য বাপ্পা মজুমদার যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ গায়ক নির্বাচিত হয়েছেন। পুরস্কার প্রাপ্তির প্রতিক্রিয়ায় চন্দন সিনহা বলেন, ‘আমার জীবনে গানের সংখ্যা কম। আমি স্ক্রিনেও খুব কম আসি। তবে এ কম সংখ্যাই গুণী গীতিকবি, সুরকারের জন্য অন্য এক উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। আমার শিল্পকর্ম মানুষ জানুক। আমাকে না চিনলেও হবে। এভাবেই নিভৃতে নিজের মতো কাজ করে যেতে চাই।’ তিনি জাতীয় সম্মান পাওয়ার জন্য বাপ্পা মজুমদারকেও অভিনন্দন জানান। তিন দশকের বেশি সময় ধরে গানের জগতে আছেন শিল্পী চন্দন সিনহা। চট্টগ্রামে তাঁর পরিবারে ছিল সাংস্কৃতিক আবহ। আর সেই আবহ ও গানের প্রতি নিজের ঐকান্তিক আগ্রহ এবং প্রচেষ্টার ফলেই রাষ্ট্র চন্দন সিনহাকে আজ একজন জাতীয় কণ্ঠশিল্পীর মর্যাদা দিয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে দর্শক-শ্রোতার অফুরন্ত ভালোবাসা।

 

 

সর্বশেষ খবর