শনিবার, ১৭ মে, ২০১৪ ০০:০০ টা

বাংলাদেশ চীন নিয়ে মোদিকে মনমোহনের শেষ পরামর্শ

বাংলাদেশ চীন নিয়ে মোদিকে মনমোহনের শেষ পরামর্শ

ভারতে ক্ষমতায় বসতে যাওয়া বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের জন্য পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে 'পরামর্শ' রেখে যাচ্ছে বিদায়ী কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট সরকার। এতে বাংলাদেশ ও চীন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ থাকছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও চীনের সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্ক অব্যাহত রাখার আহবান থাকছে ওই পরামর্শে।

মনমোহন সরকারের শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা গতকাল বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিব শঙ্কর মেনন তার উত্তরসূরির জন্য রেখে যাচ্ছেন এ-বিষয়ক 'সুনির্দিষ্ট পরামর্শ'।

রাষ্ট্রপতি নরেন্দ্র মোদিকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানানোর পর আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করবেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। আর মনমোহনের সঙ্গেই নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদ থেকে বিদায় নেবেন মেনন। মোদির সরকারে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা কাকে করা হবে বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এটি পরিষ্কার, মেনন তার বর্তমান দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন, এমন প্রস্তাব পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। ভারতে প্রতিটি সরকারই নিজেদের পছন্দমতো ব্যক্তিকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করে থাকে। প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির সরকারে এ পদে ছিলেন ব্রজেশ মিশ্র। কিন্তু ২০০৪ সালের নির্বাচনে বিজেপির হারের পর বিদায় নেন তিনি। মনমোহনের প্রথম জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব জে এন দীক্ষিত। তার আকস্মিক মৃত্যুর পর ইনটেলিজেন্স ব্যুরোর (আইবি) সাবেক প্রধান এম কে নারায়ণনকে দেওয়া হয় এ দায়িত্ব। কিন্তু ২০০৮ মালে মুম্বাই হামলার পর তাকে সরিয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শিব শঙ্কর মেননকে এ দায়িত্বে আনে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার। ব্রজেশ মিশ্র ও দীক্ষিতের পর থেকে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার মাধ্যমে ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নিয়ন্ত্রণ বেড়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভারত সরকারের ওই শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা বলেন, মেনন তার উত্তরসূরির জন্য যে পরামর্শ রেখে যাচ্ছেন, এতে মূলত চীন ও বাংলাদেশের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। সম্প্রতি ভারত-চীন সীমান্তে উত্তেজনা দেখা দিলে চীনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখেন মেনন। গত বছর মে মাসে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদের বেইজিং সফরে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল মেননের। এরপর একই মাসে নয়াদিলি্ল সফর করেন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং। গত বছর অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বেইজিং সফর করেন এবং সে সময় দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত প্রতিরক্ষা সহযোগিতাবিষয়ক একটি চুক্তি সই হয়। ওই কর্মকর্তা বলেন, চীনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরবেন মেনন। বাংলাদেশ বিষয়ে মেননের নোটে ভারতের নিরাপত্তা ও যোগাযোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে 'ঢাকার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক' অব্যাহত রাখার গুরুত্ব তুলে ধরা হবে। নতুন প্রশাসন যাতে 'বাংলাদেশ সরকারের জন্য বিরক্তিকর' কিছু না করে সে জন্য জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা তাদের প্রতি পরামর্শ রেখে যাবেন বলে জানান ওই কর্মকর্তা। ভারতে 'অনুপ্রবেশকারী' বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে মোদির বক্তব্য নিয়ে বিদায়ী সরকারের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ রয়েছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, 'তাদের ফেরত পাঠানো হলে তা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে জটিল করে তুলবে। হাসিনা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে পারে এমন কোনো উসকানিমূলক পদক্ষেপ চায় না বর্তমান প্রশাসন। আর এ বিষয়টি অনাগত প্রশাসনকেও অবগত করা হবে।' এ ছাড়া প্রস্তাবিত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সই এবং ভারত-বাংলাদেশের স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়েও নরেন্দ্র মোদির প্রশাসনকে বলা হবে বিদায়ী সরকারের পক্ষ থেকে।

 

সর্বশেষ খবর