শিরোনাম
সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা

পদত্যাগপত্র এরশাদের হাতে

পদত্যাগপত্র এরশাদের হাতে

'সর্বদলীয় সরকারে' জাতীয় পার্টির চার মন্ত্রী, দুই প্রতিমন্ত্রী এবং মন্ত্রী পদমর্যায় প্রধানমন্ত্রীর এক উপদেষ্টার পদত্যাগপত্র এখন পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাতে। যে কোনো সময় এসব পদত্যাগপত্রগুলো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ডাকযোগে পৌঁছবে। জানা যায়, এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে পার্টির চেয়ারম্যান পদত্যাগপত্রগুলো ডাকযোগে পাঠানোর জন্য পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের কাছে দিয়েছেন। কিন্তু সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গতকালও পদত্যাগপত্রগুলো ডাকযোগে পাঠানো হয়নি। আজ পাঠাতে পারেন। এ ছাড়া আরেক অপশন রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া। কিন্তু রাষ্ট্রপতিও আজ চলে যাচ্ছেন দেশের বাইরে। এদিকে গতকাল দিনভর পার্টির মহাসচিব, বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার সরাসরি পদত্যাগপত্রগুলো প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের সাড়া না পাওয়ায় ডাকযোগে এসব পদত্যাগপত্র পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গতকাল ভোরে সাংবাদিকদের এইচ এম এরশাদ বলেছেন, জাফর কোটি টাকা, গাড়ি ও উপদেষ্টা পদ চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। শুনেছি কাজী জাফর চিনি জাফর নামে পরিচিত।

পদত্যাগপত্র এরশাদের হাতে : পার্টির প্রেসিডিয়ামের সদস্য চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক মুখপাত্র কাজী ফিরোজ রশীদ দুপুর সোয়া একটার দিকে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সর্বদলীয় সরকারে জাতীয় পার্টির মন্ত্রী রওশন এরশাদ, জিএম কাদের, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, মজিবুল হক চুন্নু, সালমা ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা জিয়াউদ্দিন বাবলুর পদত্যাগপত্র দলের চেয়ারম্যানের হাতে রয়েছে।

সরকারের টাকা-গাড়ি চেয়েছিলেন জাফর : হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, কাজী জাফর শর্তসাপেক্ষে নির্বাচনে যেতে চেয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে ১ কোটি টাকা ও ১টি গাড়ি চেয়েছিলেন। এমনকি কাজী জাফর প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার পদও চেয়েছিলেন। কিন্তু দাবি পূরণ না হওয়াতে সে এখন উল্টাপাল্টা কথা বলছেন। সাবেক এ রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রধান সমস্যা শেখ হাসিনা। তার অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। যদি রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব নেয় বিএনপিকে নির্বাচনে ফেরাতে রাজি করাতে পারে, আমিও করব। তিনি বলেন, সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হবে। তাই তারা একতরফা নির্বাচনের চেষ্টা করছে। শুনেছি এরই মধ্যে তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৭০টি আসনে জয়লাভ করেছে। খালি মাঠে গোল দেওয়া কি মেনে নেওয়া যায়? সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এরশাদ বলেন, দেশে জরুরি অবস্থা জারি করলে কোনো লাভ হবে না। কাজী জাফরকে ফিরিয়ে আনব না। এ সময় নেতা-কর্মীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আবদুস সবুর আসুদ, যুগ্ম-মহাসচিব নুরুল ইসলাম নুরু, জাতীয় ছাত্র সমাজের যুগ্ম-আহ্বায়ক ফয়সাল প্রমুখ।

ডাকযোগে পদত্যাগপত্র : জাপা মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার পার্টির চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গতকালও সময়সূচি না পাওয়ায় জাতীয় পার্টির মন্ত্রী-উপদেষ্টারা ডাকযোগে তাদের পদত্যাগপত্র পাঠাবে। দুপুরে এরশাদের বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসভবনে সাংবাদিকদের বলেন, পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার উদ্দেশে একাধিকবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সেখান থেকে কোনো সাড়া পাননি। তাই দলের মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের পদত্যাগপত্র ডাকযোগে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ সময় জি এম কাদের বলেন, আজ থেকে আমরা সর্বদলীয় সরকার থেকে আমাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। জাপা মহাসচিব বলেছিলেন, আজকের (গতকাল) মধ্যেই মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছে যাবে। এর আগে সকালে জানানো হয়েছিল পাঁচ মন্ত্রীর পদত্যাগপত্র প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেওয়া হবে। দুপুরের পর ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জিয়াউদ্দিন বাবলু পদত্যাগপত্র দলীয় প্রধানের কাছে পাঠান। এরপরই মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের পদত্যাগপত্র ডাকযোগে জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। শনিবারও জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সময় না দেওয়ায় তা জমা দেওয়া যায়নি। রুহুল আমিন হাওলাদার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের জানান, নিজেকে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রী হিসেবে মনে করছেন না। একইসঙ্গে তিনি মন্ত্রী হিসেবে সরকারের যেসব সুযোগ-সুবিধা পান সেগুলো প্রত্যাহারের কথাও জানান। তিনি আরও জানান, আমি এখন থেকে আর কোনো রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করব না। সাংবাদিকদের প্রশ্ন করেন, আপনারা আমাদের আর কি কি পদত্যাগ চান?

এরশাদের বাসভবনে কাঁটাতারের ব্যারিকেড : এইচ এম এরশাদের বাসভবন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গড়ে তুলছে কাঁটাতারের ব্যারিকেড। গতকাল বিকাল পৌনে ৪টায় ব্যারিকেড গড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ব্যাপারে গুলশান থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, বাড়তি নিরাপত্তার জন্য ব্যারিকেড বসানো হচ্ছে। এদিকে, দুপুর থেকে একের পর এক নেতা-কর্মীকে বাসভবন থেকে সরিয়ে দিচ্ছে পুলিশ। এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের মাঝে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।

অবশেষে আনিস-বাবলুর পদত্যাগপত্র : জানা যায়, এইচ এম এরশাদ দলের মন্ত্রী, উপদেষ্টাদের পদত্যাগপত্র তার কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পরপরই জিএম কাদের, রুহুল আমিন হাওলাদার, মজিবুল হক চুন্নু ও সালমা ইসলাম পদত্যাগপত্র পার্টির চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেন। কিন্তু বেঁকে বসেন রওশন এরশাদ, আনিসুল ইসলাম ও জিয়াউদ্দিন বাবলু। একাধিকবার পদত্যাগপত্রে আনিস-বাবলুর স্বাক্ষর নেওয়ার জন্য পার্টির রেজাউল ইসলাম ভূইয়াকে পাঠান এরশাদ। কিন্তু তারা স্বাক্ষর না করায় বারবার ফিরে আসেন রেজাউল। সূত্র জানায়, গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করার পর গতকাল পৌনে ১টায় পার্টির যুগ্ম-মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূইয়া এ দুই প্রেসিডিয়াম সদস্যের পদত্যাগপত্র নিয়ে এরশাদের বাসভবনে আসেন।

সরব প্রেসিডেন্ট পার্ক : ৩ ডিসেম্বর দুপুরে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেন এরশাদ। পরপরই ২৬ ঘণ্টার জন্য অনেকটা আত্দগোপনে চলে যান এরশাদ। ৪ ডিসেম্বর বিকালে বাসভবনে ফিরেন এরশাদ। ওইদিন থেকে প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসভবনে অবস্থান করছেন সংবাদকর্মী, পার্টির নেতা-কর্মী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ভোর ৫টা ৫৫ মিনিটে এরশাদ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন। এরপর সারাদিন সংবাদকর্মীরা পার্টির নীতিনির্ধারকদের কাছে খুঁজেছেন নানান প্রশ্নের জবাব।

 

 

সর্বশেষ খবর