শিরোনাম
বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৪ ০০:০০ টা
মামলার তাগিদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

ইইএফের টাকা যাচ্ছে ভুয়া প্রকল্পে

সমমূলধনী উদ্যোক্তা তহবিলের (ইইএফ) টাকা যাচ্ছে ভুয়া প্রকল্পে। কোনো ধরনের খোঁজখবর না নিয়েই অস্তিত্বহীন বিভিন্ন প্রকল্পে এ তহবিল থেকে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। ফলে যে দুর্নীতির অভিযোগে ইইএফ পরিচালনার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠান আইসিবির (ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ) হাতে দেওয়া হলো, সে দুর্নীতি কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ইইএফ থেকে অন্তত ১২টি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া হয়েছে যাদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কাগজ-কলমে ভুয়া নাম-ঠিকানা দাখিল করে প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণের নামে তহবিলের কোটি কোটি টাকা তসরুপ করেছে।
সম্প্রতি এ ধরনের ছয়টি ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইসিবিকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ৬ আগস্ট আইসিবির এমডি ফায়েকুজ্জামানের কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে অস্তিত্বহীন যে ছয়টি কোম্পানির নাম উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো হলো- ড্রিমস সফট লিমিটেড, ইন্টারস্যাট সফটওয়্যার সার্ভিসেস লিমিটেড, জুপিটার আইটি লিমিটেড, মারফি ম্যাককান কনসালটিং লিমিটেড, ইনফরমেশন টেকনোলজি ম্যাট্রিক্স বাংলাদেশ লিমিটেড ও রিসোর্স টেকনোলজি লিমিটেড। এর মধ্যে ড্রিমস সফটের নামে ইইএফ থেকে মঞ্জুরিকৃত ৮১ লাখ ২৮ হাজার টাকার মধ্যে ৫০ লাখ টাকা ছাড় করা হয়েছে, ৪৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা ছাড় করা হয়েছে ইন্টারস্যাট সফটওয়্যারের নামে, ১ কোটি ২২ লাখ মঞ্জুরিকৃত তহবিলের মধ্যে ৫০ লাখ টাকা ছাড় করা হয়েছে জুপিটার আইটির নামে, ৮০ লাখ টাকা ছাড় করা হয়েছে মারফি ম্যাককানের নামে। এ ছাড়া বিভিন্ন পরিমাণ মঞ্জুরিকৃত অর্থের বিপরীতে ৫০ লাখ টাকা করে ছাড় দেওয়া হয়েছে ইনফরমেশন টেকনোলজি এবং রিসোর্স টেকনোলজি নামে আরও দুটি অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে।
জানা গেছে, ইইএফ থেকে ঋণপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলোর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য এক সমীক্ষা চালায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস)। আর এটি করতে গিয়েই বেরিয়ে আসে ভুয়া প্রকল্পে ঋণ দেওয়ার বিষয়টি। বিআইডিএস পরিচালিত ওই সমীক্ষায় ইইএফ সহায়তাপ্রাপ্ত ১৩টি আইসিটি প্রকল্পের অবস্থান চিহ্নিত করা যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইসিবি যৌথভাবে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প সরেজমিন পরিদর্শন করে ১২টি প্রকল্পের অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি। এর মধ্য থেকেই ছয়টি প্রকল্পের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। এদিকে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা। আইসিবি বলছে, সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোর মূল্যায়নকারী প্রতিষ্ঠান ভিন্ন ভিন্ন এবং ঋণ মঞ্জুরি ও বিতরণ বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে আইসিবির এমডি মো. ফায়েকুজ্জামানকে গতকাল বিকালে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। প্রসঙ্গত, ঝুঁকিপূর্ণ কিন্তু উদীয়মান কৃষিভিত্তিক বা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ উৎসাহিত করার লক্ষ্যে সরকার বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে ২০০০ সালে মোট ১০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনের মাধ্যমে ইকুইটি অ্যান্ড এন্টারপ্রেনারশিপ ফান্ড বা সমমূলধনী উদ্যোক্তা তহবিল (ইইএফ) গঠন করে। একই বছর ২৬ ডিসেম্বর থেকে সরকারের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে এ তহবিল পরিচালনার দায়িত্ব নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। যেসব প্রকল্পের মোট মূলধন ৫০ লাখ থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত শুধু সেসব প্রকল্পকে এ মূলধনের যোগ্য বিবেচনা করে ঋণের জন্য আবেদনের সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু মাত্র কয়েক বছরে তহবিল পরিচালনায় দুর্নীতি ও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিরুদ্ধে। সবশেষে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইইএফ পরিচালনার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে নিয়ে আইসিবির ওপর ন্যস্ত করে।

সর্বশেষ খবর