শনিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

ঈদে ছবি বেশি সিনেমা হল কম

ঈদে মুক্তির তালিকায় রয়েছে প্রায় এক ডজন ছবির নাম। বিপরীতে সিনেমা হল রয়েছে ৫০টির মতো

আলাউদ্দীন মাজিদ

ঈদে ছবি বেশি সিনেমা হল কম

এই ঈদে ছবি বেশি কিন্তু সিনেমা হল কম। এখন পর্যন্ত প্রযোজনা সংস্থার প্রস্তুতি অনুযায়ী শোনা যাচ্ছে প্রায় এক ডজনের মতো ছবি মুক্তি পেতে পারে আসন্ন ঈদে। কিন্তু সিনেমা হল খোলা আছে ৫০টির মতো। ফলে ব্যবসায়িক ক্ষতির আশঙ্কায় পড়েছেন চলচ্চিত্র নির্মাতারা। স্বল্পসংখ্যক সিনেমা হলে ছবি মুক্তি দিয়ে লগ্নিকৃত টাকার সামান্যভাগও ঘরে তুলে আনতে পারবে না-বলছেন নির্মাতারা। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির কর্মকর্তা  মিয়া আলাউদ্দীন বলেন, বর্তমানে দেশে চালু আছে মাত্র অর্ধশতাধিকের মতো সিনেমা হল। তাও এগুলো অনিয়মিতভাবে খোলে। কারণ পর্যাপ্ত সংখ্যক ছবি নেই। তাই আসন্ন ঈদে যদি এক ডজনের মতো ছবি মুক্তি পায় তাহলে সেগুলো কোথায় প্রদর্শন করা হবে। একটি ছবি কয়টি সিনেমা হল পাবে। স্বল্পসংখ্যক সিনেমা হল দিয়ে কী পরিমাণ অর্থ তুলে আনা যাবে। হয়তো ঈদে মৌসুমি সিনেমা হল হিসেবে আরও দেড় শ সিনেমা হল খুলতে পারে। তাতে সবমিলিয়ে ঈদের সিনেমা হলের সংখ্যা দুই শটির কিছু বেশি হতে পারে। এই অল্পসংখ্যক সিনেমা হলে ব্যবসায়িক সাফল্য পেতে বড়জোর চারটি ছবি মুক্তি পেতে পারে। এর বেশি ছবি হলে সব নির্মাতা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে। ঈদের ছবি হিসেবে মুক্তি পেতে হবে জনপ্রিয় বাণিজ্যিক ছবি। ছোটখাটো স্বল্প বাজেটের নাটক ঘরানার ছবি মুক্তি দিতে চাইলে সেগুলো সিনেমা হল মালিকরা নিতে চাইবে না, কারণ উৎসবের ঈদে এ ধরনের ছবি দর্শক দেখতে চায় না। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, সিনেমা হল বাড়াতে হলে পর্যাপ্ত সংখ্যক মানসম্মত ছবি সিনেমা হল মালিকদের দিতে হবে। নির্মাতারা এই চাহিদা দীর্ঘদিন ধরে পূরণ করতে পারছেন না বলেই সিনেমা হল মালিকরা লোকসান গুনে সিনেমা হল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। সরকার সিনেমা হল নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য হাজার কোটি টাকার ঋণ দিতে চাইছে। কিন্তু ছবি যদি না থাকে তাহলে এই ঋণ নিয়ে কীভাবে সিনেমা হল চালানো সম্ভব। ঋণের টাকা সুদসহ ফেরত দিতে না পারলে তো সিনেমা হল সরকার নিলামে তুলবে। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু বলেন, পর্যাপ্ত সিনেমা হল না থাকায় ছবি মুক্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশাল একটি সংকট তৈরি হয়েছে। সরকার সিনেমা হল উন্নয়নে হাজার কোটি টাকার ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু সিনেমা হল মালিকরা বলছেন, যথেষ্ট সংখ্যক ভালো ছবি না পেলে আমরা ঋণের টাকা নিয়ে তা শোধ করব কীভাবে। ঈদ উৎসবে যেসব ছবি দেখতে দর্শক পছন্দ করে তেমন ছবিই মুক্তি দেওয়া উচিত। তাহলে নির্মাতা ও সিনেমা হল মালিক উভয়েই আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে বাঁচবে। চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার চেয়ারম্যান আবদুল আজিজ বলেন, ঈদে আমার প্রতিষ্ঠান থেকে ছবি মুক্তি পাচ্ছে। তবে আমার ছবির ক্ষেত্রে সিনেমা হল সংকটকে আমি বড় করে দেখি না। কারণ মানের কারণে আগের মতোই আমার ছবি সিনেমা হল নেবে এবং দর্শক দেখবে। তবে প্রদর্শক এবং প্রযোজক উভয়ের আর্থিক মুনাফার স্বার্থে সিনেমা হল ও ছবির সংখ্যা বাড়ানো জরুরি। আসলে সিনেমা হল সংকটের কারণে পর্যাপ্ত সংখ্যক ছবি মুক্তি দেওয়া এখন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে আগেই সরকারের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন ছিল। আমার মতে চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচাতে হলে সরকার ও প্রযোজককে পরস্পরের সহযোগী হতে হবে। কারণ প্রযোজক বাঁচলে চলচ্চিত্র শিল্প বাঁচবে। এক্ষেত্রে সরকার যদি বছরে অনুদান দেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকা অপচয় না করে অনুদানের পরিবর্তে প্রযোজককে ঋণ বা ইনসেনটিভ দেয় তাহলে প্রকৃত অর্থে মানসম্মত ও পর্যাপ্ত পরিমাণে ছবি নির্মাণ হবে। চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি যে অনুদান দেওয়া হয় তা নিয়ে বরাবরই নয়-ছয় চলে আসছে। ফলে এতে চলচ্চিত্র শিল্পের ক্ষতি ছাড়া উন্নতি হচ্ছে না। তাই সরকার যদি প্রযোজকদের মূল্যায়ন করে যেমন উদাহরণ হিসেবে যদি বলি একজন প্রযোজক যদি ৮০ পার্সেন্ট টাকা ছবি নির্মাণে ইনভেস্ট করে এর বাকি ২০ পার্সেন্ট টাকা যদি সরকার ইনসেনটিভ হিসেবে দেয় তাহলে প্রযোজকরা উৎসাহিত হয়ে বেশি পরিমাণে ভালো ছবি নির্মাণে এগিয়ে আসবেন। ইনসেনটিভ হিসেবে সরকারকে ক্যাশ টাকা দেওয়ার প্রয়োজন নেই, চলচ্চিত্র নির্মাণে এফডিসির নানা সুযোগ-সুবিধা ফ্রি করে দিলেই হবে। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল বলেন, ঈদে অনেকেই ছবি মুক্তি দিতে চাইবে। কিন্তু যেনতেন ছবি তো আর সিনেমা হল মালিকরা নেবেন না। কারণ বছরের দুই ঈদ হচ্ছে সিনেমা হল ব্যবসার প্রধান মৌসুম। তাই ঈদে ছবি মুক্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে সিনেমা হল নয়, দর্শক পছন্দের মানসম্মত ছবিই মূল ফ্যাক্টর। এই ঈদে মুক্তির ঘোষণা দেওয়া সিনেমাগুলো হচ্ছে- রাজকুমার, ওমর, কাজল রেখা, দেয়ালের দেশ, লিপস্টিক, সোনার চর, ডেডবডি, আহারে জীবন, মোনা: জ্বীন-২, পটু, মায়া দ্য লাভ, এশা মার্ডার এবং মেঘনা কন্যা। এ ছাড়া আরও কয়েকটি ছবি ঈদে মুক্তি দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে নির্মাতারা বলে জানা গেছে। এদিকে দেশের সিনেপ্লক্স গুলোর টিকিটের মূল্য যেহেতু বেশি এবং এখানকার দর্শক যেহেতু সচ্ছল শ্রেনীর তাই সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ বরাবরই মানসম্মত বিগ বাজেটের ছবি প্রদর্শনে আগ্রহী। যেমন- স্টার সিনেপ্লেক্সের মিডিয়া ও বিপণন বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার মেজবাহ আহমেদ বলেন, আমরা আমাদের দর্শক উপযোগী ছবিই সবসময় প্রদর্শন করে থাকি। এবারের ঈদে একডজনের মত ছবি মুক্তির কথা শোনা গেলেও আমাদের দেখার বিষয় আমাদের সিনেপ্লেক্স এ চালানোর মতো কয়টি ছবি আসছে। ছবির নির্মাতারা যোগাযোগ করার পরই বুঝতে পারব আমরা কয়টি ছবি প্রদর্শন করতে পারব। রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী মধুমিতা সিনেমা হলটি ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে বন্ধ। এর কর্ণধার ও চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাবেক সভাপতি এবং প্রযোজক ইফতেখারউদ্দীন নওশাদ জানান, ঈদে ‘রাজকুমার’ ছবিটি দিয়ে তিনি তার সিনেমা হল খুলবেন। তিনিও বলেন, ঈদে মানসম্মত ছবি ছাড়া সিনেমা হল খুলে লাভ নেই। কারণ ঈদ হচ্ছে চলচ্চিত্র ব্যবসার প্রধান মৌসুম। তিনি বলেন, সারা বছর তেমনভাবে মানসম্মত ছবি মুক্তি পায় না, ঈদে ভালো ছবি যেহেতু মুক্তি পায়, তাই আমরা সিনেমা হল মালিক ঈদের ছবির জন্যই মুখিয়ে থাকি। কারণ ঈদে ভালো গল্প, বিগ বাজেট ও তারকাবহুল ছবি প্রদর্শন করে প্রদর্শক এবং প্রযোজক উভয়েই লাভবান হয়।

সর্বশেষ খবর