শনিবার, ১৭ মে, ২০১৪ ০০:০০ টা

উদ্ধারে গাফিলতি আহতরা পাচ্ছেন না ওষুধ-পথ্য

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় মর্মান্তিক লঞ্চ দুর্ঘটনার পর যতই সময় গড়াচ্ছে ততই বাড়ছে লাশের সংখ্যা। দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা যেমন বাড়ছে তেমনি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রিয়জন হারানো স্বজনদের ভিড়ও। মেঘনার বুকজুড়ে শত শত দেশি নৌকা নিয়েই মানুষজন খুঁজে ফিরছেন, ছোটাছুটি করছেন লাশের সন্ধানে। নদীর দুই পাড়েই চলছে স্বজনদের বুক চাপড়ানো আহাজারি। একটা লাশ উদ্ধার হচ্ছে তো শত শত মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন-এই বুঝি প্রিয়জনের লাশ ওঠে এলো। পরিচয় মিলতেই তার স্বজনদের যেমন বুকফাটা কান্নার শব্দ ভেসে ওঠে, বাকিরাও তেমনি ডুকরে কান্নায় ভেঙে পড়েন রীতিমতো। গত দুই দিন ধরেই মেঘনার তীরজুড়ে এমন শোকাতর পরিবেশ বিরাজ করছে।

শোককাতর মানুষজন উদ্ধারকাজে গাফিলতির অভিযোগ তুলে বার বার বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন। মিছিল করছেন। সমস্বরে কান্নার রোল তাদের স্লোগান হয়ে দাঁড়াচ্ছে। নিমজ্জিত লঞ্চ থেকে জীবিত ফিরে আসা ভাগ্যবান যাত্রীরাও একের পর এক অভিযোগ তুলে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। উদ্ধারকাজে ধীরগতির অভিযোগ করেছেন নিখোঁজ যাত্রীদের স্বজনরা। স্থানীয় লোকজনও উদ্ধারকাজে সন্তুষ্ট নন। এলাকার বাসিন্দা শাহীন ইসলাম বলেন, প্রায় দুই দিন হতে চলল এখনো লঞ্চ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি- এটা দুঃখজনক। বৃহস্পতিবার রাতভর ঢিলেঢালা ভাবে উদ্বারকাজ চলছে বলেও অভিযোগ করেন স্বজনরা। গতকাল সকাল থেকে উদ্ধারকাজে কিছুটা গতি আনা হলেও রশি ছিঁড়ে যাওয়া, সমন্বয়হীনতা, গাফিলতিসহ নানা কারণে প্রচুর সময়ক্ষেপণ করা হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী নৌযান হামজা-রুস্তম বুড়িয়ে কর্মক্ষমতাহীন হয়েছে অনেক আগেই। নতুন উদ্ধারকারী নৌযান হিসেবে আমদানি করা হয়েছে প্রত্যয়। দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী উদ্ধারযান হিসেবেই এর পরিচয়। কিন্তু প্রত্যয় তার প্রথম উদ্ধার অভিযানে আহামরি কোনো চমক দেখাতেও পারেনি। বরং উদ্ধারকাজ চলাকালেই প্রত্যয় এর ক্রেইনের রশিটি পর পর দুইবার ছিঁড়ে যাওয়ায় অন্তত ৫ ঘণ্টা সময়ক্ষেপণ হয়েছে।

লঞ্চ ডোবার সময় প্রায় অর্ধশতাধিক যাত্রী সাঁতরে পাড়ে উঠতে পেরেছেন। তাদের মধ্যে ১৫ জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় গজারিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্ েভর্তি করা হয়। ভবেরচর এলাকার বাসিন্দা নাসিমা আক্তার বলেন, আহত লঞ্চযাত্রীদের চিকিৎসার খোঁজটা পর্যন্ত নেওয়ার সময় পাচ্ছেন না কেউ। সবাই ছুটছেন দুর্ঘটনাস্থলে, অথচ আহতরা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাতরাচ্ছেন। প্রয়োজনীয় ওষুধপথ্যও তাদের ভাগ্যে জুটছে না। শরীয়তপুর ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. বাবুল জমাদার ও মহাসচিব বাচ্চু ব্যাপারি গভীর শোক প্রকাশ করে প্রশ্ন তুলেন, লঞ্চ দুর্ঘটনায় বার বার লাশের মিছিল বন্ধ হবে কবে? স্থানীয় মানুষ আর স্বজনরাও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন। অপেক্ষমাণ মানুষের মাঝে পানি ও শুকনো খাবার বিতরণ করছেন স্বেচ্ছাসেবক ও স্থানীয়রা।

নিমজ্জিত লঞ্চ থেকে জীবিত ফিরতে পারা ভাগ্যবান যাত্রী নড়িয়ার আজগর আলী জানান, ঝড় শুরুর পূর্ব মুহূর্তে লঞ্চটি নিরাপদ স্থানে নেওয়া তো হয়নি-ই বরং বৃষ্টির পানি থেকে মালামাল রক্ষার নামে কর্মচারীরা মোটা ত্রিপল দিয়ে গোটা লঞ্চটাই মুড়িয়ে দেয়। তখন লঞ্চের ভিতরে শ্বাস নেওয়াও কষ্ট হচ্ছিল। গতকাল গজারিয়ার উদ্ধার স্থলে এক আত্মীয়র সন্ধানে যাওয়া শরীয়তপুরের বাসিন্দা আলমগীর সেলিম বলেন, এমভি মিরাজ-৪ লঞ্চটি এর আগেও দুবার দুর্ঘটনার কবলে পড়ে, একবার অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে মেঘনা নদীতেই নিমজ্জিত হয়েছিল।

ডুবে যাওয়া লঞ্চের যাত্রী আবদুর রাজ্জাক জানান, সদরঘাট থেকে দুপুর ১টার দিকে শরীয়তপুরের উদ্দেশে রওনা হয় লঞ্চটি। পথে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার দৌলতপুর এলাকায় পৌঁছালে হঠাৎ ঝড়ের কবলে পড়ে। এতে মাত্র ৩ মিনিটের মধ্যে লঞ্চটি ডুবে যায়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, লঞ্চের চালক একটু বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিলে পাশের একটি শাখা নদীতে যেতে পারতেন। যাত্রীরা বার বার শাখা নদীতে লঞ্চ ঢুকানোর দাবি করলেও তাদের ধমক দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়।

 

সর্বশেষ খবর