শুক্রবার, ৭ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

ভাইরাল সংস্কৃতির কবলে শোবিজ অঙ্গন

ভাইরাল সংস্কৃতির কবলে শোবিজ অঙ্গন

ভাইরাল হওয়ার নেশায় বিদ্ধ দেশ, সমাজ ও জাতি। এ ভাইরাল হওয়ার সংস্কৃতির প্রভাবে কখনো রাজনৈতিক সংঘাত, ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট এবং সামাজিক অরাজকতা সৃষ্টি হয়। এখন যুগ হচ্ছে রাতারাতি স্টার বা ভাইরাল হতে চাওয়া। সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও এখন চলছে ভাইরাল দাপট। সংগীত, নাটক, সিনেমা- সবকিছুর ভাইরাল চান সবাই। এ পরিস্থিতির উত্তরণ নিয়ে কিছু বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে কথা বলেছেন- পান্থ আফজাল

 

মামুনুর রশীদ : দায়ী আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা

এখন তো টেকনোলজির সময় চলছে। আমি এ নিয়ে কী আর বলব। প্রযুক্তির উন্নয়ন তো আর থামছে না। এ বিষয়ে আমার একটাই কথা- সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক। এটা ছাড়া উত্তরণের আর তো কোনো উপায় দেখছি না। এটাই এখন আমাদের একমাত্র আশ্রয়। প্রযুক্তি এমনভাবে আমাদের আঁকড়ে ধরেছে যে, দিনকে রাত আর রাতকে দিন করছে। আর এখন তো শুরু হয়েছে ভাইরাল কালচার! এটার জন্য তো দায়ী আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। খুবই নাজুক পরিস্থিতিতে রয়েছে। সঠিক বিদ্যার অন্বেষণে নেই আমরা এখন। চিন্তারাজ্যে এখন আর কোনো শিক্ষা পৌঁছাচ্ছে না, কোনো ভাবনা তৈরি হচ্ছে না। আমরা বই পড়ি জ্ঞানের অন্বেষণে। সেই কাজটা কি আর হচ্ছে? প্রযুক্তির কারণে এখন সব হাতের মুঠোয়। তবে শুভ বুদ্ধির উদয় হচ্ছে না, যেটা এ মুহূর্তে খুবই প্রয়োজন।

 

আফসানা মিমি : ইতিবাচক বিষয়ে ভাইরাল হলে ঠিক আছে

আমার নিজের কোনো সোশ্যাল মিডিয়া নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করা পছন্দ করি না। আর নিজেও চাই না কখনো ভাইরাল হতে। সেই প্রস্তর যুগ থেকে আমাদের শুরু, এখন তো চতুর্থ শিল্প যুগ চলছে। ভাইরাল ব্যাপারটা তো যুগের হাওয়া, চাহিদা। এটাকে কীভাবে ঠেকানো যাবে? সেটা কি আদৌ সম্ভব। অন্যদিকে এ প্রযুক্তির সময়টাকে তো অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে প্রযুক্তি কতটা সঠিকভাবে বা কীভাবে ব্যবহার করতে হবে সেটাই মূল বিষয়। আমরা সবকিছুতেই ভাইরাল হতে চাই। আমি মনে করি ইতিবাচক বিষয়ে ভাইরাল হলে ঠিক আছে; কিন্তু উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বা অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ভাইরাল হওয়া খুবই খারাপ। সুন্দর চিন্তা, সুন্দর কাজ সামনে আনার জন্য ভাইরাল হলে তো অসুবিধা নেই!

 

ডলি জহুর : কিছু একটা খারাপ জোয়ার বইছে

আমি আসলে ভাইরাল কিছু বুঝি না। এখন তো মোবাইলে বিভিন্ন বিষয় দেখতে না চাইলেই চলে আসে। অসহ্য লাগে! কীসব জঘন্য রিল চলে আসে চোখের সামনে। সৃষ্টির প্রথম থেকেই তো মানুষ বিকৃতি জিনিস বেশি পছন্দ করে। আমাদের মন-মানসিকতা তো শয়তান ঘোরাইতে পারে। নতুন প্রজন্মকে নিয়ে কী বলব, এখন তো নামাজি লোক বা ইসলামী মনমানসিকতা লোকও এ মোবাইল আসক্তিতে পড়ে গেছে। আমি নেতিবাচক ভাইরাল বিষয় নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ করি। এখন তো ছেলেমেয়েরা বাবা-মাকেই ঠিকমতো টাইম দেয় না; সর্বদা মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকে। এডাল্ট মন হয়ে গেছে আমাদের। আমি মনে করি, আইন করে মোবাইলে কী দেখবে কী দেখবে না সেটা ঠিক করা উচিত। আর পজিটিভ তো অনেক বিষয় আছে। আমাদের বিশাল সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, আমাদের ইতিহাস-এগুলো নিয়ে ভাইরাল কম হয়। আমরা শুধু নেগেটিভ বিষয়কে ভাইরাল করি। যেমন মোবাইলে ফেসবুক বা সামাজিকমাধ্যম ব্যবহার করে আমরা দরকারি অনেক কিছুই করতে পারি। আসলে কোথাও যেন কিছু একটা খারাপ জোয়ার বইছে। সেই জোয়ারকে টেনে ধরতে হবে।

 

চঞ্চল চৌধুরী : আমরা ভুল রাস্তায় ছুটছি

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বর্তমানে যতটা না সামাজিক কর্মক্ষেত্রে, তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি ব্যক্তিগত বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে অশ্লীলতার বিরুদ্ধাচরণ করি। আপনার অসচেতনতা অথবা সমর্থনের ভিতর দিয়ে তথাকথিত যোগাযোগমাধ্যমে জন্ম নিচ্ছে বিতর্কিত কিছু ভাইরাল ব্যক্তি। আমরা সামগ্রিকভাবে ভুল রাস্তায় ছুটছি।

 

শমী কায়সার : অনেকে সবকিছুই করতে চায়

সংগীত, নাটক, সিনেমা তথা সমস্ত সাংস্কৃতিক অঙ্গনে কেমন যেন একটি অস্থিরতা বিরাজ করছে। এখন তো অনলাইন ভাইরালের যুগ। সবাই যেন কিছু একটা হতে চায়। অবশ্যই হবে তবে আমাদের সাংস্কৃতিতে বিশাল যে গ্যাপ সৃষ্টি হয়ে গেছে সেটা কিন্তু খুবই দুঃখজনক বিষয়। আমাদের দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি চর্চা, সাহিত্য বিষয়ে জানতে নিয়মিত বই পড়া অর্থাৎ সব মৌলিক জায়গা থেকে এ সময়ের তরুণ প্রজন্ম বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তাই সস্তা জিনিস মানুষ দেখে, শেয়ার দেয়। সেটি ভাইরাল হয়, ছড়িয়ে যায়। তবে আমি মনে করি দিন শেষে যেটা ভালো সেটিই টিকে থাকে। দেরি করে হলেও। আরেকটা বিষয়, এখন অনেকে সবকিছুই করতে চায়। যেমন সবাই বই লিখতে চায়। অবশ্যই লিখবে তবে বই লেখার জন্য যে মৌলিক স্কিল জানা দরকার সেটাকে ডেভেলপ করে। যদিও আমাদের এখানে এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে গিয়ে স্কিল ডেভেলপমেন্ট করতে পারে। আর সংস্কৃতি চর্চা করতে গেলে আর্থিক বিষয়ে ভাবতে হয়। সবকিছু তো সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়, আমাদেরও কিছু করতে হয়। এসব ভেবে আমরাও নতুন প্রজন্মকে নিয়ে কিছু একটা করার চেষ্টায় ‘ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’ গঠন করেছিলাম। অনেকগুলো কাউন্সিল আমরা করেছিলাম। মিডিয়া স্কিল ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করেছিলাম। কোন গান চালাবে বা কোন লেখাটা শেয়ার করা যাবে সেটা নিয়ে কাজ করার চেষ্টা ছিল। কিছুদিন চাঁদা তুলে, ফান্ড গঠন করে একটা চেষ্টা করেছিলাম কিছু করার। কিন্তু লং টাইম চালাতে আর পারিনি। কিন্তু ফাইন্যান্সিয়াল সাপোর্টের অভাবে সেটি আর বেশিদূর এগোয়নি।

সর্বশেষ খবর