রবিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৪ ০০:০০ টা

সরকারি পদক্ষেপ দেখেই নতুন বিনিয়োগে যাবেন ব্যবসায়ীরা

সরকারি পদক্ষেপ দেখেই নতুন বিনিয়োগে যাবেন ব্যবসায়ীরা

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার শপথ নিলেও এখনই বিনিয়োগে যাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। রাজনৈতিক সংকটের কারণে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তারা সরকারের নতুন পদক্ষেপ দেখে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পে নতুন বিনিয়োগে যাবেন। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুষ্ঠু পরিসমাপ্তি ঘটলে ঋণমানের সন্তোষজনক ধারা অক্ষুণ্ন রাখা মোটেই অসম্ভব নয়। বাংলাদেশের ঋণমানের ভালো অবস্থার কারণে বৈদেশিক বাণিজ্যে অর্থায়ন ও লেনদেনের ভারসাম্যে ঝুঁকি হ্রাস, উন্নয়নের জন্য পুঁজির প্রাপ্তি সহজতর হওয়া, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি এবং সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। 
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১৩ সালে আমদানি, রপ্তানি, রেমিট্যান্স, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়লেও দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরে গত চার অর্থবছরের গড় প্রবৃদ্ধি পুরোপুরি অর্জন করা সম্ভব হবে কিনা সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে। যদিও ২০১২-১৩ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। তবে সমাজে ও রাজনীতিতে শান্তি ফিরে এলে অর্থনীতির সূচকগুলোতে বড় ধরনের উল্লম্ফন ঘটবে বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 
দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পে ব্যবসায়ীদের নতুন ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, নতুন সরকার এখন দেশে কেমন ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করবে, তার ওপর নির্ভর করছে আমাদের নতুন বিনিয়োগ। ব্যবসায়ীরা অবশ্যই নতুন বিনিয়োগ করবেন। বাংলাদেশ রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ২০১৩ সাল ছিল রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য ঘটনাবহুল। একের পর একেকটি বিপদ গেছে রপ্তানি শিল্পে। তাজরীনে আগুন, রানা প্লাজা ধস ও স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টে আগুনের ঘটনায় তৈরি পোশাকশিল্প ভয়াবহ বিপদে পড়ে। বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে বাংলাদেশ পড়েছে কঠিন চ্যালেঞ্জে। এ অবস্থায় দেশে এখন ভালো স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে নতুন বিনিয়োগ এমনিতেই চলে আসবে। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি জাহাঙ্গীর আলামিন বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার মুখে টেক্সটাইল খাত থেকে গত বছর ২৩০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়েছিল। এখন পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে নতুন করে বিনিয়োগ শুরু হবে। তবে এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের নীতি সহায়তা দিতে হবে। আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী তানভিরুল হক প্রবাল বলেন, আবাসন ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ নিয়ে এখন চুপচাপ আছেন। জমি ও ফ্ল্যাট বিক্রি নেই। তবে আগামী এক মাসে সরকার কি পদক্ষেপ নেয়, তার ওপর নির্ভর করছে ব্যবসায়ীরা নতুন বিনিয়োগ কতটুকু করবেন। মূলত সরকারের পদক্ষেপ দেখে নতুন বিনিয়োগে যাব। বাংলাদেশ কাঁচা চামড়া সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী দেলোয়ার হোসেন বলেন, হরতাল- অবরোধের কারণে চামড়া পণ্য সরবরাহ ব্যাপক বাধাগ্রস্ত হওয়াতে এ শিল্পে ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে। রপ্তানিতে সমস্যা হয়েছে। এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সরকারি প্রণোদনা পেলেই চামড়া শিল্পের ব্যবসায়ীরা নতুন বিনিয়োগে নামবেন। 
সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে কৃষি ও শিল্প খাতের উপকরণ ও পণ্যাদির স্বাভাবিক চলাচল বিঘি্নত হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এতে স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে। এ অস্বাভাবিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। কৃষি ও শিল্প খাতের উপকরণ ও পণ্যাদির স্বাভাবিক চলাচল বিঘ্নিত হয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যেন বিরূপ প্রভাব না পড়ে সে জন্য সরকারকে দৃষ্টি রাখতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর