শুক্রবার, ১৭ মে, ২০১৩ ০০:০০ টা

নিষিদ্ধ রাজপথ

নিষিদ্ধ রাজপথ
রাজধানীর মৎস্য ভবনের সামনে গতকালের পূর্ব নির্ধারিত মহাসমাবেশ করতে পারেনি বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন। সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার দুই দিন পরই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ নিজেই চিঠি দিয়ে তা বাতিল করে। একইভাবে পুলিশ অনুমতি বাতিল করেছে বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটের সামনে সুনি্ন ঐক্য ফোরামের আজকের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি। 'উদ্ভূত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি'র কারণ উল্লেখ করে সভা-সমাবেশ করার আগাম অনুমতি একে একে বাতিল করছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। মতিঝিল, পল্টন, জাতীয় প্রেসক্লাবসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রাজপথে কোনো ধরনের কর্মসূচির নতুন অনুমতিও দেওয়া হচ্ছে না। রাজনৈতিক দলগুলো আবেদন করেও অনুমতি পাচ্ছে না। এ কারণে রাজধানীর কোথাও সভা-সমাবেশ করতে পারছে না বিএনপিসহ বিরোধী দল। রাজপথে সভা-সমাবেশের অনুমতি না দেওয়াকে 'রাজপথে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা' বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ভিন্ন মত প্রকাশ বন্ধ করতেই সভা-সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ৫ মে মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচির পর সভা-সমাবেশের অনুমতি প্রদানে কঠোর হয়েছে পুলিশ প্রশাসন। নিরাপত্তাজনিত কারণে সভা-সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। পুলিশের এ অবস্থান কতদিন চলবে, তা সংশ্লিষ্ট কেউ বলতে পারছেন না। এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যতদিন পর্যন্ত নিরাপত্তার বিষয়টি পুলিশ নিশ্চিত হতে না পারবে, ততদিন এ অবস্থা চলবে। তা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় সভা-সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয় না বা অনুমতি বাতিল করা হয়। বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা থাকলে সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করতে পারে পুলিশ। সমাবেশের অনুমতি দেওয়া বা বাতিল করা ঠিক নয়। সভা-সমাবেশ করা মানুষের অধিকার। এ অধিকার ক্ষুণ্ন করা হলে যে কেউ আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন। তবে সরকারের এটি করা ঠিক নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, সভা-সমাবেশ মানুষের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার। কোনো গণতান্ত্রিক সরকার যদি সাময়িকভাবেও এটি বন্ধ করতে চায় বা করে, সেটি মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ। সামরিক সরকার বা যারা জোর করে ক্ষমতা দখল করে, তারাই এ কাজটি করে থাকে। কোনো গণতান্ত্রিক সরকারের পক্ষে এটা শোভা পায় না। তিনি বলেন, শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের অবস্থানে অভিযান চালানোর পর সরকারের মধ্যে একটি আত্দবিশ্বাস কাজ করছে। দমন, পীড়ন, নির্যাতন ও অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভিন্নমত প্রকাশের সব জায়গা বন্ধ করতে চাচ্ছে। সরকারের সমালোচনা, নিন্দা, সরকারবিরোধী কণ্ঠরোধ করতেই সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এক্ষেত্রে হয়তো সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু সংগঠনকেও অনুমতি দেওয়া হবে না। তারা বোঝানোর চেষ্টা করবে, এই আইন সবার জন্য প্রযোজ্য। সভা-সমাবেশ করতে পারছে না বিএনপি জোট অনুমতি না দেওয়ায় রাজধানীতে সভা-সমাবেশ করতে পারছে না বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। হেফাজতের কর্মসূচির পর রাজপথে কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি দলটি। গত সোম ও বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ১৮ দলের ঘোষিত সমাবেশ করতে পুলিশ অনুমতি দেয়নি। এ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নয়াপল্টনে সমাবেশের জন্য আমরা যথানিয়মে পুলিশের কাছে দুই দফা চিঠি দেওয়ার পরও অনুমতি দেয়নি। কেন দেয়নি জানতে চাইলে পুলিশ প্রশাসন কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। রাজধানীতে এমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি যে প্রধান বিরোধী জোটকে সমাবেশ করতে দেওয়া যাবে না। আর ঢাকায় তো কোনো জরুরি অবস্থাও জারি হয়নি। তিনি প্রশ্ন করেন, তাহলে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ কেন। জানা গেছে, সব আয়োজন সম্পন্ন করার পর গতকালের পূর্ব নির্ধারিত মহাসমাবেশ করতে পারেনি বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন। প্রায় দুই মাস আগে অভিযুক্ত নাস্তিক ব্লগার, হেফাজতি এবং জামায়াতিদের বিচারসহ ১১ দফা আদায়ের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। প্রথমে রাজধানীর শাপলা চত্বরে সমাবেশ করার অনুমতি পায় সংগঠনটি। পরবর্তীতে ৫ মে হেফাজতের সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা দেখা দেওয়ায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনের রাস্তায় মহাসমাবেশ করার অনুমতি পায়। এ লক্ষ্যে সারা দেশে সমাবেশের মাধ্যমে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করার একদিন আগে গত বুধবার রাত ৯টার দিকে চিঠি দিয়ে তাদের অনুমতি বাতিলের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। জানতে চাইলে সংগঠনের মহাসচিব এম এ আউয়াল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ১৩ মে অনুমতি দিয়ে ১৫ মে তা বাতিল করে পুলিশ। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়েছি। আগামীতে যে কোনো মূল্যে মহাসমাবেশ করা হবে। এর আগে গত বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা জড়ো হলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এমনকি সাংবাদিকদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি থাকলেও এসব সংগঠনকে সমাবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এদিন বেলা ১১টার দিকে জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশন নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে গার্মেন্ট শ্রমিকরা প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হন। পুলিশ তাদের সরে যেতে বলে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশন হলমার্ক গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো চালু করে হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারীকে রক্ষার দাবিতে প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশের আয়োজন করে। এতেও পুলিশ বাধা দেয়। ফেডারেশনের সভাপতি বাহারানে সুলতান অভিযোগ করেন, 'পুলিশ সমাবেশ করতে দেয়নি।' প্রায় কাছাকাছি সময়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশ ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশ সমাবেশ আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। পুলিশ সাংবাদিকদের সমাবেশ করতে দেয়নি। পরে সমাবেশটি প্রেসক্লাবের দেওয়ালের ভেতরে অনুষ্ঠিত হয়।

সর্বশেষ খবর