শিরোনাম
সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা

শেষকৃত্যে বিশ্ব নেতৃত্বের মহাসম্মেলন

শেষকৃত্যে বিশ্ব নেতৃত্বের মহাসম্মেলন

জন্ম দেখেছে কুনু। এবার দেখবে সমাধি। এটিকে শুধুই শেষকৃত্য বললে ভুল হবে। কারণ এমন উপলক্ষকে কেন্দ্র করে এখানেই যে মিলিত হতে যাচ্ছেন বিশ্বের তাবৎ নেতারা। বলা চলে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিশ্বনেতাদের মহাসম্মেলন। কারণ এখানে অংশ নেওয়ার জন্য আসছেন বিশ্বের শক্তিধর থেকে নিয়ে দেশগুলোর শীর্ষ ব্যক্তিরা। ১৫ ডিসেম্বর আসতে খুব বাকি নেই। সব ঠিক থাকলে ওই দিনই হবে 'মাদিবা'র শেষকৃত্য। দক্ষিণ আফ্রিকার ইস্টার্ন কেপ প্রদেশের ছোট্ট এক গ্রাম কুনু। এখানেই হবে শেষকৃত্যের আনুষ্ঠানিকতা। এটি হচ্ছে সেই গ্রাম, যেখানে সমাহিত করা হয়েছিল তার আত্মীয়-পরিজনদের। ম্যান্ডেলা জন্মেছিলেন অভিজাত টেম্বু গোত্রে। এ গোত্র মেনে চলে স্বকীয় প্রথা। সেই প্রথা মেনেই এখানে সমাহিত করা হবে ম্যান্ডেলাকে। তবে চুপেচাপে নয়, রীতিমতো ঢাকঢোল পিটিয়ে। কারণ ম্যান্ডেলা যে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের এক মহাতারকা। আর এই মহাতারকার শেষবিদায়ে আসছেন কারা। অভ্যাগতের তালিকায় নেই কে। আসছেন আমেরিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। উপস্থিত থাকবেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টরা। ব্রিটেন থেকে আসার কথা প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের। শোনা যাচ্ছে আসতে পারেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, যুবরাজ চার্লস ও উইলিয়াম। এ ছাড়া চীন, ইরান, কিউবা, ফিলিস্তিন, ইসরায়েলসহ বহু দেশের গণমান্য নেতাদেরও অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে এতে। বাংলাদেশ থেকে শেষকৃত্যে অংশ নিতে যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। যদিও এটি শেষকৃত্যানুষ্ঠান, কিন্তু এতে এত বেশিসংখ্যক বিশ্ব নেতৃত্ব এক হচ্ছেন যে, এখানে বসতে পারে কূটনীতির আসর। সমাধা হতে পারে অভ্যন্তরীণ বা আন্তরাষ্ট্রীয় সমস্যা। তবে একটা বিষয় আশ্চর্য হওয়ার মতোই বলতে হবে। তা হচ্ছে, এত বড় একজন মানুষের জন্মভূমিতে নেই রাত যাপনের ব্যবস্থা। ফলে শেষকৃত্যে যোগ দিতে আসা রাষ্ট্রনায়কদের কুনু থেকে ফিরতে হবে ওই দিনই।

কিন্তু রাত যাপনের ব্যবস্থা না থাকলেও বরেণ্য অতিথিদের যাতায়াতের সুব্যবস্থা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার। কুনুর কাছাকাছি নেই তেমন কোনো বিমানবন্দর। তবে বিমান ওঠানামার ব্যবস্থা রয়েছে পাশর্্ববর্তী এমটাটায়। সেখানেই অতিথিদের পৌঁছে দেওয়া কিংবা ফিরিয়ে আনার বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এমটাটা থেকেই কুনুতে আসবেন রাষ্ট্রনায়করা। ভক্ত-অনুরাগীদের মধ্যে অবশ্য অরাজনীতিক মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। তাদেরও অনেকের হাজির থাকার কথা রয়েছে কুনুতে। এ তালিকায় আছেন হলিউডের খ্যাতনামা উপস্থাপক অভিনেত্রী অপরা উইনফ্রে। তিনি যে আসবেনই, সে বিষয়ে প্রশাসন নিশ্চিত। শুধু খোঁজ মেলেনি ম্যান্ডেলার দ্বিতীয় স্ত্রী উইনির। মাদিবার মৃত্যুর পর প্রতিক্রিয়াও পাওয়া যায়নি এই নারীর। তবে স্ত্রীর পতিক্রিয়া পাওয়া যাক বা না যাক, কাল ম্যান্ডেলার জন্য এক প্রার্থনাসভায় মিলিত হয়েছিলেন এক কোটিরও বেশি নারী, পুরুষ. শিশু। বর্ণবাদবিরোধী অবিসংবাদিত এই নেতার আত্দার শান্তি কামনা করেন তারা মোমবাতি ফুল দিয়ে আর মোমবাতি জ্বালিয়ে। তোড়জোড় অবশ্য থেমে নেই। কিন্তু থেমে গেছে কুনু। চাঞ্চল্য নেই বললেই চলে এখানে। শোকে মুহ্যমান এখানকার মানুষগুলো। মুখে রা নেই তাদের। কথা যতটুকু চলছে তা ম্যান্ডেলাকে ঘিরেই। পেশায় মেষপালক অ্যালবার্ট জোকওয়েনি যেমন বললেন, 'আমাদের পূর্বপুরুষরাই তাকে পাঠিয়েছিলেন। সেই তাদেরই কাছে ফিরলেন মাদিবা।'

মাদিবার শেষকৃত্যে রাষ্ট্রপতি : বর্ণবাদবিরোধী কিংবদন্তি নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবান যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। আগামীকাল জোহানেসবার্গের উপকণ্ঠে ৯৫ হাজার আসনের একটি স্টেডিয়ামে এই মহান নেতার মৃত্যুতে জাতীয় শোক অনুষ্ঠান পালন করা হবে। শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে ১৫ ডিসেম্বর। তাতে বিশ্বনেতাদের যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ফার্স্টলেডি মিশেল ওবামা শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। এর পর পূর্ব কেপটাউনের কুনু গ্রামে ম্যান্ডেলাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হবে। ১১ ডিসেম্বর থেকে প্রিটোরিয়ায় তিন দিনের জন্য ম্যান্ডেলার মরদেহ রাখা হবে বলে জানিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থা এসএবিসি। মৃত্যুর পর ম্যান্ডেলার মরদেহ প্রিটোরিয়ার একটি সেনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকার স্থানীয় সময় রাত ৮টা ৫০ মিনিটে জোহানেসবার্গের নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ম্যান্ডেলা। তার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। ১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই ওই গ্রামে জন্মেছিলেন তিনি। বঙ্গভবন সূত্র জানায়, আজ রাষ্ট্রপতি ডারবানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন। সেখানে ম্যান্ডেলার শেষকৃত্যের একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি দেশে ফিরবেন।

 

 

সর্বশেষ খবর