শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা

রবিবার থেকে আবারও টানা অবরোধ

রবিবার থেকে আবারও টানা অবরোধ

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে রাজনৈতিক সংলাপকে আর গুরুত্ব না দিয়ে লাগাতার হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির দিকে যাচ্ছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোট। সরকারকে আর সময় দিতে চান না জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তাই আগামী রবিবার থেকে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা ৮৪ ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচি দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। তবে এর মধ্যে পরিস্থিতির অবনতি হলে আরও ২৪ ঘণ্টা বাড়িয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১০৮ ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচি দেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। আগামীকাল শনিবার এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তিনদিনের অবরোধে নিহতদের স্মরণে আজ বাদ জুমা ঢাকাসহ সারা দেশে গায়েবানা জানাজা কর্মসূচি থেকে শনিবার বিক্ষোভ কর্মসূচিও ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে রবিবার থেকে টানা চার দিন হরতাল কর্মসূচি দেওয়ার কথাও বিএনপির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। শনিবার থেকেও টানা হরতাল-অবরোধের কর্মসূচির কথাও জানান বিএনপির কোনো কোনো নেতা। সূত্র মতে, জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের রাজনীতি বিষয়ক বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর আসন্ন ঢাকা সফরের পরপরই চূড়ান্ত আন্দোলনে রাজপথে নামবেন বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করতে অসহযোগ আন্দোলনে চলে যাবেন তিনি। জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিবের সঙ্গে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে সংলাপ নিয়ে দলের সর্বোচ্চ আগ্রহের কথাও তুলে ধরবেন বেগম জিয়া। জাতিসংঘের বিশেষ দূতের বাংলাদেশ সফরকে গুরুত্বের সঙ্গে নেবেন তিনি।

বিএনপি নেতারা জানান, সংলাপ নিয়ে তারা এখন আর কোনো আশার আলো দেখছেন না। সংলাপ ইস্যুতে বিএনপি অনেক দূর এগিয়ে গেলেও আওয়ামী লীগের অনড় অবস্থানে বিকল্প আর কোনো পথ খোলা নেই। দলের পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের চিঠির কোনো উত্তর না দেওয়ায় সরকারের মনোভাব স্পষ্ট। তাছাড়া মহাসচিব পর্যায়ে বৈঠক নিয়ে সরকারের অবস্থানেও অসন্তোষ বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। চূড়ান্ত সংলাপের আগে গণমাধ্যমে নানা তথ্য চলে আসায় ক্ষুব্ধ বিএনপির নীতি নির্ধারকরা। এ ছাড়া অবরোধে সরকারের কঠোর অবস্থান ও দলের সিনিয়র পাঁচ নেতাকে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করার ঘটনায় সংলাপের সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় ১৮ দলকে কঠোর হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। তাই রবিবার থেকে বাধ্য হয়ে লাগাতার কর্মসূচির দিকেই যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন ঠেকানোর প্রয়োজনীয় সব ধরনের আন্দোলন কর্মসূচির উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, তিন দিনের অবরোধে সারা দেশে ১৮ দলের নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণে সন্তুষ্ট বিএনপি চেয়ারপারসন। আগামী দিনের অবরোধসহ সব ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়নে চরম আশাবাদীও তিনি। তৃণমূল বিএনপি ও জোটের নেতাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন বেগম জিয়া। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ, জমা ও যাচাই-বাছাইয়ের দিনগুলোতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার জন্যও তৃণমূলের নেতাদের বলা হয়েছে কেন্দ্র থেকে। এদিকে ঢাকার আন্দোলনে গতি আনতে নতুন কৌশল নিয়ে ভাবা হচ্ছে। সূত্রে জানা যায়, অবরোধ চলাকালে আত্দগোপনে থাকা বিএনপির সিনিয়র নেতারা এখন যথেষ্ট সক্রিয়। ঢাকার নেতারা যার যার এলাকায় তাদের অধীনস্থ নেতা-কর্মীদের দিয়ে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। এ ছাড়াও গত তিন দিনের অবরোধে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় নেতা-কর্মীদের মাঠে দেখা গেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সংলাপ-সমঝোতার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে যাওয়ায় বিএনপির আন্দোলন ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই। আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায় করা হবে। সংলাপ-সমঝোতায় কূটনৈতিক তৎপরতাতেও তেমন কোনো আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। রবিবার থেকে নতুন কর্মসূচি আসবে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী জানান, ১৮ দলীয় জোটের সঙ্গে সরকার যে আচরণ করছে তাতে সমঝোতার কোনো পথ খোলা নেই। আন্দোলন ছাড়া ভিন্ন কোনো পথও নেই। স্বাভাবিকভাবেই আগামী দিনগুলোর আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। শীঘ্রই নতুন কর্মসূচি আসবে। তবে কী ধরনের কর্মসূচি আসবে তা সময় মতো গণমাধ্যমকে জানানো হবে বলে জানান তিনি।

 

 

সর্বশেষ খবর