সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০১৩ ০০:০০ টা

বয়স হয়েছে ভালো নেই, এখন কোথাও যাই না

বিচারপতি লতিফুর রহমান

বয়স হয়েছে ভালো নেই, এখন কোথাও যাই না

সাবেক প্রধান বিচারপতি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা লতিফুর রহমান বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে খুব একটা ভালো নেই বলে নিজেই জানিয়েছেন। কেমন কাটছে তার বর্তমান দিনকাল, তা জানতে গতকাল দুপুরে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কেমন আছেন? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'বয়স হয়েছে। বেশি ভালো নেই।' বরাবরের মতোই লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা এ আইন বিশেষজ্ঞ নিজের সম্পর্কে গণমাধ্যমকে খুব বেশি কিছু জানার সুযোগ দেন না। বিশেষ করে রাজনৈতিক ইস্যুতে বরাবরই তিনি নীরব থাকেন। সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোয় তার অনুপস্থিতির কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, 'আমি তো রিটায়ার্ড। এখন আর কোথাও যাই না। কোনো কাজের সঙ্গেও জড়িত নই। বলা যায় ঘরে বসেই দিন কাটে।' সাবেক এই প্রধান বিচারপতি নিজেকে কখনোই রাজনীতির সঙ্গে জড়াননি। ভবিষ্যতেও জড়ানোর ইচ্ছা নেই। তবে খবরের কাগজ পড়ে এবং টিভিতে সংবাদ দেখে নিয়মিত দেশ ও রাজনীতির খোঁজখবর রাখেন। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের মধ্যে সিএনএন ও বিসিসির খবর নিয়মিত দেখেন। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি কেমন দেখছেন? এ প্রশ্ন অনেকটা এড়িয়ে যান। তবে গণমাধ্যমে প্রচারিত খবর থেকেই দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি কেমন সে সম্পর্কে সহজে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন। তবে এর আগে বাংলাদেশ প্রতিদিনের একই প্রতিবেদকের কাছে গত বছরের ১৮ নভেম্বর দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে লতিফুর রহমান আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেছিলেন, সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে আমি এমন আশাই করি। তিনি বলেন, 'নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য এবং নির্বাচনকালীন যে কোনো ধরনের সহিংসতা এড়াতে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতায় আসতে হবে। আর এ জন্য দেশের রাজনীতিবিদদের চিন্তাভাবনা করেই একটা সমাধানে পেঁৗছাতে হবে।'

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা আরও জানান, বর্তমানে তিনি সবরকম সামাজিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলছেন। এমনকি অংশগ্রহণ করছেন না কোনো সভা-সেমিনারেও। বেশির ভাগ সময় ধানমন্ডির নিজ বাসভবনে কাটে তার। স্ত্রী আয়েশা রহমানকে নিয়েই তার সংসার। লতিফুর-আয়েশা দম্পতির তিন সন্তান শম্পা, রুম্পা ও নীপা তাদের স্বামী-সন্তানদের নিয়ে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। লতিফুর রহমান বলেন, 'স্ত্রীকে নিয়ে আছি। সন্তান ও নাতি-নাতনিরা সবাই দেশের বাইরে। এ জন্য প্রায়ই একাকীত্ব অনুভব করি। তবে গুরুতর কোনো রোগ না হলেও বার্ধক্যজনিত কাশি-সর্দি তাকে ভোগাচ্ছে বলে জানান। বর্তমানে পরিচিতজনদের সঙ্গে বাসার টিঅ্যান্ডটি ও মোবাইল ফোনে যোগাযোগ রক্ষা করেন তিনি। লতিফুর রহমান জানান, অবসরে যাওয়ার পর কারও সঙ্গেই খুব একটা যোগাযোগ রাখেন না। এমনকি সাবেক সহকর্মী ও বন্ধুদের সঙ্গেও তার আর আলাপ হয় না। তবে পুরনো সহকর্মীদের মধ্যে সাবেক প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানের সঙ্গে মাঝেমধ্যে আলাপ হয়। খেলাধুলার প্রতি আগ্রহী ৭৭ বছর বয়সী এই প্রবীণ আইনজীবীর প্রিয় খেলা গলফ ও টেনিস। লতিফুর রহমান বলেন, 'দায়িত্ব থেকে অবসর গ্রহণের পর থেকে আমি নিয়মিতই টেনিস খেলতাম। কিন্তু এখন বার্ধক্যের কারণে টেনিসের পরিবর্তে গলফ খেলছি। বইপিপাসু এই বিচারপতি আরও জানান, আগে অনেক বই পড়ার নেশা থাকলেও এখন যে বইটি পড়েন তা কিছুটা সময় নিয়েই পড়েন। লতিফুর রহমান বলেন, 'আমার বাসভবন ধানমন্ডির এমন একটি জায়গায় যেখানে রাস্তায় বের হওয়ার আগেও আমাকে দুবার ভাবতে হয়। একে তীব্র যানজট অন্যদিকে ফুটপাতেও হাঁটার কোনো পরিবেশ নেই। তাই ইচ্ছা থাকলেও হাঁটতে পারি না।' লতিফুর রহমান জানান, তিনি গান শুনতে বেশ পছন্দ করেন। বিশেষ করে স্যাটেলাইট টেলিভিশন 'তারা মিউজিক'-এর রবীন্দ্রসংগীত তার বেশ পছন্দের। পেশাগত জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে এরই মধ্যে লতিফুর রহমানের লেখা দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে। দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেওয়ার পর বিচারপতি লতিফুর রহমান সাধারণ মানুষের জন্য অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে 'তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দিনগুলি ও আমার কথা' এবং 'কনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ' নামে দুটি বই লিখেছেন। সাবেক এই আইনজ্ঞ জানান, তার তৃতীয় বইটি হবে আত্দজীবনীমূলক। তিনি জানান, তৃতীয় বইটির কাজ একটু সময় নিয়েই করবেন। ফলে খুব শীঘ্রই বইটি প্রকাশিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর