বুধবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০১৩ ০০:০০ টা
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

৫৫৭ মামলার তদন্ত নেই

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় মানবতাবিরোধী অপরাধের ৫৫৭টি মামলা তদন্তের অপেক্ষায় রয়েছে মাসের পর মাস। প্রয়োজনীয় জনবল ও লজিস্টিক সাপোর্টের অভাবে এসব মামলার একটিরও তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি। সারা দেশ থেকে আসা এসব মামলায় আসামি রয়েছেন তিন হাজার ১৫৫ জন। এর বাইরে আরও ১২টি মামলার তদন্ত চললেও একই কারণে সেগুলো চলছে অত্যন্ত ঢিমেতালে। তদন্তের শম্বুক গতির জন্য অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন খোদ ট্রাইব্যুনালও। প্রায় তিন বছর হতে চললেও তদন্ত কার্যক্রম শুরু করতে না পারায় ৫৫৭ মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এদিকে তদন্তের উদ্যোগ না দেখে একাধিক মামলার বাদীপক্ষ মামলা প্রত্যাহার চাইছে বলে জানা গেছে। অবশ্য সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মেয়াদের শেষ বছরে এ বিষয়ে অনেকটা নিমরাজিতে রয়েছে সরকার। নতুন মামলার তদন্তে না গিয়ে সরকার চায়, চলমান মামলাগুলো নিষ্পত্তি হোক। এ ছাড়া সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের শেষ বছরে তদন্ত কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। তবে পর্যবেক্ষক মহল বলছে, ক্ষমতার পালাবদলেও যেন বিচার ও তদন্ত চলমান থাকে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে তদন্ত সংস্থাও যাত্রা শুরু করে। জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক আমির গোলাম আযম, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়। ওই সময় থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তদন্ত সংস্থায় আসা মামলার সংখ্যা বর্তমানে ৫৫৭টি। একাত্তরে মানবতাবিরোধী ঘটনায় ভুক্তভোগী ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের পক্ষ থেকে এসব মামলা করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, অগি্নসংযোগসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। একজন দায়িত্বশীল তদন্ত কর্মকর্তা জানান, ৫৫৭ মামলার মধ্যে একটিরও তদন্ত শুরু হয়নি। চলতি বছরে হবে কি না অনিশ্চিত। তদন্ত সংস্থার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, তদন্ত শুরু করতে না পারার জন্য জনবল, জনবল কাঠামো ও বিভিন্ন লজিস্টিক সাপোর্টের অভাবসহ নানা কারণ দায়ী। জানা গেছে, তদন্তের গতি বাড়াতে জনবল কাঠামো চেয়ে গত বছরের মাঝামাঝি সরকারের কাছে একটি আবেদন করা হয়। তদন্ত সংস্থার কেন্দ্রীয় কার্যালয়কে স্থায়ী রূপ দেওয়া, ১৯ জেলায় তদন্ত সংস্থার কার্যালয়, সাক্ষী সুরক্ষা ও বিভিন্ন সুপারিশসহ আবেদনে গত ২০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অনুমোদন দেয়। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় তা স্থগিত করে। এ বিষয়ে তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খান বলেন, একটি পূর্ণাঙ্গ জনবল কাঠামো চেয়ে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় কী কারণে স্থগিত করেছে জানি না। জ্যেষ্ঠ তদন্ত কর্মকর্তা এম সানাউল হক বলেন, সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দু-একটি মামলার রায়ের পর ট্রাইব্যুনালে চাপ কমলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মামলা পাঠানো হবে। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বলেন, সরকারের পরিবর্তনেও বিচার অব্যাহত রাখতে ট্রাইব্যুনাল, তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশনকে স্থায়ী ভিত্তি দিতে হবে। জানা গেছে, নিজামী, গোলাম আযম, সাঈদী ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ছাড়াও দুই ট্রাইব্যুনালে এখন আরও আটটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আবদুস সুবহান, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলী, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোবারক হোসেন ও পটুয়াখালীর রুস্তম আলী সিকদারসহ আরও ১২টি মামলার তদন্ত চলছে।

সর্বশেষ খবর