শুক্রবার, ১৪ মার্চ, ২০১৪ ০০:০০ টা

টি-২০ বিশ্বকাপের বর্ণিল উদ্বোধন

টি-২০ বিশ্বকাপের বর্ণিল উদ্বোধন

ঘড়ির কাঁটায় তখন সাতটা ছুঁয়েছে। সবার অপেক্ষা বিশ্বখ্যাত সুরকার, সংগীতশিল্পী এ আর রহমানের গান শোনার। সবাই যখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন অস্কারজয়ী শিল্পীর গান শোনার, তখনই টি-২০ বিশ্বকাপের উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টুর্নামেন্টের উদ্বোধন ঘোষণার পরপরই আলো নিভে যায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের। তবে গ্যালারিতে বসে থাকা দর্শকের হাতে থাকা লাল-নীল লাইটে আলো-আঁধারির খেলা যখন চলছিল, তখন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের  রাতের আকাশ আলোয় আলোকিত হয়ে উঠে আতশবাজির রোশনাইয়ে। আনন্দে মেতে উঠেন দর্শকরা। শেষ পর্যন্ত সবকিছু ম্লান হয়ে যায় এ আর রহমানের সুরের মূর্ছনায়। মোহাবিষ্ট, মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন মাঠে উপস্থিত হাজার হাজার দর্শক। অস্কারজয়ী এ আর রহমান কখনো নিজে গেয়ে, কখনো নিজের কম্পোজিশন করা গানে মাতিয়ে তুলেন ঢাকাকে। ক্রিকেটপাগল জাতির মধ্যে উম্মাদনার সৃষ্টি করেন টি-২০ বিশ্বকাপের।
১৬ মার্চ শুরু আইসিসির সবচেয়ে বড় ইভেন্ট টি-২০ বিশ্বকাপ। তার আগে দেশের ১৬ কোটি ক্রিকেটভক্তকে ক্রিকেটমুখী করতে ক্রিকেট বোর্ড আয়োজন করে এই ‘বিসিবি সেলিব্রেশন কনসার্ট’। সুর, তার, লয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়েছে এই কনসার্ট। আনন্দে মাতিয়েছে সংগীতপিয়াসীদের।
কনসার্ট শুরু হয় বিকাল ৪টা ৫৫ মিনিটে। সঞ্চালক মুনমুন অন্ষ্ঠুান সুচনার ঘোষণা দেওয়ার পরপরই স্টেজে তিনটি গান পরিবেশন করেন অর্ণব। এরপর গান গায় সোলস এবং এলআরবি। দেশের সেরা তিন শিল্পী অর্ণব, পার্থ বড়–য়া ও আইয়ুব বাচ্চু গানের পর মাগরিবের নামাজের জন্য ১০ মিনিটের বিরতি ।  নামাজের পর ছায়ানট শিল্পীগোষ্ঠী জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে লাল-সবুজ শাড়ি পরে, ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি...’। পুরো স্টেডিয়াম দাঁড়িয়ে সমস্বরে জাতীয় সংগীত গায়। অদ্ভুত পরিবেশ তখন স্টেডিয়ামের! স্বাধীনতার মাসে এক সঙ্গে হাজার হাজার বাঙালি জাতীয় সংগীত গাইছেন! ভাবতেই শরীরে কাঁটা দিয়ে ওঠে। জাতীয় সংগীতের পর, পরিবেশিত হয় বিসিবির স্বাগত সংগীত এবং টি-২০ বিশ্বকাপের থিম সং।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন ঘোষণার পর ৭ টা ২৬ মিনিটে স্টেজে উঠেন বিশ্ববিখ্যাত সুরকার, দুটি অস্কার, দুটি গ্রামি অ্যাওয়ার্ড, ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ও ১৫টি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড জয়ী এ আর রহমান। প্রায় পৌনে তিন ঘণ্টার স্টেজ পারফরম্যান্সে তিনি পরিবেশন করেন ২৮টি গান। শুরু করেন যুবা সিনেমার জনপ্রিয় গান ‘ফানা’ দিয়ে। এরপর পরিবেশন করেন আলোচিত লাগান সিনেমার ‘চালে চালো’ গানটি। এই দুটি গান নিজে গান এ আর রহমান। এরপর তার সুরে একে একে গান করেন উদিত নারায়ণ, শ্বেতা পন্ডিত, নীতি মোহান, জাভেদ আলী। এ আর রহমানের এক একটি গান হিন্দোলের সৃষ্টি করেছে স্টেডিয়ামের উপস্থিত সংগীতভক্তদের মধ্যে। তার সুরে পুরো স্টেডিয়াম এতটাই মোহাবিষ্ট, মোহাচ্ছন্ন ছিল যে, কখন পৌনে তিন ঘণ্টা পার হয়েছে, কেউ  টেরই পাননি। বরং মুগ্ধতার মায়াজালে আবিষ্ট ছিলেন সবাই। কখনও পাগড়ি-শেরওয়ানী, কখনো সাফারি পরে সংগীতভক্তদের জাদু করে রাখা এ আর রহমান শেষ বেলায় মাতিয়ে দেন দুটি তুমুল জনপ্রিয় গান গেয়ে। এ আর রহমান শেষ দুটি গান ‘হাম্মা, হাম্মা’ এবং ‘জয় হো’।
এ আর রহমানের সুরের মূর্ছনা শেষ হয়নি তখনও, বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের আকাশে-বাতাস তখনও তার সুরের ছন্দে দোলায়িত। আর তখনই স্টেজে আসেন হালের তুমুল জনপ্রিয় শিল্পী সেনেগালিজ-আমেরিকান ‘হিপ-হপ’ শিল্পী অ্যাকন। স্টেজেই উঠেই মাতিয়ে তুলেন গান, নাচের অদ্ভুত পরিবেশনায়। পশ্চিমা মিউজিকের সঙ্গে বাঙালিকে নতুন করে পরিচিত করেন অ্যাকন। এরপর দেশের দুই প্রখ্যাত শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন ও রুনা লায়লার পাশাপাশি কুমার বিশ্বজিত এবং মমতাজ সংগীতে পরিবেশন করেন ।

 

সর্বশেষ খবর