শুক্রবার, ১৪ মার্চ, ২০১৪ ০০:০০ টা

কাল ৮১ উপজেলায় ভোট মাঠে সেনাবাহিনী

বিএনপির ৪৯ নেতা বহিষ্কার

তৃতীয় ধাপের ৪১ জেলার ৮১ উপজেলায় ভোটগ্রহণ কাল শনিবার। নির্বাচনকে সামনে রেখে ৮১ উপজেলায় মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। গতকাল থেকেই ৫ দিনের জন্য স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে টহলে থাকছেন তারা। এ ছাড়া গতকাল মধ্যরাতেই শেষ হয়েছে মিছিল-মিটিংসহ সব ধরনের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে ব্যাপকভাবে কালোটাকা ছড়ানোর অভিযোগ এসেছে ইসির কাছে। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। এ ধাপেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী বহাল থাকায় সহিংসতার আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্টরা। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের চেয়ে বেশি সহিংসতা হতে পারে বলেও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইসিকে জানিয়েছে।

আজ সকাল থেকেই ভোটকেন্দ্রে যাবে নির্বাচন সামগ্রী। কাল শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে টানা ভোটগ্রহণ। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট হবে কাল। এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ১ হাজার ১১৯ জন প্রার্থী। নির্বাচনে সহিংসতা এড়াতে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে রয়েছে সেনাবাহিনী। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যও এসব এলাকায় টহল দেবে। ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন উপজেলা পরিষদের এ নির্বাচন দলীয় ব্যানারে না হলেও দলীয় প্রভাব রয়েছে সবখানেই। আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের পছন্দমতো প্রার্থী দিয়েছে। ভোটগ্রহণ উপলক্ষে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে ইসি। ইসি সচিবালয়ে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হাফিজ বলেছেন, তৃতীয় পর্যায়ের নির্বাচন আরও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে কমিশন। তিনি বলেন, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আরও কঠোর হতে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও প্রিসাইডিং অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছি।

প্রচার-প্রচারণা বন্ধ : গতকাল মধ্যরাতেই বন্ধ হয়েছে মিছিল-মিটিংসহ সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা। নির্বাচনকে ঘিরে বিরাজ করছে জাতীয় নির্বাচনের আমেজ। নির্বাচন কমিশন তৃতীয় দফায় ৮৩ উপজেলার তফসিল ঘোষণা করলেও আগামী ১৫ মার্চ ভোট হবে ৮১ উপজেলায়। সহিংসতার কারণে গাজীপুরের শ্রীপুর ও আদালতের নির্দেশে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।

মাঠে সেনা, র‌্যাব, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

সুষ্ঠু অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে গতকাল থেকে ৮১ উপজেলায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে রয়েছে সেনাবাহিনী। নির্বাচনের আগে ও পরে মিলিয়ে মোট পাঁচ দিন তারা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবে। প্রতি উপজেলায় ১ প্লাটুন করে সেনাবাহিনীর সদস্য টহল দিচ্ছেন।

কালোটাকার ছড়াছড়ি : তৃতীয় ধাপের ৮১ উপজেলা নির্বাচনে কালোটাকার ছাড়াছড়ির অভিযোগের শেষ নেই। প্রতিনিয়ত ইসিতে কালোটাকা ছড়ানোর নানা অভিযোগ আসছে। এ ছাড়া নির্বাচনে প্রভাবশালী চেয়ারম্যান প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের হাজারও অভিযোগ আছে নির্বাচন কমিশনে। এমনকি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পক্ষে মাঠ প্রশাসনও কাজ করছে বলে কমিশনে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির ৪৯ নেতা বহিষ্কার : উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়াসহ নানা অভিযোগে গতকাল আরও ১৩ জনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। একইসঙ্গে তিন নেতাকে কারণ দর্শাও নোটিসও দেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করা ও দলের স্বার্থবিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। এ নিয়ে তৃতীয় ধাপে এ পর্যন্ত বহিষ্কারের সংখ্যা দাঁড়াল ৪৯। বিএনপির দফতর সম্পাদক রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে গতকাল পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ বহিষ্কারের তথ্য জানানো হয়। এর আগে ৩৬ জনকে বহিষ্কার করা হয়। গতকাল বহিষ্কার হওয়া নেতারা হলেন, ময়মনসিংহ উত্তর জেলার পুরাকাণ্ডলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আজিজুল হক, ধোবাউড়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম বাবুল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক রোকনুজ্জামান রুবেল, জেলা যুবদল সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক শামসু, বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ হুমায়ুন, সহ-সভাপতি আসাদ মাহমুদ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলাধীন বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির সদস্য শফিকুল ইসলাম শাহীন, কিশোরগঞ্জ জেলাধীন কিশোরগঞ্জ পৌর বিএনপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ক্যাপ্টেন (অব.) সালাহউদ্দিন আহমেদ সেলু, রাজশাহী জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডি এম জিয়াউর রহমান, ঝালকাঠি জেলার সদর উপজেলা যুবদল সভাপতি মো. শওকত হোসেন খোকন, জেলা যুবদল সদস্য মো. শহীদুল ইসলাম, জেলা বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মো. আবদুল জলিল মিয়াজী ও কাঁঠালিয়া উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মো. জালাল আকন। এছাড়া বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এম ইকবাল হোসাইন, পটুয়াখালী জেলাধীন দুমকি উপজেলা মুরাদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জাকির হোসেন মঞ্জু এবং বাগেরহাট জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শেখ কামরুল ইসলাম গোরাকে কারণ দর্শাও নোটিস দেওয়া হয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর