শনিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৩ ০০:০০ টা

বিশিষ্টজন ও ব্যবসায়ী নেতাদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

গতকাল সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পরিপ্রেক্ষিতে বিশিষ্টজন, সুশীল সমাজ ও ব্যবসায়িক নেতারা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধী দলসহ প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো আজ আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া জানাবে। তবে জামায়াতে ইসলামী ও জেএসডি প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ প্রত্যাখ্যান করেছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলি খান প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের প্রস্তাব ধরে এগিয়ে যাওয়ার জন্য বিরোধী দলের প্রতি অনুরোধ করেছেন। জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণকে তিনি গঠনমূলক বলেও অভিহিত করেন। তিনি বলেন, প্রাক-নির্বাচনী রাজনৈতিক ভাষণ এটি। এতে গঠনমূলক উপাদান রয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে তা ধরেই সমঝোতার পথে সবার এগিয়ে যাওয়া উচিত। এই সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিরোধী দল কী চায় তা কখনো স্পষ্ট করেনি। এখন এ প্রস্তাব ধরে সংসদে আলোচনায় বসা উচিত। কোথায়, কীভাবে তাদের সঙ্গে একমত হওয়া যায় তা আলোচনা হতে পারে।
ৃশেখ হাসিনার ভাষণকে ইতিবাচক অভিহিত করে প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বিএনপিকে আলোচনায় বসার তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে সমস্যার ৯৫ ভাগ সমাধান হয়ে গেছে। এখন বিএনপির উচিত তা গ্রহণ করে আলোচনায় বসা।
ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী সর্বদলীয় সরকারের ডাক দিয়েছেন। এখন আলোচনায় বসে সুরাহা করতে হবে কীভাবে এটা করা হবে।' 'প্রস্তাব খুবই ভালো। এখন দুজনকে (খালেদা-হাসিনা) মিলে ভালোভাবে সেটাকে শেষ করতে হবে। গণতন্ত্রকে কীভাবে এগিয়ে নিতে হবে তা ঠিক করতে হবে।'
পাশাপাশি সর্বদলীয় মন্ত্রিসভার মন্ত্রণালয় বণ্টনের বিষয়েও আলোচনা করার তাগিদ দেন তিনি।
রফিক-উল হক বলেন, 'বিরোধী দল থেকে কারা মন্ত্রিপরিষদে যাবেন, কে কোন মন্ত্রণালয় পাবেন তা ঠিক করতে হবে। এরশাদ সাহেবের লোকজন সেই মন্ত্রিপরিষদে যাবেন কি না তাও ঠিক করতে হবে। কারণ সর্বদলীয় বললে তো এরশাদ সাহেবও চলে আসেন।' প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে সমস্যার ৯৫ ভাগ সমাধান হয়ে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'বাকিটা আলোচনা করে ঠিক করতে হবে। আমি সব সময় আশাবাদী। আমি নেতিবাচক চিন্তা করি না।'
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও আইনের শিক্ষক শাহদীন মালিক বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠনের প্রস্তাবে বিস্তারিত কিছু নেই। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় মন্ত্রিসভার বিষয়টি আরেকটু খোলাসা করে বললে আরও ভালো হতো। বিরোধী দল থেকে কয়জন মন্ত্রী নেওয়া হবে বা কোন দফতরে দেওয়া হবে- এগুলো বিস্তারিত বললে ভালো হতো।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণে নতুন কিছু নেই। 
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রথম স্পষ্ট করে সর্বদলীয় সরকারের কথা বললেন। এটা অবশ্যই একটা অগ্রগতি। পারস্পরিক অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতার কারণে সৃষ্ট রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের ক্ষেত্রে এ প্রস্তাব একটা সম্ভাবনার সৃষ্টি করল। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে আরও দুটি দিকের উল্লেখ থাকলে ভালো হতো। প্রথমত নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী যে প্রস্তাব করেছেন, সেখানে বিরোধী দলের আনুপাতিক হারের উল্লেখ থাকলে ভালো হতো। এ ছাড়া বিরোধী দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের প্রধান পদে শেখ হাসিনার বিষয়ে যে কথা বলে আসছে, এ বিষয়ের উল্লেখ থাকলে আরও ভালো হতো। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির অন্যতম দাবি নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বললেন, তার নেতৃত্বে সর্বদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। তার এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বিরোধী দলের দাবির সঙ্গে সরকারের বক্তব্যের কোনো কানেকশন খুঁজে পাই না। 
এফবিসিসিআইর আরেক সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী সর্বদলীয় অন্তর্বর্তকালীন সরকার গঠনের যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা নিয়ে একটা আলোচনার সূত্রপাত হতে পারে। যেভাবেই হোক একটা আলোচনা প্রয়োজন।

সর্বশেষ খবর