শনিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৩ ০০:০০ টা

স্বাধীন দেশে এত অনিশ্চয়তা আতঙ্ক কেন?

ড. মুহাম্মদ ইউনূস

স্বাধীন দেশে এত অনিশ্চয়তা আতঙ্ক কেন?

গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে সরকারের অবস্থানের কঠোর সমালোচনা করে গ্রামীণ ব্যাংকের ওপর কেউ হাত দিলে সেই হাত ভেঙে দেওয়ার জন্যও নারীদের প্রতি আহবান জানান শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ২৫ অক্টোবরের পর কী হবে তা নিয়ে উৎকণ্ঠা জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, 'সব দলের অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হতে হবে। নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ না করলে সে নির্বাচন আমরা মানব না। আমরা অশান্তি চাই না, আমরা শান্তিতে ভোট দিতে চাই।' বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রামে আয়োজিত এক নারী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. ইউনূস দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এভাবেই নিজের মতামত তুলে ধরেন। চট্টগ্রাম লেডিস ক্লাবে 'শিক্ষা, শিল্প-সাহিত্য ও সমাজ কর্মে উদ্যোগী নারী সমাবেশ' শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে 'নোবেল জয়ী ইউনূস সুহৃদ-চট্টগ্রাম' নামে একটি সংগঠন। নারী উদ্যোক্তা, চিটাগাং উইম্যান চেম্বারের সভাপতি কামরুন মালেকের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর মু. সিকান্দার খান, স্থপতি জেরিনা হোসাইন, ডিজাইনার আইভি হাসান, লেখিকা রুনু সিদ্দিকী, অধ্যাপিকা আনোয়ারা আলম।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম শুরুর দীর্ঘ বর্ণনা দিয়ে ব্যাংকটি নিয়ে সরকারের অবস্থানের কঠোর সমালোচনা করেন। ব্যাংকটির ওপর কেউ হাত দিলে সেই হাত ভেঙে দেওয়ার জন্যও নারীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। গ্রামীণ ব্যাংক রক্ষায় উপস্থিত নারীদের হাত তুলে সমর্থন দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'আপনাদের ব্যাংক রক্ষায় আপনাদেরই সোচ্চার হতে হবে। আপনাদের চেঁচিয়ে বলতে হবে- খবরদার প্রামীণ ব্যাংকে হাত দেবেন না। যে হাত দেবেন, তার হাত ভেঙে দেব।'

ড. ইউনূস বলেন, 'দেশের অবস্থা খুব খারাপ। সবার মধ্যেই আতঙ্ক ২৫ অক্টোবরের পর কী হবে? ঘর থেকে বের হতে পারব তো? স্বাধীন দেশে এত অনিশ্চয়তা, আতঙ্ক কেন? নির্বাচনও কি কারও খেয়ালখুশিমতো হতে হবে? আমরা কি ভোট দিতে পারব না?'

সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, 'আমরা কোনো দুর্যোগের মধ্যে পড়তে চাই না। এখনো সময় আছে, অশান্তির দরজা যাতে খুলে না যায় সেই ব্যবস্থা নিন। আমরা শান্তিতে থাকতে চাই। নিয়মের মধ্যে থাকতে চাই।'

তিনি বলেন, '৮৪ লাখ মহিলার গ্রামীণ ব্যাংককে সরকার নিজেদের দখলে নিতে চাচ্ছে। এ জন্য সরকারের সঙ্গে আমার দ্বন্দ্ব চলছে। সরকার আমার ওপর আক্রমণ করছে। আমরা গরিবদের জন্য ব্যাংক বানিয়েছি কোনো সরকারের কাছে বেচে দেওয়ার জন্য নয় কিংবা কোনো সরকারকে দখলে নিয়ে যেতে দেওয়ার জন্য নয়।'

নারীদের উদ্দেশে ড. ইউনূস বলেন, 'আমি দেখতে চাই, আপনাদের গলায় জোর বেশি নাকি একজনের গলার জোর বেশি?' দেশের বিভিন্ন অগ্রযাত্রায় নারীদের অবদানের কথা উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, 'বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠের দেশ। মুসলিম দেশের অভ্যাস নারীদের ঘরে বন্দী করে রাখা। কিন্তু সম্পূর্ণ মুসলমানত্ব বজায় রেখে, সেই কাঠামোর ভেতরে থেকে নারীরা এ দেশকে পাল্টে দিয়েছে।' তিনি বলেন, 'সরকার কখনো বলে, গ্রামীণ ব্যাংকে নাকি সুদের হার বেশি। সরকারি ব্যাংকে সুদের হার ২৭ শতাংশ আর গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার ২০ শতাংশ। আবার কখনো বলে আমি নাকি গ্রামীণ ব্যাংকের ৩০ হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছি। পরে বলে, ৩০ হাজার না, ১০ হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছি। তদন্ত কমিশন একটা করেছে, সেই কমিশন তদন্ত রিপোর্টই দিতে পারছে না।' ড. ইউনূস বলেন, 'সরকার মাঝেমধ্যে যা মুখে আসছে, যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে কথা বলছে। সরকার বলছে আমি নাকি রক্তচোষা, সুদখোর। আমি তো গ্রামীণ ব্যাংকের মালিক নই, তাহলে আমি কীভাবে সুদখোর হলাম? ইচ্ছা করলে তো আমি গ্রামীণ ব্যাংকের মালিক হতে পারতাম।' তিনি বলেন, 'সরকার নতুন আরও একটা উপাধি দিয়েছে, আমি নাকি ঘুষখোর। সুদখোর না হয় বুঝলাম কিন্তু ঘুষখোর হলাম কীভাবে? গ্রামীণ ব্যাংকে ২৫ হাজার ছেলেমেয়ে চাকরি করে, কারও চাকরির জন্য কাউকে এক পয়সা ঘুষ দিতে হয়নি। বাংলাদেশে আর কোনো চাকরি ঘুষ ছাড়া হয়েছে এমন নজির নেই।'

 

 

সর্বশেষ খবর