শুক্রবার, ২১ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

সমাজের বাস্তব প্রতিচিত্র হানিফ সংকেতের নাটক ‘ব্যবহার বিভ্রাট’

শোবিজ প্রতিবেদক

সমাজের বাস্তব প্রতিচিত্র হানিফ সংকেতের নাটক ‘ব্যবহার বিভ্রাট’

হানিফ সংকেত মানেই ভিন্ন কিছু, ব্যতিক্রম কিছু এবং বিনোদনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ বার্তাপ্রদান। তার ‘ইত্যাদি’ নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। কিন্তু তার নাটকও যে দুর্দান্ত শিক্ষামূলক, সেটিও আমরা প্রতি ঈদেই খুঁজে পাই। এবারের ঈদুল আজহায় দেখা গেল তার নাটক ‘ব্যবহার বিভ্রাট’। প্রযুক্তি অবশ্যই ভালো, কিন্তু এর অপব্যবহার যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে সেটাই দেখানো হলো এ নাটকে। অবাক করার মতো বিষয় হলো- এ নাটকে সুপরিচিত কোনো তারকা যে কাজ করেছেন তা নয়। প্রধান চরিত্রে নতুন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে বেশ সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন হানিফ সংকেত। প্রায় সময় আমরা দেখে থাকি, নাটক থাকে তারকায় ভরপুর, কিন্তু কাহিনি বা নির্মাণ অন্তঃসারশূন্য। আর কিছু নাটক তো আছেই এমন যে, গান থাকবে কয়েকটা, সংলাপে জগাখিচুড়ি বাংলা থাকবে, ভাঁড়ামির প্রাণপণ চেষ্টা থাকবে এবং প্রচার অযোগ্য শব্দ থাকলে ‘টুঁট-টুঁট’ শব্দ থাকবে। এমন হুজুগের যুগেও হানিফ সংকেত ব্যতিক্রম। তারকা-বিবর্জিত নাটক হয়েও নাটকটি হয়েছে দুর্দান্ত মুন্সিয়ানায় ভরপুর। আসলে হানিফ সংকেতের অনুষ্ঠান বা নাটকে তারকা না থাকলেও শুধু তার কারণেই মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকে। চিরাচরিত ট্রেন্ড বাদ দিয়ে নতুনদের নিয়ে তিনি নাটক করার যে সাহস দেখালেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তার কৃতিত্ব এখানেই যে, তারকানির্ভর ও ভিউনির্ভর মিডিয়ার যুগেও তিনি দেখিয়েছেন নতুনদের দিয়েও ভালো কিছু করা সম্ভব। আসলে নতুনরা নতুন হলেও অভিনয় করেছেন দুর্দান্ত। কেন্দ্রীয় দুই চরিত্রের জামাল ও জমিলার খুবই সুখী সংসার। অভাব থাকলেও সুখের কোনো কমতি নেই। দুই বেলা ঠিকমতো খাবারও জোটে না তাদের। এভাবে দিন চললেও দিনভর জামালের জন্য প্রতীক্ষা করতেন জমিলা। দারোয়ানের চাকরি করে দিনশেষে জামাল ফিরে এলে সংসারে যেন আনন্দের বন্যা বয়ে যেত। অথচ এমন মধুময় সংসারে অশান্তির বিষ ঢেলে দেয় স্মার্টফোন। বোনাসের টাকা দিয়ে প্রিয়তমা স্ত্রীর জন্য স্মার্টফোন কিনে দেওয়ার কটা মাস পরেই ঘটে বিপত্তি। পাশের বাড়ির ভাবীর দেখাদেখি টিকটক ভিডিও তৈরি থেকে শুরু করে পরকীয়ার পথেও হাঁটেন জমিলা। প্রিয়তম স্বামীর প্রতি তার ভালোবাসায় ছেদ পড়ে, বদলে যায় আচরণ। ঘটে যায় ‘ব্যবহার বিভ্রাট’। একসময় পরকীয়া প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে যান তিনি। জামাল-জমিলার সংখ্যাটা বর্তমান সমাজে দিন দিন বেড়েই চলেছে। নীরব ঘাতকের মতোই প্রযুক্তির এমন অপব্যবহার সমাজে নোংরামির পাশাপাশি সৃষ্টি করছে চরম পারিবারিক অশান্তি ও নানা সামাজিক অপকর্ম।। কাজেই প্রযুক্তির ভালো দিকটা ব্যবহারের বিকল্প নেই। আমাদের সমাজের সবাইকে সচেতন হওয়ার এক অসাধারণ বার্তা দিলেন হানিফ সংকেত। সস্তা ভিউয়ের দুরবস্থার বাজারে ভিউয়ের দিকে না তাকিয়ে তিনি নির্মাণ করলেন বিনোদনধর্মী শিক্ষামূলক নাটক; যা ‘ভিউলোভী’ সমাজবিধ্বংসী পরিচালক-প্রযোজকদের জন্যও শিক্ষামূলক বটে!

 

সর্বশেষ খবর