শুক্রবার, ২৭ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা
মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বানের মধ্য দিয়ে গতকাল ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন করা হয়েছে। কৃতজ্ঞ জাতি সশ্রদ্ধচিত্তে মুক্তিযুদ্ধের এদিন বীর শহীদদের স্মরণ এবং স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

সূর্যোদয়ের সময় তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর প্যারেড গ্রাউন্ডে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধাসরকারি ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।  ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর ঘোষণার পর মুক্তিপাগল বাঙালি যার যা আছে তা নিয়েই শত্রুর মোকাবিলা করে। নয় মাস যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয় ঘটে।  স্বাধীনতার ৪৪তম বার্ষিকীতে গতকাল দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মধ্যে ছিল জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন, শিখা চিরন্তনে পুষ্পাঞ্জলি, ধানমণ্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ছিল শিশু-কিশোর সমাবেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সমাবেশে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ প্রদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। বিকালে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের সম্মানে বঙ্গভবনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন রাষ্ট্রপতি। এ ছাড়া সরকারি ভবনে আলোকসজ্জা, দেশজুড়ে মসজিদ, মন্দির ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেশের কল্যাণে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্র, হাসপাতাল, জেলখানা, সরকারি শিশু সদনসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোতে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে গতকাল ছিল সরকারি ছুটির দিন। জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে এবং সরকারি-বেসরকারি রেডিও-টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী দিবসটি উপলক্ষে একটি স্মারক ডাকটিকিট ও খাম অবমুক্ত করেন। আমাদের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ও সাভার প্রতিনিধি জানান, ভোর পৌনে ৬টায় ৩১ বার  তোপধ্বনির পর  জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল এ সময় শহীদদের প্রতি জানায় সশস্ত্র সালাম। বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, মুক্তিযোদ্ধা, বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এর পর আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে নেতা-কর্মীদের নিয়ে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা। সকাল সাড়ে ৬টার দিকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিসৌধ ত্যাগ করার পর বিদেশি কূটনীতিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শুরু হয়। পরে স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে একাত্তরের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। তবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া স্মৃতিসৌধে যাননি। সকাল ৮টার দিকে দলটির পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল  মাহবুবুর রহমান (অব.), ড. মঈন খানসহ দুই শতাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। নিরাপত্তা : এদিকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে। স্মৃতিসৌধ ও এর আশপাশের এলাকাতেও কয়েক স্তরের নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি র‌্যাব, পোশাকধারী পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়।
বঙ্গবন্ধু ভবন ও টুঙ্গিপাড়া : স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে সকাল ৭টায় ধানমণ্ডির বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এরপর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, মন্ত্রিসভার সদস্য, দলীয় নেতা ও সংসদ সদস্যরা। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু ভবন এলাকা ত্যাগ করার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
বসুন্ধরা গ্রুপের শ্রদ্ধা নিবেদন : স্বাধীনতা দিবসে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্পোদ্যোক্তা পরিবার বসুন্ধরা গ্রুপ। সকাল ১০টার দিকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা (তথ্য ও গণমাধ্যম) মোহাম্মদ আবু তৈয়ব। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) মাহবুব হায়দার খান, জিএম এএইচআর (পেপার সেক্টর) দেলোয়ার হোসেন, জিএম সেলস (পেপার প্রডাক্টস) মাসুদুর রহমান, ডিজিএম (সেলস) কাজী ফজলে রাব্বি ওসমানী, ডিজিএম (এ অ্যান্ড এফ) পিজুরুল আলম খান প্রমুখ। এছাড়া  শ্রমিক জনতা লীগ, এলডিপি, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, ন্যাপ (মোজাফ্ফর), বাসদ, জাসদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ কংগ্রেস, জাবি সাংবাদিক সমিতি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল, জাকের পার্টি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, গণফোরাম, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, কেন্দ্রীয় ১৪ দল, বাংলাদেশ উন্মুুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় শ্রমিক লীগ, জাতীয়তাবাদী মহিলা দল, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, আ ফ ম কামাল উদ্দিন হল-জাবি, ফজিলাতুন্নেসা হল-জাবি, ঢাকা চেম্বার্স অব কমার্স, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সেক্টর কমান্ডার ফোরাম, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সুশাসন ও জাতি গঠন (সজাগ), প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর, ড্যাব, বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ইউনিয়ন, রাজউক, পরমাণু শক্তি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলা একাডেমি, রোকেয়া হল-ঢাবি, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট, কৃষি অ্যাসোসিয়েশন, প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, ফজলুল হক হল-ঢাবি, পেশাজীবী লীগ-ঢাবি, এডাব, কারিগরি কর্মচারী সমিতি-ঢাবি, বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা কৃষিবিদ পরিষদ, সচেতন নাগরিক কমিটি, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, ছাত্রদল-জাবি শাখা, বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, জনতা ব্যাংক, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন, ছাত্রলীগ-জাবি শাখা, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার, জাহানারা ইমাম হল-জাবি, প্রীতিলতা হল-জাবি, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন মঞ্চ, বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন, জাতীয় মহিলা সংস্থা, প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্র, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ আইন সমিতি, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, প্রজন্ম৭১, বাংলাদেশ ছাত্র পরিষদ, বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন, বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিল, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ, বাফ, অগ্রণী ব্যাংক, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ জনসেবা পার্টি (বাজনা), দুর্নীতি দমন কমিশনসহ অসংখ্য সংগঠন শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। দিবসটি উপলক্ষে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর বাদক দল ঢাকা মহানগরের কয়েকটি স্থানে বাদ্য পরিবেশন করে। নৌবাহিনীর কয়েকটি জাহাজ সর্বসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুুক্ত রাখা হয়। সেই সঙ্গে দেশের সব স্কুল-কলেজে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে দিনভর নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

সর্বশেষ খবর