শনিবার, ১৭ মে, ২০১৪ ০০:০০ টা

গ্রেফতারের চিঠি নারায়ণগঞ্জে

গ্রেফতারের চিঠি নারায়ণগঞ্জে

নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনায় র‌্যাবের দুই কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের নির্দেশনা-সংক্রান্ত চিঠি এখন নারায়ণগঞ্জ পুলিশের হাতে। গত বৃহস্পতিবার রাতে এ চিঠি পেলেও এখনো সেই নির্দেশনা কার্যকর করতে পারেনি পুলিশ। তবে আজ তাদের গ্রেফতারের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে বলে পুলিশ সদর দফতরের একটি সূত্র জানিয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেছেন, হাইকোর্টের আদেশ পালনে আমরা অবিরাম চেষ্টা করে যাচ্ছি। অপেক্ষা করুন। পুলিশ সদর দফতর সূত্র বলেছে, র‌্যাবের সাবেক দুই কর্মকর্তাকে গ্রেফতারে পুলিশের প্রস্তুতি রয়েছে। যে কোনো সময় তাদের গ্রেফতার অভিযান শুরু হবে। নারায়ণগঞ্জ পুলিশ ছাড়াও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশেরও রয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। র‌্যাবের দুই কর্মকর্তাকে গ্রেফতারে কিছু জটিলতা থেকে যাওয়ায় কাজটি করতে বিলম্ব হচ্ছে। এ ছাড়া গ্রেফতারের পর কোথায় রাখা হবে, তা গতরাত পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। সূত্র জানিয়েছে, এমন একটি সময়ে তাদের গ্রেফতার করা হবে, যেন তাদের সরাসরি নারায়ণগঞ্জ আদালতে হাজির করানো যায়। নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখেই এমন চিন্তা-ভাবনা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের। গ্রেফতারের পর রাতে ভিন্ন কোনো স্থানে রাখার পক্ষে নন তারা। সূত্র জানায়, র‌্যাবের দুই কর্মকর্তাকে ফৌজদারি আইনে গ্রেফতারের অনুমতি পাওয়া গেলেও নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ও নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পের সাবেক প্রধান লে. কমান্ডার এম এম রানার বিষয়ে এখনো কোনো চিঠি পায়নি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাই এই কর্মকর্তার বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ পুলিশও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। তিনজনকেই এক সঙ্গে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে আদালতের নির্দেশনা পালন করতে চায় পুলিশ। এদিকে গতকাল দুপুরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, র‌্যাবের সাবেক দুই কর্মকর্তাকে খুব দ্রুত গ্রেফতার করা হবে। পুলিশ সদর দফতর থেকে গ্রেফতার-সংক্রান্ত চিঠি পাওয়ার পর পুলিশ সুপার গতকাল দুপুরে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। জানা গেছে, সাত খুনের ঘটনায় চাকরিচ্যুত দুই সেনাসদস্য র‌্যাব-১১ এর সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ ও মেজর আরিফ হোসেনকে গ্রেফতারের চিঠি গত বৃহস্পতিবার রাতে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পৌঁছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠি পুলিশ সদর দফতরের মাধ্যমে এসপির হাতে পৌঁছানো হয়। নিজ দফতরে চিঠি প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে পুলিশ সুপার বলেন, এটি একটি আলোচিত হত্যা মামলা। আমরা কোনো অপরাধীকে ছাড় দিব না। সরকারের তরফ থেকে আমাদের উপর কোনো ধরনের চাপ নেই। অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে আমরা মামলাটির তদন্ত কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এ জন্য কিছুক্ষেত্রে বিলম্ব হচ্ছে। তাড়াহুড়ো করে কোনো কাজ করতে গেলে তদন্ত কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আর এতে নিরীহ মানুষ হয়রানির মধ্যে পড়তে পারেন বলেও মন্তব্য করেন পুলিশ সুপার। এদিকে র‌্যাবের দুই কর্মকর্তাকে ফৌজদারি আইনে গ্রেফতারের অনুমতি পেলেও নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ও নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পের সাবেক প্রধান লে. কমান্ডার এম এম রানার বিষয়ে এখনো কোনো চিঠি পায়নি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণায়। এ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনাও পৌঁছেনি নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে।

নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পরই র‌্যাবের তিন কর্মকর্তাকে অবসর দেওয়া হয়। ৬ মে সেনাবাহিনীর দুজনকে অকালীন ও নৌবাহিনীর একজনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। ১১ মে এই তিন কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় গিয়ে ওই চিঠি পৌঁছে দেন। চিঠি পাওয়ার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিকালেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশের মহাপরিদর্শককে চিঠি পাঠানো হয়। গত ২৭ এপ্রিল দুপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। এর তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল ছয়জনের এবং পরদিন আরও একজনের লাশ শীতলক্ষ্যায় ভেসে ওঠে। এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে মামলা করে নজরুলের পরিবার। ৪ মে নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদ চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, ছয় কোটি টাকার বিনিময়ে র‌্যাবের তিন কর্মকর্তা ওই সাতজনকে অপহরণ ও খুন করেছেন।

ডেমরার যুবদল নেতা গ্রেফতার : সাত খুনের মামলায় ডেমরা থানা যুবদল সভাপতি রফিকুল ইসলামকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ডেমরার কামারগোপের নিজ বাসা থেকে রফিককে গ্রেফতার করে নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। পুলিশ জানায়, সাত খুনের ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে গ্রেফতার করা হয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর