শুক্রবার, ১৪ মার্চ, ২০১৪ ০০:০০ টা

বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিতে বেশি ব্যয় বাড়বে মধ্যবিত্তের

অধ্যাপক ম তামিম

বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিতে বেশি ব্যয় বাড়বে মধ্যবিত্তের

বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির ফলে সামগ্রিকভাবে পণ্যের ক্রয়মূল্য বেড়ে গেলেও জীবনযাপনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যয় বাড়বে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সাবেক জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ম তামিম এ কথা বলেন। তিনি বলেন, স্বাধীন ক্ষমতা থাকার কথা থাকলেও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) সরকারের প্রভাবমুক্ত নয়। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় ম তামিম গতকাল এসব কথা বলেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সাবেক জ্বালানিবিষয়ক এ বিশেষ সহকারী বলেন, সরকার গ্রাহকদের মধ্যে যারা ১ থেকে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন তাদের এবং কৃষিতে এবার মূল্য বৃদ্ধি করেনি, যা একটি ইতিবাচক উদ্যোগ। আমি মনে করি এ দুই শ্রেণীর গ্রাহকদের ক্ষেত্রে মূল্য অপরিবর্তিত রয়েছে কেবল রাজনৈতিক ও সংগঠনগুলোর চাপের কারণে। ম তামিম বলেন, এ মূল্য বৃদ্ধির ফলে সবচেয়ে বেশি টাকা পরিশোধ করতে হবে ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত যারা বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন তাদের। অথচ এ পরিমাণ ইউনিট সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেন মধ্যবিত্ত শ্রেণী। কিন্তু বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে এ পরিমাণ ইউনিট ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করার বার্তা দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ মধ্যবিত্ত গ্রাহকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে ৩০০ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে। মূল্য বৃদ্ধির ফলে বিদ্যুৎভিত্তিক বিভিন্ন পণ্যের দামও বাড়বে। ফলে সীমিত আয়ের মানুষের জীবনের ব্যয়ভার বেড়ে যাবে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর খরচ বাড়বে সবচেয়ে বেশি। আর সামগ্রিকভাবে এর প্রভাব পড়বে অর্থনীতির ওপর। অন্যদিকে ধনীরা যে পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন, বিল পরিশোধ করছেন এর চেয়ে বেশি। অর্থাৎ ধনীরা বিদ্যুতের উৎপাদন খরচের চেয়ে বেশি দাম পরিশোধ করছেন। আর এর মাধ্যমে 'ক্রস সাবসিডি' করা হচ্ছে। বাকি ভর্তুকি সরকার সরাসরি নিজেই পরিশোধ করছে। ম তামিম বলেন, 'এবার আমি অবাক হয়েছি যে, বিদ্যুৎ বিতরণী সংস্থাগুলো ১০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ২৩ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। কিন্তু বিইআরসির টেকনিক্যাল কমিটি তা ৩ থেকে প্রায় ৭ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করে। কিন্তু সবশেষে বিইআরসি প্রয়োজন না হলেও সব কোম্পানির জন্য গড়ে প্রায় ৭ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়। আমি মনে করি, যাতে আগামী এক বছরের মধ্যে মূল্য বৃদ্ধি করতে না হয় সে কারণেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কিন্তু আশঙ্কার বিষয়, বিইআরসির কাছে পেট্রোবাংলা গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির জন্য একটি প্রস্তাব আগেই দিয়ে রেখেছে। সে ক্ষেত্রে হয়তো শীঘ্রই গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির গণশুনানি শুরু হওয়ার আশঙ্কা আছে। আর এমনটা হলে গ্যাস থেকে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ ইউনিটপ্রতি অনেক বেড়ে যাবে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য বৃদ্ধি হলেও বিদ্যুতের মূল্য বাড়তে পারে। আর এর যে কোনো একটি হলেই আগামী এক বছরের আগে আবারও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। ম তামিম বলেন, বিইআরসি সরকারের প্রভাবমুক্ত নয়। সরকারের মন্ত্রীরা এ নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির জন্য দাবি জানাতে পারেন। কিন্তু মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিতে পারে শুধু বিইআরসি। কিন্তু উন্নয়নশীল অন্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশের এ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটিও সরকারি প্রভাবের বাইরে যেতে পারছে না। বুয়েটের এ অধ্যাপক বলেন, 'আমদানিকৃত কয়লার মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আরও পাঁচ থেকে ছয় বছর লাগবে। এ সময়ে তেলভিত্তিক প্রকল্পগুলোর প্রতিই আমাদের নির্ভর করতে হবে। আর কম দামে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা পেতে হলে আমাদের সাশ্রয়ী মূল্যে প্রাথমিক জ্বালানির ব্যবস্থা করতে হবে।'

 

সর্বশেষ খবর