শিরোনাম
সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা
সিইসি থেকে পঙ্কজ শরণ

দিনভর তারানকোর দৌড়ঝাঁপ, সমঝোতার আভাস নেই

দিনভর তারানকোর দৌড়ঝাঁপ, সমঝোতার আভাস নেই

নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে সবার অংশগ্রহণে একটি অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে রাজনৈতিক ঐকমত্য সৃষ্টির জন্য গতকালও নানা মহলের সঙ্গে দিনভর বৈঠক করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুনের বিশেষ দূত অস্কার ফারনান্দেজ তারানকো। সফরের তৃতীয় দিনে গতকাল তিনি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, বিএনপি নেতা শমসের মবিন চৌধুরী, ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ এবং ড. কামাল হোসেনসহ চার নাগরিক সমাজের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আজ তিনি দুই নেত্রীর সঙ্গে আবারও বৈঠকে বসবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো সমঝোতার আভাস দেখা যাচ্ছে না। 
বৈঠকে অংশ নেওয়াদের জানানো তথ্য মতে, জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুনের বিশেষ দূত অস্কার ফারনান্দেজ তারানকো নির্দিষ্ট কোনো ফর্মুলা তুলে ধরেননি। বাংলাদেশের জনগণের চাহিদা ও পছন্দের পদ্ধতিতেই সম্ভব সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন চাইছে জাতিসংঘ। এই জন্য দুই দল যেন নিজের মধ্যে সংলাপ করে সেই প্রচেষ্টাই করছেন তারানকো। তবে নির্বাচনকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা সীমিত করার একটি প্রস্তাবনা নিয়ে তারানকো গতকাল আলোচনা করেছেন বিভিন্ন ফোরামে। কিন্তু এটি প্রত্যাখ্যান করেছে দুই দলই। ঢাকার রাজনৈতিক সংকট সমাধানের মিশন নিয়ে সফরে আসা তারানকো অবরোধ ও হরতালের মধ্যেই গতকাল দিনের শুরুতে প্রাতঃরাশ বৈঠক করেছেন আন্তর্জাতিক কয়েকটি সংস্থার মিশন প্রধানদের সঙ্গে। পরে সকাল সাড়ে ৯টায় সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ জাতীয় পার্টির তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কে বৈঠক করেছেন। এক ঘণ্টার বৈঠকে এরশাদ ছাড়া ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের ও মহাসচিব রহুল আমিন হাওলাদার। বৈঠক শেষে সেখান থেকে তারানকো গিয়েছিলেন নির্বাচন কমিশনে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রাকিবউদ্দীন আহমদসহ অন্য কমিশনারদের সঙ্গে করেছেন দীর্ঘ বৈঠক। কমিশন থেকে বেরিয়ে তারানকো ও তার প্রতিনিধিরা যান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ড. গওহর রিজভীর সঙ্গে আলোচনা করতে। পরে হোটেলে ফিরে নাগরিক সমাজের চার প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। প্রবীণ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, শিক্ষাবিদ ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক এবং এনজিও ব্যক্তিত্ব বদিউল আলম মজুমদার ছিলেন বৈঠক। দেড় ঘণ্টার এই বৈঠকের পরই জামায়াতের সঙ্গে বৈঠক নির্ধারিত ছিল তারানকোর। কিন্তু এই বৈঠক স্থগিত করে আজ নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামী। এরপর সন্ধ্যায় তারানকো যান ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণের বাসভবনে। সেখানে প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক শেষে তার নির্ধারিত হোটেলে ফিরে যান তারানকো।
নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার আলোচনা সব বৈঠকেই : আগের দিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনার পর গতকালও দিনভর বৈঠকগুলোতে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার বিষয়টিই ছিল মুখ্য আলোচনা। তারানকো বাংলাদেশের জাতীয় পার্টির কাছে তিনি জানতে চেয়েছেন তাদের অবস্থান ও বর্তমান পরিস্থিতির মূল্যায়ন সম্পর্কে। জবাবে জাতীয় পার্টি বলেছে নির্বাচন পিছিয়ে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকেও তারানকো নির্বাচন পেছানো যায় কিনা তা জানতে চেয়েছেন। জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করলে এক সপ্তাহ পেছানো সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন। নাগরিক সমাজের বৈঠকেও চার নাগরিক প্রতিনিধি বর্তমানের একতরফা নির্বাচনের যে উদ্যোগ চলছে তা থামানোর কথা বলেছেন। 
জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈঠক : এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে জাতিসংঘ দূতের বৈঠক শেষে জিএম কাদের ও রুহুল আমিন হাওলাদার বৈঠকের বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানান। জিএম কাদের বলেন, 'জাতিসংঘ আমাদের মতামত জানতে চেয়েছে। আমরা বলেছি, এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন বাঞ্ছনীয় নয়। নির্বাচন পিছিয়ে দিতে হবে। পিছিয়ে দেওয়া নির্বাচনে যেন সবাই আসতে পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। সব দলের আসা নিশ্চিত না হলে এই মুহূর্তে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু পরিবেশ হলে কোনো অবস্থান রাখার সুযোগ হলে তখন আবার সিদ্ধান্ত হবে।' রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, 'এক ঘণ্টা ধরে আলোচনায় সার্বিক পরিস্থিতি, রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে তাকে (তারানকো) আমরা অবহিত করেছি। কী করলে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য এবং সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়, সে সম্পর্কে তিনি জানতে চেয়েছেন। বর্তমানে যে অনিশ্চয়তা, যে সমস্যা ও সংকট চলছে পার্টির চেয়ারম্যান তা তুলে ধরেছেন। রক্তক্ষয় বন্ধ করে মানুষ যেন নিরাপদে থাকতে পারে, সে জন্য এক টেবিলে আলোচনা করে এই জাতীয় সমস্যার সমাধান করতে হবে। তিনি গুরুত্বের সঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রস্তাব শুনেছে। এখানে জাতিসংঘ অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে বলে জাতীয় পার্টি আশা করছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি, প্রস্তাব দিয়েছি, আপনারা সময় বাড়িয়ে দেন, যেন সব দল আসতে পারে। আমাদের দলের অনেক ভালো প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি। আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বসব। শিডিউল পরিবর্তন করতে হবে। 
নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক : প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ ও সফররত অস্কার ফারনান্দেজ তারানকো প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেছেন। শেষ দিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও তারানকো একান্তে প্রায় ২৫ মিনিট কথা বলেছেন। আনুষ্ঠানিক বৈঠকে নির্বাচন কমিশনারা ছিলেন না। তবে ছিলেন ইসি সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক। সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেছেন, সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি ও পদ্ধতির বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ইসি সচিবালয় সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে তারানকো সিইসির কাছে জানতে চান নির্বাচন পেছানোর সুযোগ আছে কিনা? সিইসি তারানকোকে জানান, আমাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্বাচন করা ছাড়া আর কোনো উপায়ই ইসির হাতে নেই। তবে সব দল ঐকমত্যে পেঁৗছালেই কেবল সংবিধানের মধ্যে থেকে নির্বাচন পেছানো যেতে পারে। এক্ষেত্রে দলগুলোকে অবশ্যই আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিতে হবে। এ ছাড়া নির্বাচন পেছানো সম্ভব নয়। 
গওহর রিজভী ও শমসের মবিনের সঙ্গে বৈঠক : নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা শেষে অস্কার ফারনান্দেজ তারানকো যান ড. গওহর রিজভীর সঙ্গে বৈঠক করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সেখানে এক ঘণ্টার চেয়ে বেশি সময় নিয়ে আলোচনা করেন তারা। রাতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীর সঙ্গে তার বাসভবনে নৈশভোজ ও বৈঠক করেন তারানকো। সূত্রের খবর, তারানকোর সঙ্গে প্রায় প্রতিটি বিষয়ে সফরের আগে থেকেই নিয়মিত যোগাযোগ আছে গওহর রিজভী ও শমসের মবিনের। সরকারের অবস্থান জানতে প্রায় নিয়মিত ঢাকা-নিউইয়র্ক ফোনালাপ হচ্ছিল রিজভী-তারানকো-মবিন এর। এখনো সরকার ও বিরোধী দলের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যম গওহর রিজভী ও শমসের মবিন। তারানকোকে নিজ নিজ দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করছেন এই দুই নেতা। এরই অংশ হিসেবে এই বৈঠক।
নাগরিক সমাজের সঙ্গে বৈঠক : তারানকোর সঙ্গে নাগরিক সমাজের দেড় ঘণ্টা বৈঠকে উপস্থিত ড. কামাল হোসেন, ড. শাহদীন মালিক, ড. বদিউল আলম মজুমদার গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। চার প্রতিনিধির প্রত্যেককেই ব্যক্তিগতভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা। সুশীল সমাজের এই প্রতিনিধিরা জাতিসংঘ দূত অস্কার ফারনান্দেজ-তারানকোর সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন পেছানোর ওপর জোর দেন যাতে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়। ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ফারনান্দেজ-তারানকোর তাদের কাছে বাংলাদেশের পরিস্থিতি জানতে চেয়েছেন। আমরা বলেছি, আইনত নির্বাচন এখনো পেছানো সম্ভব। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটা সমাধান দরকার। একতরফা নির্বাচনের এই রেলগাড়িটা থামাতে হবে। ড. শাহদীন মালিক বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৮৭ শতাংশ ভোট পড়েছিল। দেশের মানুষ চায় ওইরকম একটি নির্বাচন, যাতে সবার অংশগ্রহণ থাকবে। এ ছাড়া উনারা (জাতিসংঘ দূত) নিউইয়র্ক থেকে কোনো ফর্মুলা নিয়ে আসেননি। তিনি সবার সঙ্গে কথা বলবেন। সবাই যেটা চায়, তেমন একটি নির্বাচনই তারা চান।
ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠক : আগের দিন মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে একান্তে এবং ব্রিটিশ, কানাডিয়ান হাইকমিশনার, ইইউ প্রতিনিধি ও জার্মান রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে প্রাতঃরাশ বৈঠক করার পর গতকাল ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তারানকো ও তার নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিরা। হাইকমিশনারের গুলশানের বাসভবনে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা শুরু হওয়ার এই বৈঠক চলে এক ঘণ্টা। এ বিষয়ে হাইকমিশনের এক মুখপাত্র বলেছেন, আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে ভারতের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। সেই সঙ্গে বলা হয়েছে ভারত বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুসারে এবং গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতায় গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আশা করে। তবে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ আশা করে না। 
আলোচনায় নির্বাচনকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানোর প্রস্তাবনা : সংবিধানের অধীনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট সমাধানের বিষয়ে একটি অভিন্ন অবস্থানে আসতে চাচ্ছেন তারানকো ও তার প্রতিনিধিরা। এ জন্য নিজে কোনো ফর্মুলা উত্থাপন করেননি তারানকো। সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই একটি অবস্থানে আসতে চাচ্ছেন তিনি। এ জন্য এর আগে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে উত্থাপিত একটি প্রস্তাবনার বিষয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন তারানকো। সূত্র মতে, এই প্রস্তাবনাটি রাষ্ট্রপতির কাছে উত্থাপন করেছিলেন বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। পরে একই ধরনের একটি প্রস্তাবনা উত্থাপন করেছিলেন বিএনপিপন্থি সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। আলোচনায় থাকা এই প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, শুধু বাংলাদেশ সরকারের রুলস অব বিজনেসে পরিবর্তন এনে নির্বাচনকালীন সরকারের মেয়াদকালে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া হবে এবং সর্বসম্মতি ছাড়া নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভার কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে না। এটি মানলে সংবিধানের মধ্যে থেকেই সমাধান সম্ভব। অবশ্য সূত্র মতে, বিএনপি তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে তারানকোর কাছে বলেছেন, শেখ হাসিনাকে প্রধান রেখে কিছুতেই নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি।
সিইসি-তারানকো একান্ত বৈঠক : প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ ও সফররত অস্কার ফারনান্দেজ তারানকো একান্তে কথা বলেছেন। গতকাল বেলা ১১টা থেকে ১২টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত শেরেবাংলা নগরের সিইসির কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়। ইসি সচিবালয় সূত্র জানিয়েছে, প্রতিনিধি দলের উপস্থিতিতে সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এর পরই সিইসি ও তারানকো একান্তে প্রায় আধা ঘণ্টা আলাপ করেছেন। বৈঠকে তারানকো সিইসির কাছে জানতে চান নির্বাচন পেছানোর সুযোগ আছে কি-না? সিইসি তারানকোকে জানান, আমাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্বাচন করা ছাড়া আর কোনো উপায়ই ইসির হাতে নেই। তবে সব দল ঐকমত্যে পেঁৗছলেই কেবল সংবিধানের মধ্যে থেকে নির্বাচন পেছানো যেতে পারে। এক্ষেত্রে দলগুলোকে অবশ্যই আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিতে হবে। এ ছাড়া নির্বাচন পেছানো সম্ভব নয়। এদিকে নির্বাচন পেছানোর বিষয়ে একমত হতে পারছে না নির্বাচন কমিশনাররা। একাধিক নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রার্থী বাছাইয়ের পর নির্বাচন পেছানোর ক্ষেত্রে আইনি জটিলতা রয়েছে। তারা বলেন, ইতোমধ্যে ৩৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। আর নির্বাচন পেছাতে হলে তাদের আগেই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। তার আগে নির্বাচন পেছালে আইনি জটিলতা সৃষ্টি হবে। 
সিইসি-তারানকো বৈঠকে ইসি সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক ও ইউএনডিপি প্রতিনিধি ক্রেইগ জেনেস (পরিচালক, উলেকটরাল অ্যাসিস্টেন্স ডিভিশন, ইউএন), জিয়ানলুকা জার্মপোলা (স্পেশাল অ্যাসিস্টেন্ট টুন দ্য এএসজি, ইউএন), ম্যারি জুলি জার (সিনিয়র মেডিয়েশন এঙ্পার্ট, ইউএন), সোনিয়া ব্যাচম্যান (পলিটিক্যাল এফেয়ারাস অফিসার, ইএন) ও ইউএন আবাসিক সমন্বয়ক নিল ওয়াকার উপস্থিত ছিলেন। চার নির্বাচন কমিশনারের কেউই এ সময় ছিলেন না। জাতিসংঘ দূত ইসি থেকে বেরোনোর সময় কোনো কথা বলেননি। তবে আগামী ১০ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় স্থানীয় একটি হোটেলে তার সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে ব্রিফিং করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শমসের মবিনের সঙ্গে অনির্ধারিত বৈঠক : জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফারনান্দেজ-তারানকো বিএনপির দুই নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের দূত গতকাল সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে বনানীতে বিএনপির সহসভাপতি শমসের মবিন চৌধুরীর বাসভবনে যান। প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠকে কি আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে শমসের মবিন সাংবাদিকদের বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা চলছে। এটা আরও হবে। তাই এ মুহূর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না। তারানকোর সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদও ছিলেন। অন্যদিকে তারানকোর চার সফরসঙ্গীও উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যায় ভারতের হাইকমিশনারের সঙ্গে দেখা করার পর বিএনপির সহসভাপতির বাড়িতে যান ফারনান্দেজ-তারানকো।
তারানকোকে এএইচআরসির চিঠি : নির্বাচনপূর্ব সহিংসতার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ চেয়েছে হংকংভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন (এএইচআরসি)। ঢাকা সফররত জাতিসংঘের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অস্কার ফারনান্দেজ তারানকোকে লেখা একটি খোলা চিঠিতে কমিশনের নির্বাহী পরিচালক বিজো ফ্রান্সিস এই আহ্বান জানান। 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ, নির্বাচন কমিশনে প্রভাব খাটানো এবং দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি আমলে না নেওয়ারও অভিযোগ এনেছে এএইচআরসি। এসব যুক্তি দেখিয়েই নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ চেয়েছে সংগঠনটি।
চিঠিতে বলা হয়েছে, এক যুগ ধরে গৃহযুদ্ধের মধ্যে থাকা কেনিয়ায় জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সাম্প্রতিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদাহরণ টেনে খোলা চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশেও সেরকম একটি গ্রহণযোগ্য স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের অবশ্যই কেনিয়ার অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো উচিত। ফ্রান্সিস বলেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের উচিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রশাসনিক, বিচারিক ও সংসদীয় পদক্ষেপ নেওয়া। কিন্তু আগামী নির্বাচনের আগে সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির বিষয়ে দুঃখজনকভাবে তারা একমত হতে পারেনি। সরকার দৃশ্যত বড় দলগুলোকে বাদ দিয়ে একক নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তারা 'সংবিধান রক্ষার' অজুহাত দিলেও তাতে সংকট মিটছে না। 
খোলা চিঠিতে বলা হয়, বিবদমান দল দুটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য পক্ষকে ব্যবহার করে পেশিশক্তি প্রদর্শনের যুদ্ধে নেমেছে। নির্বাচন কমিশন কতটা ক্ষমতাহীন- দুই পক্ষই তা জানে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন তাদের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৫ জানুয়ারি গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচনের আয়োজন করতে পারবে বলে বাংলাদেশে কেউ মনে করে না। আর নির্বাচন সামনে রেখে এ পরিস্থিতির জন্য প্রাথমিকভাবে সরকারকে দায়ী করে এএইআরসির নির্বাহী পরিচালক বলেন, সরকার বিরোধীদলকে সহিংস হতে উসকানি দিচ্ছে যাতে তাদের জনসমর্থন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত পাঁচ বছরের সীমাহীন দুঃশাসন ও দুর্নীতির পরও ক্ষমতাসীন দল এর মাধ্যমে লাভবান হওয়ার আশা করছে।

সর্বশেষ খবর