শুক্রবার, ২৭ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা
তিন সিটি করপোরেশন

ইশতেহারের ৭০ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছি : মনজুর

ইশতেহারের ৭০ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছি : মনজুর

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ২০১০ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের ৭০ শতাংশই বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তবে কিছু বড় বড় কাজ এখনো চলমান বলে জানিয়েছেন চসিক নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ মনজুর আলম। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম নগরবাসীর বড় ‘দুঃখ’-খ্যাত জলাবদ্ধতা ৮০ শতাংশই নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে দাবি করেছেন তিনি। এটিকে তিনি জলাবদ্ধতা না বলে জলজট বলে আখ্যায়িত করেছেন। বুধবার বিকালে নিজ দফতরে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে মেয়র মনজুর আলম এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকারে তিনি চসিকে পাঁচ বছরের নানা উন্নয়ন, সাফল্য-ব্যর্থতা, স্বপ্ন-ইচ্ছার কথাও বলেন। আসন্ন চসিক নির্বাচনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ মনজুর আলম ১৯৯৪ সালে উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড থেকে প্রথম কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। পরে এ ওয়ার্ড থেকে টানা তিনবার কাউন্সিলর পদে জয়ী হন আওয়ামী লীগ সমর্থিত মনজুর। তিন দফা কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালনকালে ৩২ বার ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০১০ সালের মেয়র নির্বাচনে নিজের রাজনৈতিক গুরু এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে প্রায় ৯৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। নির্বাচিত হয়ে তিনি মনোনীত হন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। মোহাম্মদ মনজুর আলম বলেন, ‘গত নির্বাচনী ইশতেহারে ৫৬টি দফা ঘোষণা করেছি। এর মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছি। বাকলিয়ায় স্টেডিয়াম ও স্পোর্টস কমপ্লেক্সের মাটি ভরাট কাজ শেষ। এখন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোফাইল (ডিপিপি) তৈরি করে সরকারের কাছে পাঠানো হবে। জাতিসংঘ পার্কে সুইমিং পুল ও জিমনেশিয়াম তৈরির কাজ শেষ। ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে মেরিনার্স রোড। ১০০ কোটি টাকার লেক সিটি আবাসন প্রকল্পটি গ্রাহকদের কাছে হস্তান্তর প্রক্রিয়া এখন প্রায় শেষ, যেটি আমি অনেক বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছিলাম। কিন্তু সবার সহযোগিতায় তা আমি সম্পন্ন করতে পেরেছি। এ ছাড়া ইশতেহারে গুমধুম পর্যন্ত রেললাইন, আউটার রিং রোড সরকারিভাবে বাস্তবায়নাধীন। এগুলো সব দৃশ্যমান উন্নয়ন।’
নগরবাসীর দুঃখ জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে মেয়র প্রার্থী মনজুর বলেন, ‘আমি নগরবাসীকে বলব, জলাবদ্ধতা আগে কেমন ছিল এখন কেমন তা তুলনামূলক মূল্যায়ন করতে। কারণ আগে বৃষ্টি হলে পানি ঘণ্টার পর ঘণ্টা জমে থাকত। এখন মুষলধারে বৃষ্টির পর এক ঘণ্টা পার হলেই পানি নেমে যাচ্ছে। ফলে এটিকে আমি জলাবদ্ধতা না বলে জলজট বলি। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে নদীর জোয়ার-ভাটায় একটু তারতম্য হয়েছে। নগরীর অনেক নিুাঞ্চলে এখনো জোয়ারের পানি ওঠে। এখানে প্রয়োজন স্লুইস গেট। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো)। তাই এটিকে জলাবদ্ধতা বলে চসিকের ওপর চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়। তবু এ ব্যাপারে আমরা পাউবোর সঙ্গে কথা বলেছি। অন্যদিকে গত পাঁচ বছর নিজস্ব ও আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে খাল খনন ও আবর্জনা অপসারণ করা হয়েছে, যাতে পানি দ্রুত নেমে যাচ্ছে।’ আবার জয়ী হলে নগরবাসীর জন্য কী করবেন- এমন প্রশ্নে সদালাপী মনজুর বলেন, ‘প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি দিয়ে নির্বাচন করব না। বাস্তবতা ও সময়োচিত গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তবে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে দীর্ঘ ২২ বছর নগরবাসী আমাকে অনেক সম্মান দিয়েছেন। তাদের ভালোবাসাই আমার বড় পাওনা। দীর্ঘদিন জনপ্রতিনিধি থেকে কী পেয়েছি তা আমি কখনো হিসাব করি না। পাওনার ঝুলিতে কেবলই রেখেছি মানুষের পরম ভালোবাসা।’
নগর উন্নয়ন প্রসঙ্গে কর্মমুখী ও বিনয়ী মনজুর বলেন, ‘গত প্রায় পাঁচ বছরে নগরীতে ৯০০ কোটি টাকার চার হাজারটি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে তিন হাজার কাজ আমার নখদর্পণে। এসব উন্নয়ন কাজে চসিকের রাজস্ব খাত থেকে ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। উন্নয়ন কাজ চলাকালে প্রতিটি প্রকল্প আমি নিজে গিয়ে পরিদর্শন করেছি। এমনকি এক দিনে আমি আট কিলোমিটার পর্যন্ত হেঁটেছি। পরিদর্শন করেছি সড়ক, খাল, নালা-নর্দমা পরিষ্কার ও সংস্কারের কাজ।’ মেয়র পদে সফল, নাকি ব্যর্থ- এমন প্রশ্নে মেয়র মনজুর বলেন, চসিক পরিচালনা, প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড ও আর্থিক লেনদেনসহ সামগ্রিক খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে নির্লোভ হয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছি। যে-কারও সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করেছি। এখন এসব কাজের সফলতা-ব্যর্থতা বিচারের দায়ভার জনগণের ওপর। তবে দৃঢ়চিত্তে এ কথা বলতে পারি- কাজে কখনো অবহেলা করিনি। অন্যায় ও অনিয়মকে প্রশ্রয় দিইনি।’ মনজুর আলম বলেন, নানা দিক দিয়ে চট্টগ্রাম একটি বঞ্চিত শহর। নগরীর বড় সড়কগুলোতে অতীতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও ওয়ার্ডকেন্দ্রিক সড়ক ছিল অনুন্নত। অথচ নগরীতে ওয়ার্ডকেন্দ্রিক মানুষেরই বসবাস বেশি। তাই নির্বাচিত হওয়ার পর ওয়ার্ডে ছোট-বড় যেসব সড়ক আছে সেগুলোর উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিয়েছি। নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ সড়কেই উন্নয়ন কাজ হয়েছে।’ মনজুর আলম দুঃখ করে বলেন, মাস্টারপ্ল্যানের অধীনে ‘বহদ্দারহাট থেকে কর্ণফুলী নদী’ পর্যন্ত চাক্তাই খালের পাড়ে মেরিনার্স বাইপাস সড়ক নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনকে ৫০ কোটি টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু এখনো পর্যন্ত ভূমি হস্তান্তর করতে পারেনি তারা। উপরন্তু এখন ভূমির মৌজা মূল্য বৃদ্ধির কারণে আরও টাকা দাবি করছে। অথচ এ প্রকল্পটির জন্য এক বছর আগে ২৯৭ কোটি টাকা একনেকে অনুমোদন হয়।

সর্বশেষ খবর