শনিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৩ ০০:০০ টা

রাজধানীতে কঠোর অবস্থানে পুলিশ

রাজধানী জুড়ে পুলিশ শক্ত অবস্থান নিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন ছাড়াও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তাবেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে স্পর্শকাতর স্থাপনাগুলোতে। জোরদার করা হয়েছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় কার্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পাশাপাশি বিরোধী দল বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের বাসায় বাসায় চলছে তল্লাশি অভিযান। ধরপাকড় চলছে সমানতালে। গত দুই দিনে বিএনপি নেতা ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকাসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের বাসায় পুলিশ দফায় দফায় তল্লাশি চালিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছে, ২৫ অক্টোবরকে সামনে রেখে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে নাশকতার আশঙ্কা করছে গোয়েন্দারা। গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে, যুদ্ধাপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতাদের মুক্তির দাবিতে জামায়াত শিবির বড় ধরনের সহিংসতার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরই মধ্যে ২৫ অক্টোবর সরকার ও বিরোধী দল আহূত মহাসমাবেশ ঘিরেও নাশকতার সৃষ্টি করা হতে পারে। সর্বশেষ দা কুড়াল নিয়ে বিএনপি নেতা সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার বক্তব্যের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ঢাকার নিরাপত্তা নিয়ে ভাবিয়ে তুলেছে। এসব বিবেচনায় রাজধানী ঢাকাকে নিরাপদ রাখতে ঈদের আগের দিন থেকে পুলিশ শক্ত অবস্থান নেয়। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, যে কোনো সময় যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঢাকার প্রতিটি থানার পুলিশ সদস্যদের বিশেষভাবে অ্যালার্টে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বোমাবাজদের তালিকা ধরে গ্রেফতারের জন্য পুলিশের বিশেষ টিম তৈরি করা হয়েছে। এরই মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি)। পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপি কার্যালয়ের সামনে পুলিশ শক্ত অবস্থান নিয়ে আছে। এ ছাড়া যেসব এলাকায় শিবিরের শক্ত ঘাঁটি রয়েছে, সে এলাকাগুলোতে তারা এখন নাশকতার জন্য তৈরি করছে। আবার পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়াতে রাজধানীর অদূরে এরা অবস্থান শক্ত করছে। ২৫ অক্টোবরের পর যে কোনো দিন ব্যাপক নাশকতার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। ওই কর্মকর্তা বলেন, ফকিরাপুল ছাড়াও শিবির বিজয়নগর, পল্টন, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ, শনিরআখড়া, ধলপুর, পরীবাগ, আজিমপুর, মিরপুর, মগবাজার, রামপুরা, শাহজাদপুর এলাকায় গোপনে আস্তানা গড়ে তারা এসব তৈরি করছে বলে খবর রয়েছে। তবে সুনির্দিষ্টভাবে ঠিক কোন জায়গায় এগুলো তৈরি হচ্ছে সে ব্যাপারে জানা না থাকার কারণে গ্রেফতার বা অভিযান পরিচালনা করা যাচ্ছে না। তবে এসব এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। মতিঝিল জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার আশরাফুজ্জামান বলেন, আমরা যেকোনো ধরনের নাশকতা রোধের জন্য প্রস্তুত রয়েছি। পাশাপাশি কেউ যেন নাশকতা চালাতে না পারে সে ব্যাপারে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। পুরো এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি চলছে। থানার ওসিদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। র‌্যাব সূত্র জানায়, রাজধানীতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। টহল ও চেকপোস্ট দিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। জামায়াত-শিবির যেন কোনো নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাতে না পারে সে জন্য র্যাবের প্রতিটি সদস্য রয়েছে সতর্ক। পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বাসা-বাড়ি, অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দফায় দফায় অভিযান চালাচ্ছে। তাদের খোঁজে ঘনিষ্ঠ আত্দীয় স্বজনদের বাসাবাড়িও অভিযানের বাইরে থাকছে না। এমন পরিস্থিতিতে মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা কেউ বাসাবাড়িতে থাকছেন না। সাদেক হোসেন খোকাসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের বাড়িতে পুলিশ দফায় দফায় অভিযান চালায়। গত সোমবার রাত ৮টার দিকে ঢাকার সাবেক মেয়রের গুলশানের বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালায়। তবে খোকা এ সময় বাসায় ছিলেন না। পরে গোপীবাগের বাসাতেও পুলিশের অভিযান চলে। একই দিনে দুপুর ২টার দিকে সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যরা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বাড়িতেও অভিযানে যায়। এদিকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও বাড়ানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশনারদের নিরাপত্তা নিয়েও ভাবছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, সেগুনবাগিচায় ঢাকা আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ের প্রথম ১২ তলার ৬ষ্ঠ তলা ও নিচতলার গোডাউন, আগারগাঁওয়ের জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের নিচতলার গোডাউনসহ দ্বিতীয় থেকে চতুর্থতলা এবং ডেমরায় থানা নির্বাচন কার্যালয়ে (তেজগাঁও সার্কেল অফিস সংলগ্ন) দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নথি, স্বচ্ছ ব্যালট বাঙ্ ও অন্যান্য উপকরণ সংরক্ষিত রয়েছে। সেখানেও নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে।

 

 

সর্বশেষ খবর