সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০১৩ ০০:০০ টা

প্রকাশ্য আদালতে সরকারদলীয় এমপির প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা

বরিশালে আদালত চলাকালে বিচারকের সঙ্গে আইনমন্ত্রীকে কথা বলাতে গিয়ে তোপের মুখে পড়েছেন বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি মনিরুল ইসলাম মনি। এর আগেও বহু বিতর্কিত কাণ্ড ঘটানো এই এমপির এমন আচরণে প্রকাশ্য আদালতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন বিচারক মো. জাহিদুল কবির, সেখানকার কর্মচারী ও আইনজীবীরা। শেষ পর্যন্ত এমপি মনিকে ক্ষুব্ধ বিচারক আদালত থেকে বের করে দিতে পুলিশকে নির্দেশ দেন। তবে পুলিশের হস্তক্ষেপের আগেই উপস্থিত অপর এমপি তালুকদার মো. ইউনুস তাকে নিয়ে বেরিয়ে আসেন। বরিশালের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গতকাল এ ঘটনা ঘটে। বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল কাইউম খান কায়সার বলেন, গতকাল দুপুর ১২টার দিকে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহিদুল কবিরের আদালত চলাকালে হঠাৎ এমপি মনি সেখানে প্রবেশ করেন। এ সময় একটি মামলার শুনানি চলছিল। এমপি মনি মুঠোফোন হাতে নিয়ে এজলাসে বসা বিচারক মো. জাহিদুল কবিরের দিকে এগিয়ে যান। বিচারককে উদ্দেশ করে এমপি মনি বলেন, 'আইনমন্ত্রী আপনার সঙ্গে কথা বলবেন। তিনি লাইনে আছেন।' এতে বিচারক ইতস্তত বোধ করেন ও বিব্রত হন। একপর্যায়ে এমপি মনিকে বিচারক জাহিদুল কবির আদালত থেকে বের করে দিতে দায়িত্বরত পুলিশকে নির্দেশ দেন। কিন্তু পুলিশ তাকে বের করে দেওয়ার আগেই একই আদালতে উপস্থিত বরিশাল-১ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস এগিয়ে আসেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে এ সময় তিনি এমপি মনিকে আদালত কক্ষ থেকে বের করে নিয়ে যান। অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস এমপি বলেন, এমপি মনি বিচারকের খাসকামরায় যাচ্ছিলেন। তিনি আসলে আদালতের নিয়মকানুন জানেন না। এমপি মনির আদালতে প্রবেশে এবং তার কর্মকাণ্ডে বিচারক কিছুটা বিব্রত হন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে এমপি মনিকে আদালত কক্ষের বাইরে নিয়ে যান বলে দাবি করেন এমপি ইউনুস। একই আদালতে উপস্থিত সিনিয়র আইনজীবী জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল হাই মাহবুব ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একজন এমপি হলেন আইনপ্রণেতা। অথচ এমপি মনি প্রকাশ্য আদালতে বিচারকের সঙ্গে কাউকে মুঠোফোনে কথা বলিয়ে দিতে গিয়ে আইনের চরম লঙ্ঘন করেছেন। এমপি মনির আচরণ ছিল ঔদ্ধত্যপূর্ণ, অশোভনীয়। তিনি বলেন, এমপি সাহেব কোনো বিচারকের সঙ্গে দেখা করতে যেতে পারেন তার খাসকামরায় নির্দিষ্ট সময়ে। কিন্তু তিনি যা করেছেন, তাতে আইনের প্রতি তার বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা আছে বলে মনে হয়নি। এটি তার দলের দেখা উচিত। এ ধরনের লোক ভবিষ্যতে জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগণের সমর্থন হারাবে বলে তিনি মনে করেন। আদালতে উপস্থিত আইনজীবী অ্যাডভোকেট এম এইচ সালেক বলেন, ২৯ মে উজিরপুর উপজেলা পরিষদ চত্বরে উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বাদলের সঙ্গে এমপি মনি ও তার ছেলে রিয়াজুল ইসলাম সুমনের ঝামেলা হয়। এ সময় বাদলসহ চত্বরে জড়ো হওয়া জনতার ওপর প্রকাশ্যে গুলি চালান এমপি-পুত্র সুমন। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে উভয় পক্ষের মধ্যে। ওই দিন চত্বরে থাকা সংসদের স্টিকারযুক্ত এমপি মনির গাড়ি বাদলের সমর্থকরা ভাঙচুর করেন-এমন অভিযোগ এনে তার (এমপি মনি) স্থানীয় প্রতিনিধি নাসিরউদ্দিন বাদী হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান বাদলসহ ৫০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। বাদল ওই মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন। পরে বাদী তার জামিনের বিরোধিতা করে আদালতে আবেদন করেন। ওই আবেদনের ওপর শুনানি চলাকালে গতকাল এ ঘটনা ঘটান বহু বিতর্কের নায়ক জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদানকারী এমপি মনি। এ বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ঘটনাটি এড়িয়ে সংযোগ কেটে দেন এমপি মনি।

সর্বশেষ খবর