মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা
স্মৃতির পাতা থেকে

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জীবনের সেরা পুরস্কার...

আলাউদ্দীন মাজিদ

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জীবনের সেরা পুরস্কার...

এই রাত তোমার আমার, ঐ চাঁদ তোমার আমার, পথের ক্লান্তি ভুলে স্নেহ ভরা কোলে তব মাগো বলো কবে শীতল হবো, ও নদীরে, একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে, আয় খুকু আয়, ও আকাশ প্রদীপ জ্বেলো না, ও বাতাস আঁখি মেলো না, আমি দূর হতে তোমারেই দেখেছি, আর মুগ্ধ এ চোখে চেয়ে থেকেছি, মেঘ কালো, আঁধার কালো, আজ দুজনার দুটি পথ ওগো দুটি দিকে গেছে বেঁকে, আমায় প্রশ্ন করে নীল ধ্রুবতারা, কেন দূরে থাকো, শুধু আড়াল রাখো, ওলিরও কথা শুনে বকুল হাসে, আমিও পথের মতো হারিয়ে যাবো... হ্যাঁ একদিন তিনি পথের মতো সত্যিই হারিয়ে গেছেন, আর ফিরে আসেননি, আসবেনও না। তিনি আর কেউ নন। তিনি হলেন, এমন অজস্র শ্রোতামুগ্ধ গানের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী প্রয়াত হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। তার গান আজও নস্টালজিকে আক্রান্ত করে শ্রোতাদের। পৃথিবীজুড়ে তার কোটি কোটি ভক্ত রয়েছে। তার কর্মজীবনে অগণিত মজার গল্প আছে। যেগুলো রীতিমতো আবেগতাড়িত করে শ্রোতাদের। এমনই একটি ঘটনা হলো-‘তখন রাত প্রায় ১১টা। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় একটি ফাংশনে গান শেষ করে বাইরে এলেন। এমন সময় একজন অশীতিপর বৃদ্ধা হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের নাম ধরে ডাকলেন ও বাবা হেমন্ত। হেমন্ত ডাক শুনে দাঁড়িয়ে পড়লেন। এবার বৃদ্ধা  হেমন্তের সামনে এলেন। হাতে একটা কাগজের ঠোঙা। কাগজের ঠোঙাটা হেমন্তের হাতে দিয়ে বললেন, বাবা! এর মধ্যে চারটে নারকেল নাড়ু আছে তুমি খেও। আমি এই বয়সে শুধু তোমার গান শোনার জন্য এত রাতে এসেছি। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় কী বলবেন ভেবে পেলেন না! ঠোঙাটা মাথায় ঠেকালেন। তারপর হেমন্ত  বললেন, ‘মা! আমি জীবনে অনেক সম্মান টাকাকড়ি পেয়েছি। কিন্তু আজকে এই নারকেল নাড়ু আমার জীবনে শ্রেষ্ঠ আশীর্বাদ হয়ে রইল।’ এবার বৃদ্ধা বললেন বাবা একটা কথা বলব? হেমন্ত মুখোপাধ্যায় বললেন, বলুন না মা? বাবা! আজ তোমার গোটা পনের গান শুনলাম সবই ভালো লাগল কিন্তু আমার যে মন ভরল না। প্রিয় গানটা শুনতে পেলুম না। বড় আফসোস রয়ে গেল জীবনে। এবার হেমন্ত বললেন কোন গানটা? বৃদ্ধা বললেন, ঐ বিষ্ণুপ্রিয়া গো, কি একটা গান আছে না? উত্তম কুমার সিনেমায় গেয়েছিল গো? ততক্ষণে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের যা বোঝার বোঝা হয়ে গেছে। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় বৃদ্ধাকে গ্রিনরুমে নিয়ে গেলেন। স্টেজের কাছে একটা চেয়ারে বসতে বললেন। তখন স্টেজে একজন শিল্পী গান গাইতে শুরু করেছেন। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় স্টেজে উঠে তাকে আস্তে করে কী বললেন। শিল্পী স্টেজ থেকে নেমে গেলেন। হেমন্ত এবার স্টেজে এসে দর্শকদের বললেন, আপনাদের অনুমতি নিয়ে আমি আর একটি মাত্র গান গাইবো। তারপর ‘কুহক’ সিনেমায় নিজের সুর করা সেই গানটা গাইলেন, ‘বিষ্ণুপ্রিয়া গো তুমি আছো ঘুমঘোরে, আমি চলে যাই, আমি চলে যাই...’ আমি চলে যা...ই’ শব্দের সুরটা বেশ কিছুক্ষণ ধরে রেখে  যখন হেমন্ত গানটা শেষ করলেন তখন দর্শক যেন কোন মন্ত্রবলে স্তব্ধ হয়ে গেছে! সেই বৃদ্ধার দুই চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে লাগল! গান শেষ করে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় আস্তে আস্তে স্টেজ থেকে নেমে বৃদ্ধার কাছে গেলেন। গান শুনে বৃদ্ধা কেমন যেন হয়ে গেছেন। শুধু মাথায় হাতটা ছুঁয়ে কোনোক্রমে বললেন, দীর্ঘজীবী হও বাবা! হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ফুলশার্টের সাইড পকেটে হাত ঢুকিয়ে নারকেল নাড়ুর ঠোঙাটা একবার স্পর্শ করলেন। চশমার কাচ ঝাপসা হয়ে আসছে। বললেন, বড় পুরস্কারটা পাওয়া হয়ে গেছে যে।

সর্বশেষ খবর