শনিবার, ১৭ মে, ২০১৪ ০০:০০ টা
অ্যালায়েন্স ও অ্যাকর্ডের পরিদর্শন

গার্মেন্ট বন্ধের আশঙ্কায় মালিক শ্রমিকরা উদ্বিগ্ন

উত্তর আমেরিকাভিত্তিক পোশাক ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স সেফটি (অ্যালায়েন্স) ও ইউরোপের আরেকটি জোট অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ (অ্যাকর্ড) দেশের পোশাক কারখানাগুলোতে এখন নিরাপত্তা মান পরিদর্শন করছে। উদ্যোগটি ইতিবাচক হলেও মালিক ও শ্রমিকদের জন্য বয়ে আনছে দুঃসংবাদ। এমনকি এ কারণে আতঙ্ক ও উদ্বেগে আছেন দেশের পোশাক মালিক ও শ্রমিক পক্ষ। পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর তথ্যে এ খবর জানা যায়। বিজিএমইএ জানায়, এ পর্যন্ত দুই জোটের পরিদর্শনে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ২০টির মতো পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে অ্যাকর্ডের পরিদর্শনে বন্ধ হয়েছে ১৭টি এবং অ্যালায়েন্সের পরিদর্শনে বন্ধ হয়েছে ৩টি। কারখানাগুলোতে কাজ হারিয়েছে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার শ্রমিক। বিজিএমইএ জানায়, যেভাবে কারখানাগুলো বন্ধ করা হচ্ছে এতে শ্রমিকরা যেমন কাজ হারাচ্ছেন, মালিকরাও সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছেন। এরই মধ্য নিজস্ব ভবন না থাকার কারণে বাংলাদেশ এ জোটভুক্ত ক্রেতাদের থেকে প্রায় সোয়া ৫৪ কোটি টাকার পোশাক রপ্তানির কার্যাদেশ হারিয়েছে। আর রপ্তানি আদেশ হারিয়ে ছোট-বড় বহু কারখানা শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করতে না পেরে অনেক মালিক কারখানায় তালা ঝুলিয়েছেন।

গত কয়েক মাসে দেশের ৫০৮টি গার্মেন্টে নিরাপত্তা মান পরিদর্শন শেষে ৬টি ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করেছে অ্যালায়েন্স। যার মধ্যে একটি গার্মেন্ট সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একটি কারখানার শ্রমিকদের অন্য কারখানায় স্থানান্তর করা হয়েছে। বাকিগুলো পর্যালোচনা কমিটির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে পরিদর্শনকালে অধিকাংশ কারখানাগুলোতে অগি্ন ও ভবনের কাঠামোগত ছোট-বড় ত্রুটি পাওয়া গেছে। এগুলো সংশোধনে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার গুলশানে নিজস্ব কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অ্যালায়েন্সের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ অফিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেসবাহ রবিন জানান, পরিদর্শনকালে অধিকাংশ গার্মেন্টে কাঠামোগত, বৈদ্যুতিক ও অগি্ন নিরাপত্তাজনিত ত্রুটি ধরা পড়েছে। তবে কিছু কারখানায় শ্রমিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অগ্রগতি করেছে। তবে সার্বিক অগ্রগতির জন্য কারখানাগুলোর আরও সময় লাগবে। অন্যদিকে অ্যাকর্ড প্রায় সোয়া ৫শ' কারখানা পরিদর্শন শেষ করেছে। বিজিএমইএ'র দেওয়া তথ্যে, অ্যাকর্ডের পরিদর্শনে অন্তত ১৭টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানাগুলোতে ক্ষতিপূরণ কারা দেবে তা এখনো ঠিক হয়নি। শ্রমিক নেতারা বলছেন, নিরাপত্তার নামে একের পর এক কারখানা বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। এতে করে শ্রমিকরা আন্দোলনে নামতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। বিজিএমই নেতারা জানান, এরই মধ্যে পরিদর্শন মানদণ্ড নিয়ে স্থানীয় প্রকৌশলীদের সঙ্গে দুই জোটের প্রকৌশলীদের মতবিরোধও তৈরি হয়েছে। বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও মতানৈক্য তৈরি হয়েছে। তারা জানান, বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বহু কারখানা। আর এর সঙ্গে কাজ হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত লাখো শ্রমিক।

রানা প্লাজা ট্যাজেডির পর পোশাক খাতের নিরাপত্তা নিয়ে যখন ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছিল সে সময় প্রায় আড়াই হাজার কারখানা পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নেয় অ্যালায়েন্স ও অ্যাকর্ড। এ দুই জোটের পক্ষে কারখানা ভবনের কাঠামো, অগি্ন ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তার মান যাচাইয়ে কোনো ত্রুটি পেলেই পর্যালোচনা কমিটির মাধ্যমে বন্ধ করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। অন্যদিকে নিজস্ব ভবন না থাকায় রপ্তানি আদেশ বন্ধ করে দেওয়ার কারণেও অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আর এভাবে কারখানা বন্ধ করে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন মালিক ও শ্রমিকরা। এ বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, কারখানা পরিদর্শনের সময় অবকাঠামোগত ঝুঁকির কারণে ২০টির মতো কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। বিজিএমইএর ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম মান্নান কচি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ৬ মাসে ৪১৯টি কারখানায় জরিপ চালিয়ে দেখা যায় নিজস্ব ভবন না থাকার কারণে বিদেশি ক্রেতারা ১১০ মিলিয়ন ডলারের (৫৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা) কার্যাদেশ বাতিল করে। অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স কারখানা মালিকদের শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য ব্যয়বহুল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলছে। মালিকরা তা পূরণের চেষ্টাও করছেন। এ অবস্থায় তারা যদি অর্ডার ফিরিয়ে নেয় তবে কীভাবে নিরাপত্তার ব্যবস্থা, কীভাবে শ্রমিকদের বেতন দেব! অন্যদিকে বিদেশি ক্রেতারা পোশাকের মূল্য না বাড়িয়ে উল্টো কমানোর কথা বলছে। তারা আফ্রিকা, ইথিওপিয়ার মতো দেশ থেকে পোশাক ক্রয়ের কথাও বলছে।

সর্বশেষ খবর