সংসদে দেওয়া খুন গুমের তথ্য প্রত্যাহার চেয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে দেওয়া হত্যা ও গুম সংক্রান্ত তথ্য প্রত্যাহার করতে চেয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর। কিন্তু সংসদ সচিবালয়ের পক্ষ থেকে এটি অসাংবিধানিক বলে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এ নিয়ে মন্ত্রণালয় ও সংসদ সচিবালয়ের মধ্যে চলছে টানাপড়েন। আর বিশেষজ্ঞরা একে সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি বলে মনে করছেন। সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারিতে ১৬তম অধিবেশনে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক লিখিত প্রশ্নে জানতে চান ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে গুম, ডাকাতি, খুন, দাঙ্গা, ধর্ষণ, অপহরণসহ কতগুলো অপরাধ সংঘটিত হয়েছে? এ প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে গুম, হত্যা ও ধর্ষণের একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ৬৪ জেলায় মোট ৯৮ হাজার ১৮৪টি অপরাধমূলক ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে দস্যুতার মামলা চার হাজার ১৬২, এসিড নিক্ষেপ ৩৩৯, নারী নির্যাতন ৫০ হাজার ৬৬৯, গবাদিপশু চুরি তিন হাজার ২৪৩, ডাকাতি দুই হাজার ৫০৪, খুন ১৫ হাজার ৩০৪, দাঙ্গা ৪১৫, ধর্ষণ ১২ হাজার ৭৫০, শিশু নির্যাতন পাঁচ হাজার ৬৩৯ এবং অপহরণ/গুমের মামলা হয়েছে তিন হাজার ১৫৯টি। এ তথ্যের পর সারা দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ কারণে এ তথ্যটি প্রত্যাহার করতে চান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সূত্র জানায়, সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী ভুল কিংবা অসঙ্গতি থাকলে কার্যবিবরণীতে অন্তর্ভুক্ত প্রশ্নোত্তর সংশোধনের সুযোগ থাকলেও প্রত্যাহারের বিধান নেই। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া উত্তরটি প্রত্যাহার চেয়ে সংসদ সচিবালয়কে চিঠি দেওয়া হয়। তৎকালীন স্পিকার আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেটের কাছে নথিটি উত্থাপিত হলে প্রত্যাহারে অনাপত্তি জানান তিনি। এরপর প্রত্যাহারের সুযোগ নেই জানিয়ে মন্ত্রণালয়কে ৪ মার্চ চিঠি দিয়েছে সংসদ। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় খুন ও গুম সংক্রান্ত তথ্য প্রত্যাহারের জন্য নতুন করে চিঠি দিয়েছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে সংসদের প্রশ্নোত্তর শাখা বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে। জানা গেছে, ভারতের লোকসভায় সাবেক একজন অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার চেয়ে স্পিকারকে আবেদন জানালে এ নিয়ে সংসদে বিতর্ক হয়েছিল। ওই বিতর্কের পরও বক্তব্য প্রত্যাহার না করার সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন স্পিকার। একপর্যায়ে অর্থমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হয়। ব্রিটিশ পার্লামেন্টেও এ ধরনের ঘটনার নজির আছে। এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান বলেন, সংসদীয় কার্যবিবরণীতে অন্তর্ভুক্ত বিষয় প্রত্যাহার হলে একটি বাজে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে। এটি সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি। বাংলাদেশের রাজনীতি এবং সংসদের জন্য তা শুভ হবে না। তাই স্পিকার অবশ্যই কার্যপ্রণালি বিধি অনুসরণ করে সিদ্ধান্ত নেবেন, জাতি এমনটাই প্রত্যাশা করে বলে মন্তব্য করেন জনাব রেহমান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদের চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সংসদে উত্থাপিত তথ্য প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ নেই। তবে তা সংশোধনের সুযোগ আছে। কেউ যদি তথ্য প্রত্যাহার করতে চান তা হবে অসাংবিধানিক।