শনিবার, ১৭ মে, ২০১৪ ০০:০০ টা
অপহরণ করে ৭ খুন

শেষ রাতে গ্রেফতার তারেক ও আরিফ!

শেষ রাতে গ্রেফতার তারেক ও আরিফ!

নারায়ণগঞ্জে সাতজনকে অপহরণ করে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তার মধ্যে দুজনকে অবশেষে গ্রেফতার করা হলো। শেষ রাতে লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মাহমুদ ও মেজর (অব.) আরিফ হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে আরেক অভিযুক্ত নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) এম এম রানা গ্রেফতার হননি। 

চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডে র‌্যাব-১১ এর শীর্ষস্থানীয় সাবেক এ তিন কর্মকর্তার সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ ওঠার পর হাইকোর্ট গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। কিন্তু আইনি প্রক্রিয়ায় বিলম্ব হচ্ছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল। তাদের গ্রেফতার নিয়ে কয়েক দিন ধরেই দেশজুড়ে চলে নানা জল্পনা-কল্পনা। বৃহস্পতিবার রাতে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার মত দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপারের (এসপি) কাছে গ্রেফতারের নির্দেশনা সংক্রান্ত চিঠি পৌঁছে।  

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে গত ২৭ এপ্রিল অপহরণ করে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। কয়েক দিন পর শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, এ হত্যাকাণ্ডে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেন ছাড়াও র‌্যাবের কর্মকর্তারা জড়িত।   

মধ্যরাত থেকে তৎপরতা : সাবেক দুই কর্মকর্তাকে গ্রেফতারে মধ্যরাত থেকেই শুরু হয় তৎপরতা। রাত সাড়ে ৩টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় তাদের ক্যান্টনমেন্ট থানায় রাখা হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। তবে দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি। সূত্র জানায়, সব প্রক্রিয়া শেষে আজ তাদের আদালতে হাজির করা হতে পারে। সূত্র আরও জানায়, র‌্যাবের দুই কর্মকর্তাকে ফৌজদারি আইনে গ্রেফতারের অনুমতি পাওয়া গেলেও নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ও নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পের সাবেক প্রধান লে. কমান্ডার এম এম রানার বিষয়ে এখনো কোনো চিঠি পায়নি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাই এই কর্মকর্তার বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ পুলিশও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।   

এর আগে দুপুরে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন  বলেন, এটি একটি আলোচিত হত্যা মামলা। আমরা কোনো অপরাধীকে ছাড় দিব না। সরকারের তরফ থেকে আমাদের ওপর কোনো ধরনের চাপ নেই। অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে আমরা মামলাটির তদন্ত কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এ জন্য কিছু ক্ষেত্রে বিলম্ব হচ্ছে। তাড়াহুড়ো করে কোনো কাজ করতে গেলে তদন্ত কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আর এতে নিরীহ মানুষ হয়রানির মধ্যে পড়তে পারেন বলেও মন্তব্য করেন পুলিশ সুপার।
নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পরই র‌্যাবের তিন কর্মকর্তাকে অবসর দেওয়া হয়। ৬ মে সেনাবাহিনীর দুজনকে অকালীন ও নৌবাহিনীর একজনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। ১১ মে এই তিন কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।    

নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদ চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, ছয় কোটি টাকার বিনিময়ে র‌্যাবের তিন কর্মকর্তা সাতজনকে অপহরণ ও খুন করেছেন।
বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাকে গ্রেফতারে পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজি) নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর পাঁচ দিন পর তাদের মধ্যে দুইজনকে গ্রেফতার করা হলো। হাইকোর্টের আদেশ পাওয়ার পর তা প্রতিপালনের জন্য আইজিপি চিঠিটি পাঠিয়ে দেন নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপারের কাছে। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি দেওয়া হয়। জানা গেছে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় চিঠিটি সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে পাঠায়। তারপর ওই চিঠি যায় সেনা ও নৌ-বাহিনীর হাতে। সেখান থেকে জবাব পাওয়ার পর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গত বৃহস্পতিবার পুলিশের চিঠির জবাব দেয়।
পুলিশ সদর দফতরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতারকৃতরা সেনাবাহিনীর লগ এরিয়াতে ছিলেন।  

নারায়ণগঞ্জ পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সিআরপিসি (ফৌজদারি কার্যবিধি) অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল।  ডেমরার যুবদল নেতা গ্রেফতার : সাত খুনের মামলায় ডেমরা থানা যুবদল সভাপতি রফিকুল ইসলামকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ডেমরার কামারগোপের নিজ বাসা থেকে রফিককে গ্রেফতার করে নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।  পুলিশ জানায়, সাত খুনের ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে গ্রেফতার করা হয়েছে।
 

সর্বশেষ খবর