সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৪ ০০:০০ টা

সিরাজগঞ্জে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২

সিরাজগঞ্জে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া স্টেশনে 'লালমনি' এবং 'একতা' আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুজন নিহত ও কমপক্ষে ৪০ জন আহত হয়েছেন। ভুল সিগন্যালের কারণে শনিবার গভীররাতে উল্লাপাড়া রেলওয়ে স্টেশনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- নাটোর সদর উপজেলার হরিশপুর গ্রামের আলতাফ হোসেন (৩৫) ও লালমনিরহাটের আদিতমারী স্টেশন মাস্টার মজিবুর রহমান (৪৫)। সংবাদ পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৪টি ইউনিট, র‌্যাব-পুলিশ ঘটনাস্থলে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছে। এ ঘটনার পর উত্তরাঞ্চল-ঢাকা রুটের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ৯ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। জেলা প্রশাসক মো. বিল্লাল হোসেন ও পুলিশ সুপার এস এমরান হোসেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার শফিউল আলমসহ পশ্চিমাঞ্চল রেল বিভাগ, পাকশীর ঊর্ধ্বতন ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। দুর্ঘটনার পর উল্লাপাড়া স্টেশন মাস্টার খান মনিরুজ্জামান ও সহকারী স্টেশন মাস্টার কুতুবুদ্দিন এবং সিগন্যালম্যান পলাতক রয়েছেন। অন্যদিকে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত এবং ঘটনা তদন্তে চারটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

লালমনি এক্সপ্রেসের গার্ড হুমায়ুন আহমেদ জানান, লালমনিহাট থেকে ঢাকাগামী লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনটি ১ নম্বর লাইনে সিগন্যাল পেয়ে চলতে শুরু করে। এ সময় ঢাকা থেকে দিনাজপুরগামী একতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি রেল লাইনে দ্রুত ঢুকে পড়লে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে একতা এক্সপ্রেসের একটি বগি ট্রেনের ইঞ্জিনে ওঠে যায়। তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এ সময় লালমনি এক্সপ্রেসের গাডব্রেক রুমে থাকা পাঁচজন ও একতা এক্সপ্রেসের পাওয়ার কারে থাকা অনন্ত সাত যাত্রী আহত হন। এদের গার্ড ব্রেক রুমে থাকা লালমনিরহাটের আদিতমারি স্টেশন মাস্টার মজিবুর রহমান (৪৫) মারা যান এবং তার দুই ছেলেসহ তিনজন আহত হন। একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের পাওয়ার কারের সামনে সিটে বসে থাকা আলতাফ হোসেন মারা যান এবং তার শ্বশুরসহ অন্তত ছয়জন আহত হন। দ্রুত নামার সময় প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে অনন্ত ৩০ জন আহত হন। মূলত, ভুল সিগন্যালের কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। উল্লাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাজুল হুদা জানান, ২টি ইঞ্জিন ও ২টি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। পাবনা ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক সাইদুল ইসলাম জানান, ফায়ার সার্ভিসের ৪টি টিম দুজনকে নিহত ও ১২ জনকে গুরুত্বর আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছে। দুর্ঘটনার জন্য তিনি সিগন্যালম্যান ও স্টেশন মাস্টারসহ কর্তব্যরতদের অবহেলাকে দায়ী করেছেন। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) আবদুল আউয়াল ভুইয়া জানান, সকাল সাড়ে ১১টার পর থেকে উত্তরাঞ্চল-ঢাকা রেল চলাচল শুরু হয়। দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ট্রেনের দুই চালক ও সহকারী স্টেশন মাস্টারকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এরা হলেন- একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের চালক বঙ্কিম চন্দ্র রায়, তার সহকারী আবদুস শাফি এবং উল্লাপাড়া স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার নুর কুতুব। রেলের সচিব আবুল কালাম আজাদ জানান, প্রাথমিকভাবে দায়িত্ব অবহেলার কারণে তিনজনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এদিকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) আবদুল আউয়াল ভুইয়া জানান, রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে রেলওয়ে বিভাগের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আমজাদ হোসেনকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়। এ কমিটিকে চার দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল রেলের পক্ষ থেকে রেলের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট মিয়া জাহানকে প্রধান করে চার সদস্যের টিমকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে, পশ্চিমাঞ্চল রেলের ডিভিশনাল ট্রাফিক অথরিটি শফিকুর রহমানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের টিমকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শফিকুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর