রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৩ ০০:০০ টা

প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে পরাজয়ের কারণ

প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে পরাজয়ের কারণ

সরকারের ৫ বছর শেষ হওয়ার আগেই ভয়াবহ সাংগঠনিক বিপর্যয়গুলো চিহ্নিত করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। পাঁচ সিটিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থীদের পরাজয়ের কারণগুলো এখন তার টেবিলে। দলের একাধিক নেতা এবং বিভিন্ন সংস্থা নির্বাচনে সরকারি দলের ফল বিপর্যয়ের কারণগুলো চিহ্নিত করে দলীয় প্রধানের হাতে তুলে দিয়েছেন। বিভিন্ন সংস্থা তাদের রিপোর্টে সিটি করপোরেশনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেতিবাচক ফলাফলের আশঙ্কার কথা তুলে ধরেছে। দলের একাধিক রাজনৈতিক নেতাও খোলামেলাভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বর্তমান বাস্তবতা তুলে ধরেছেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে পরাজয়কে তখন মহিউদ্দিন চৌধুরীর ব্যক্তিগত ব্যর্থতা ও দলের সঙ্গে দূরত্বের কারণ হিসেবেই তুলে ধরা হয়েছিল। এরপর কুমিল্লা সিটি করপোরেশনেও হারার কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল দলীয় গ্রুপিংয়ের কথা। হবিগঞ্জ উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের আসনে বিএনপি প্রার্থীর জয়ের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়নি। পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে খারাপ করাকেও গুরুত্ব দেয়নি দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

সূত্র মতে, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক বিপর্যয় প্রথম ধরা পড়ে মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর রায়ের পর ১৯ জেলার ৩৯টি এলাকায় জামায়াতের ব্যাপক তাণ্ডবের পর। আওয়ামী লীগ এসব এলাকায় ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এমনকি পুলিশ ও আইন প্রয়োগকারীদের সহায়তা নিয়েও পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। এরপর হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচির সময় আওয়ামী লীগকে অসহায় মনে হয়েছে। সর্বশেষ চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরাজয়ের পর স্পষ্ট হয়ে উঠে দলের সাংগঠনিক বিপর্যয়। গাজীপুরের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে আরও স্পষ্ট হয় জাতীয় ইস্যুগুলোর কারণেই ৫ সিটির নির্বাচনে হার হয়েছে আওয়ামী লীগের। গাজীপুরের পরাজয়ে দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে সরকার ও দলের দুর্বলতাগুলো ইতোমধ্যে তুলে ধরা হয়েছে। জানানো হয়েছে দলের দুর্বল প্রেসিডিয়াম, সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদাধিকারীদের গত ৪ বছরের ব্যর্থতার কথাও। সরকারের সাফল্যগুলো তুলে ধরতে পারেনি সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে নিয়োজিত নেতারা। সারা দেশে থানা এবং জেলা পর্যায়ে সাংগঠনিক কোনো কর্মসূচি ছিল না। দলকে পথে বসিয়ে বিত্ত বৈভব বানানো নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদকসহ দলীয় নেতারা। কেউ কেউ বাড়ি করেছেন লন্ডনে আর কেউ ব্যস্ত ছিলেন আধ্যাত্দিক নগরীর জায়গা দখল নিয়ে। একজন জমি কিনেছেন ২০০ বিঘা। অন্যদিকে, মন্ত্রীরা দলের দিকে নজরই দেননি। পার্টি অফিসে যাননি তাদের কেউই। কর্মীরা দেখা পাননি মন্ত্রীদের ও দলের বিভিন্ন পর্যায়ের কেন্দ্রীয় নেতাদের। দল ও সরকার দুটিই দুর্বল হওয়ার কারণে সাংগঠনিকভাবে ভয়াবহ খেসারত দিতে হয়েছে আওয়ামী লীগকে।

গাজীপুরের নির্বাচনে পরাজয়ের পর সাংগঠনিক বিপর্যয়ের এসব চিত্র বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। কর্মীরা মনে করেন, এখনই সতর্ক না হলে ২০০১ সালের চেয়েও ভয়াবহ খেসারত দিতে হবে দলকে। কর্মীদের এ আশঙ্কার কথা হয়তো আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাও উপলব্ধি করতে পেরেছেন। দলের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রমতে, শেখ হাসিনার এ উপলব্ধির কারণেই অতিসত্বর দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানেও পরিবর্তন আসতে পারে।

 

 

সর্বশেষ খবর