বুধবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০১৩ ০০:০০ টা

বামদের হরতালে পিপার স্প্রে, রঙিন পানি

বামদের হরতালে পিপার স্প্রে, রঙিন পানি
বাম দলগুলোর ডাকা গতকাল সারা দেশে অর্ধদিবস শান্তিপর্ণ হরতালে গাড়ি ভাঙচুর বা জ্বালাও-পোড়াও না হলেও রাজধানীতে হরতালকারীদের ওপর বিনা উসকানিতেই পুলিশের লাঠিচার্জ, পিপার স্প্রে নিক্ষেপ করা হয়েছে। এতে বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, সিপিবি সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ, বামমোর্চার কেন্দ্রীয় নেতা সাইফুল হক ও মোশরেফা মিশুসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। হরতালে দায়িত্ব পালন করতে পুলিশের পিপার স্প্রে থেকে রেহাই পাননি সংবাদকর্মীরাও। পুলিশি হামলার নিন্দা জানিয়ে হরতাল আহ্বানকারীরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো প্রক্রিয়া বন্ধের দাবিতে বামদের ডাকা এই হরতালে বিএনপি নৈতিক সমর্থন জানায়। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সারা দেশে শান্তিপর্ণভাবে হরতাল পালনের খবর পাওয়া গেছে। পুলিশি হামলার প্রতিবাদে আজ বিকাল চারটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। পল্টন মুক্তিভবনে সংবাদ সম্মেলনে বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান ২৮ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন কৃষক ও ক্ষেতমজুর সংগঠনকে নিয়ে সব উপজেলায় বিক্ষোভ এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি, ৪ ফেব্রুয়ারি প্রেসক্লাবে সমাবেশ শেষে সংসদ অভিমুখে মিছিল ও স্পিকারের কাছে স্মারকলিপি পেশ করা হবে বলে কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সিপিবি ও বাসদ উত্থাপিত ১৫ দফা প্রতিষ্ঠা ও 'জোট-মহাজোটের বাইরে বাম-গণতান্ত্রিক বিকল্প রাজনৈতিক বলয়' গড়ার প্রয়াসকে জোরদার করার আওয়াজ নিয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় সিপিবি ও বাসদের জাতীয় মহাসমাবেশ ঘোষণা করা হয়। গতকাল ভোর ৬টায় রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকায় খণ্ড খণ্ড মিছিল শুরু করে বাম দলগুলো। গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা, সিপিবি ও বাসদের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে পুরানা পল্টন মোড় থেকে জিপিও হয়ে প্রেসক্লাব এলাকা প্রদক্ষিণ করে। সকাল সাড়ে ৬টায় মতিঝিল এলাকা থেকে বাম মোর্চার একটি মিছিল পুরানা পল্টন মোড়ে এলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা শুরু হলে পুলিশ 'পিপার স্প্রে' ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর সিপিবি ও বাসদের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে পল্টন এলাকায় এলে পুলিশ আবারও পিপার স্প্রে ও জলকামান ব্যবহার করে সরিয়ে দেয়। পরে নেতা-কর্মীরা পল্টন মোড়ে জড়ো হতে থাকলে বিনা উসকানিতেই পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। এতে বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, সিপিবি সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ, বামমোর্চার কেন্দ্রীয় নেতা সাইফুল হক ও মোশরেফা মিশুসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। দুই দফায় সংবাদকর্মীদের লক্ষ্য করে মরিচগুঁড়া স্প্রে করার অভিযোগ করেছে গণমাধ্যমকর্মীরা। সকাল ৯টায় পল্টন মোড়ে বামমোর্চার সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকির সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় দেশ টিভির সিনিয়র রিপোর্টার জহুরুল কবির, এটিএন বাংলার আলমগীর হোসেন, দিগন্ত টেলিভিশনের এমএম বাদশা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল আরটিএনএনের আরেফিন শাকিল, বাংলানিউজের সাজেদা সুইটি, ফটোগ্রাফার জাহিদসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে লক্ষ্য করে পিপার স্প্রে নিক্ষেপ করা হয়। প্রথম দফা পল্টন মোড়ে, পরে মক্তিভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। শাহবাগ এলাকায় পুলিশের লাঠিচার্জে ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়। সকালে মিরপুরেও মিছিল করেছে বাম দলগুলো। এছাড়া পল্লবী, মিরপুর-১০, মোহাম্মদপুর, জিগাতলা, লালবাগ, আজিমপুর, সূত্রাপুর, যাত্রাবাড়ী, শান্তিনগর, তেজগাঁও, রামপুরা, বাড্ডাসহ বিভিন্ন এলাকায় খণ্ড খণ্ড মিছিল করতে দেখা গেছে। ভোর থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাজধানী থেকে কোনো দূরপাল্লার যানবাহন ছেড়ে যায়নি। রাজধানীতে সকাল ১০টা থেকে বাসচলাচল করতে দেখা গেছে। তবে ট্রেন চলেছে স্বাভাবিকভাবেই। হরতালের শুরু থেকেই বিভিন্ন মোড়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ দেখা গেছে। দুপুর ১২টায় পুরানা পল্টন মুক্তিভবনে সংবাদ সম্মেলনে অর্ধদিবস হরতাল সফলভাবে পালিত হয়েছে দাবি করেন সিপিবি-বাসদ নেতারা। এ সময় পিপার স্প্রে 'বেআইনি'ভাবে ব্যবহার করায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের পদত্যাগ দাবি করেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। পুলিশ বিনা উসকানিতে আমাদের গণতান্ত্রিক এ কর্মসূচিতে মরিচের গুঁড়া, জলকামান, টিয়ারশেল, তরল গ্যাস ব্যবহার করে। বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে পুলিশের ন্যক্কারজনক হামলা সরকারের গণবিরোধী চরিত্র উন্মোচিত করেছে। পিপার স্প্রে করে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস সৃষ্টি করে গণবিদ্বেষ ঠেকানো যাবে না।

সর্বশেষ খবর