শুক্রবার, ১৪ মার্চ, ২০১৪ ০০:০০ টা

সুন্দরবন নিয়ন্ত্রণে ১২ ডাকাত দল

গোটা সুন্দরবন উপকূলে সক্রিয় ছোট-বড় প্রায় ১২টি ডাকাত দল। দলগুলোর হাতে অত্যাধুনিকসহ ২০০ বেশি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। আছে পর্যাপ্ত গুলি ও কার্তুজ। আছে নদীপথে দ্রুত চলাচলের স্পিডবোট, উচ্চক্ষমতার ইঞ্জিনচালিত ট্রলার ও নৌকা। এগুলোর সদস্যসংখ্যাও তিন শতাধিক। এই ডাকাত দলগুলো পূর্ব ও পশ্চিম বন বিভাগের বিভিন্ন এলাকা ভাগাভাগি করে নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের মূল কাজ সুন্দরবন ও সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলে এবং বনজ সম্পদ আহরণে থাকা বাওয়ালি ও মৌয়ালদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করা। মুক্তিপণ আদায়ও তাদের আরেকটি আয়ের উৎস।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে র‌্যাব, কোস্টগার্ড ও পুলিশের কার্যকর অভিযানে বন্দুকযুদ্ধে ২১ জন ডাকাত নেতা মারা গেছে। ফলে ডাকাতদের অত্যাচার কিছুটা কমেছে বলে জেলেদের সূত্রে জানা গেছে। জানা যায়, দুর্ধর্ষ রাজু বাহিনীর প্রধান রাজু ক্রসফায়ারের ভয়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গেছে। এই বাহিনীর অপর দুই নেতা জাহাঙ্গীর ও ছোট জাহাঙ্গীর পৃথক দুটি বাহিনী গঠন করে ডাকাতি করছে। এ ছাড়া আলম বাহিনী, শান্ত বাহিনী, নমির বাহিনী, সমীর বাহিনী, মাইঝে বাহিনী গোটা সুন্দরবনে ডাকাতি করছে। সুন্দরবনের ডাকাত দলগুলো খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলার রাজনৈতিক দলগুলোর কিছু নেতার পরোক্ষ সহায়তা পেয়ে থাকে। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে তাদের সহায়তা গ্রহণ করে তারা। আর এ সহায়তার জন্য তারা ওই সব রাজনৈতিক নেতাকে ডাকাতির একটি অংশ প্রদান করে থাকে। সম্প্রতি এসব ডাকাত দল সুন্দরবনের বনজ সম্পদ ও বন্যপ্রাণী পাচারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। যুক্ত হয়েছে অস্ত্র চোরাচালানের সঙ্গে। একাধিক সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে অস্ত্র চোরাচালান গ্রুপগুলো ডাকাতদের সহায়তায় সুন্দরবনের নদীপথের রুটগুলো ব্যবহার করছে। এ ছাড়া সুন্দরবনের সক্রিয় ডাকাত দলগুলোর সঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মাওবাদীদের ও ইসলামী জঙ্গিদের যোগাযোগ থাকার অভিযোগ উঠেছে। দুবলার ফিশারম্যান গ্রুপের প্রধান উপদেষ্টা ও সুন্দরবন বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) জিয়া উদ্দিন গত বছর বাগেরহাট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ডাকাত দলগুলো জেলেদের অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, চাঁদাবাজি ও বন্যপ্রাণী পাচারের মাধ্যমে গোটা সুন্দরবন থেকে মৌসুমে শতকোটি টাকা আয় করে থাকে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সুন্দরবন বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, বন বিভাগের কাছে যেসব আগ্নেয়াস্ত্র আছে, এর তুলনায় ডাকাত দলগুলোর হাতে আধুনিক ও অনেক বেশি আগ্নেয়াস্ত্র আছে। ফলে অনেক সময় ডাকাতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হয়। সূত্রগুলো জানায়, যখন সুন্দরবনে ডাকাতবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হয়, তখন ডাকাতরা তাদের আগ্নেয়াস্ত্রগুলো বনের গহিনে থাকা টহল ফাঁড়িগুলোতে লুকিয়ে রাখে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে কিছুই করার থাকে না বনকর্মীদের।

 

সর্বশেষ খবর