শনিবার, ১৭ মে, ২০১৪ ০০:০০ টা
দীর্ঘ চিঠিতে শেখ হাসিনা

মোদির দ্বিতীয় ঘর হয়ে উঠবে বাংলাদেশ

মোদির দ্বিতীয় ঘর হয়ে উঠবে বাংলাদেশ

নরেন্দ্র মোদির বিপুল জয়ের সংবাদ স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সক্রিয় হয়ে উঠল প্রতিবেশী বলয়। বিকাল ৩টার আগেই পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা থেকে অভিনন্দনবার্তা পৌঁছে গেছে মোদির কাছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ নিজে টেলিফোন করে মোদিকে শুধু অভিনন্দনই জানাননি, নিজের দেশে আমন্ত্রণও জানিয়ে রেখেছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি দীর্ঘ চিঠি পাঠিয়েছেন মোদিকে। সেখানে ভারত-বাংলাদেশের 'বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের' কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, বাংলাদেশ মোদির 'দ্বিতীয় ঘর' হয়ে উঠবে। 

কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিনের মনমোহন-জমানা শেষ হয়ে নতুন রাজনৈতিক পর্বের সূচনায় কিছুটা উদ্বিগ্ন এবং সতর্ক প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো। তারা আসলে বুঝে নিতে চাইছে, মোদির বিদেশনীতি কোন অভিমুখে এগোবে। ভোটের আগে দেশজুড়ে রাজনৈতিক প্রচার চালানোর সময় বাংলাদেশ, পাকিস্তান এমনকি চীন সম্পর্কেও রূঢ় বাক্য ব্যবহার করেছেন মোদি। জাতীয়তাবাদের আবেগ তৈরির প্রশ্নে বেশকিছু প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নীতিকে সমালোচনা করতে শোনা গেছে তাকে একাধিকবার। সূত্রের বক্তব্য, আগামী কয়েক সপ্তাহ বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের মতো দেশগুলো বুঝে নিতে চাইবে, মোদি ঘরোয়া রাজনীতির বাধ্যবাধকতার জন্যই ওই মন্তব্যগুলো করেছিলেন কি না। নাকি সংঘাতপূর্ণ বিদেশনীতির পথেই ভবিষ্যতে হাঁটতে চাইবেন তিনি। বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারী এবং শরণার্থীদের বাংলাদেশে ফেরত যাওয়া নিয়ে মোদি কার্যত জনসভায় হঙ্কার দেওয়ার পরই হতাশা প্রকাশ করেছিলেন বাংলাদেশি নেতৃত্ব। বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যেই এবং হাসিনা ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছিলেন, এ ধরনের মন্তব্য দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে কোনোভাবেই সাহায্য করবে না। কিন্তু এই বিপুল জনসমর্থন মোদি পাওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই নিঃশর্ত বন্ধুতার হাত না বাড়িয়ে এখন উপায় থাকছে না ঢাকার। তিস্তা এবং স্থলসীমান্ত চুক্তি দুটি ঝুলে রয়েছে। বাণিজ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে ভারতকে পাশে পাওয়া একান্ত প্রয়োজন হাসিনা সরকারের। গতকাল মোদিকে লেখা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর চিঠিতে এ বিষয়টি কার্যত স্পষ্ট হয়ে গেছে। হাসিনা লিখেছেন- 'ভারতের মানুষ আপনার গতিশীল প্রেরণামূলক এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছে। ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের বন্ধু এই দেশকে আমি একইভাবে দেখতে চাই।' ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত যে 'অভূতপূর্ব' সমর্থন দিয়েছিল তার কথা উল্লেখ করে হাসিনা বলেছেন, 'ভারত এবং বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে যে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করা গেছে তাকে অবশ্যই এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বাংলাদেশ এবং ভারত দুই দেশেরই সরকার মানুষের যেরকম সমর্থন পেল তাতে আমরা একসঙ্গে কাজ করে সম্পর্ককে নতুন এক উচ্চতায় পৌঁছে দিতে পারব।' 

নওয়াজ শরিফ এবং হাসিনা দুজনই গতকাল মোদিকে তাদের দেশে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। হাসিনা বলেছেন, 'আমি আশা করব বাংলাদেশ আপনার দ্বিতীয় ঘর হবে এবং আপনার সরকারি সফরের প্রথম গন্তব্য হয়ে উঠবে।' নওয়াজ শরিফ মোদিকে জানিয়েছেন, তিনি ভারতের নির্বাচনের দিকে আগাগোড়া নজর রেখেছিলেন। রাজনৈতিক সূত্রের খবর মোদি তার সঙ্গে উষ্ণভাবেই কথা বলেছেন। নওয়াজকে মোদি বলেছেন, দারিদ্র্য মোকাবিলার প্রশ্নে ভারত ও পাকিস্তানের যৌথ সহযোগিতার কথা তিনি প্রচারের সময় বলেছিলেন। 

কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য- বিদেশনীতিতে পাকিস্তান নিঃসন্দেহে নরেন্দ্র মোদির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ শেষবারের মতো পাকিস্তান সফরে গিয়েছিলেন। তার পর থেকে প্রায় দুই বছর হতে চলল, জল অচল হয়ে রয়েছে দুই দেশের সম্পর্ক। মুম্বাই সন্ত্রাসের অভিযুক্তদের সাজা দেওয়ার ব্যাপারে ভারত ধারাবাহিকভাবে দাবি করা সত্ত্বেও এখনো কাজের কাজ কিছুই হয়নি। উপরন্তু সীমান্তে ঘটেছে একের পর এক পাক সেনার হামলা এবং ভারতীয় সেনার মুণ্ডু কাটার মতো ঘটনা। এ তিক্ত পরিবেশে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে মোদি কীভাবে পদক্ষেপ করেন তা-ই এখন আঁচ করতে চাইছে পাক নেতৃত্ব। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এক সপ্তাহ আগে ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় দুই সাংবাদিককে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে নওয়াজ সরকার। এ ব্যাপারে মোদি কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানান, সেদিকেও তাকিয়ে রয়েছে ইসলামাবাদ।

রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য- মোদির বিদেশনীতি অনেকটাই নির্ধারিত হবে জাতীয় বাণিজ্যিক চাহিদার ওপর নির্ভর করে। গুজরাটে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে যেমন তিনি জাপান, ইসরায়েল, অথবা কানাডার মতো দেশগুলোর সঙ্গে বিপুল অঙ্কের লগি্ন এবং প্রযুক্তি আনতে সক্ষম হয়েছেন, জাতীয় স্তরেও তারই প্রতিফলন দেখা যাবে। ফলে ক্ষমতায় এসেই প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে রণংদেহী কূটনীতিতে না গিয়ে মোদি চাইবেন তাদের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক দৃঢ় করতে। এ ক্ষেত্রে চীন এবং জাপানকে একই সঙ্গে কীভাবে কাজে লাগাতে পারেন মোদি সেদিকেও নজর রাখা হচ্ছে। ভারতের ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতি চাঙ্গা করতে এ দুটি দেশকেই পাশে পেতে চাইবেন মোদি। মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় তিনি একাধিকবার চীনে গিয়েছেন। পাশাপাশি গত কয়েক বছরে ভারতে যত লগি্ন করেছে জাপান তার প্রায় অর্ধেকই রয়েছে গুজরাটে। কানাডার পাশাপাশি জাপান হলো ভাইব্র্যান্ট গুজরাটের আরও একটি অংশীদার রাষ্ট্র। জাপানের এ গুজরাট যোগাযোগ পুরোটাই ঘটেছে মোদির সময়ে এবং সক্রিয়তায়। এটাও মনে করা হচ্ছে, ক্ষমতায় আসার পরই অল্প সময়ের মধ্যে আর্থিক ক্ষেত্রে কিছু করে দেখাতে চাইবেন মোদি। সে ক্ষেত্রে জাপানকে যতটা সম্ভব কাজে লাগানোর চেষ্টা থাকবে তার। কিন্তু এ কাজটি তাকে করতে হবে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক রেখেই। চলতি বছরে তিন থেকে চারটি বহুপক্ষীয় আন্তর্জাতিক সংগঠনের (ব্রিকস, আসিয়ান, জি-২০ ইত্যাদি) বৈঠকে চীনের শীর্ষ নেতার সঙ্গে বৈঠক হওয়ারও কথা রয়েছে তার।

 

সর্বশেষ খবর