শুক্রবার, ২৭ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা

অভিজিতের খুনিরা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ও লেখক অভিজিৎ রায়ের প্রকৃত হত্যাকারীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে জঙ্গিগোষ্ঠী হিযবুত তাহরীর সদস্য শফিউর রহমান ফারাবীকে গ্রেফতার করা হলেও তার কাছ থেকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষক ফারসীম মান্নান মোহাম্মাদীকে ইতিমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
এক মাস পেরিয়ে গেলেও হত্যাকাণ্ডের কূলকিনারা না হওয়ায় পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন অভিজিতের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা। যিনি নিজেও সেদিন দুর্বৃত্তদের হাতে মারাত্মক জখম হয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন বন্যা বলেন, অভিজিৎ হত্যার তদন্তে শুধু ফারাবীর গ্রেফতারই পর্যাপ্ত নয়। অভিজিৎ রায় দীর্ঘদিন ধরে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের হুমকি পেয়ে আসছিলেন। হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত ফারাবী ফেসবুকে হত্যার হুমকি দিয়ে লিখেছিল, বাংলাদেশে ফিরলে অভিজিৎকে হত্যা করা হবে। ওইসব হুমকিদাতাদের ঘিরেই এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চালানোর কথা বলে আসছে ডিবি পুলিশ। অভিজিৎ রায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী হওয়ায় এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তের সহযোগিতা করছে এফবিআই। গত ৬ মার্চ যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে ফারাবীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। কিন্তু ফারাবীকে তিন দফায় টানা ২০ দিন জিজ্ঞাসাবাদ করেও হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততা পায়নি পুলিশ। আরেক সন্দেহভাজন রেদোয়ান আজাদ রানাকেও এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ইতিমধ্যে রানাকে ধরিয়ে দিতে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে ডিএমপি। হত্যাকাণ্ডের আগে বুয়েট শিক্ষক ফারসীম মান্নানের সঙ্গে একটি বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন অভিজিৎ রায়। এ ব্যাপারে অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায় এ বৈঠকটি সন্দেহজনক উল্লেখ করে ফারসীম মান্নানের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে অনুরোধ করেন। এ বিষয়ে জানতেই গত ২৪ মার্চ তাকে ডিবি পুলিশ কার্যালয়ে ডাকা হয়। এরপর ঘটনার দিন তার সঙ্গে অভিজিতের কী কথা হয়েছে। বইমেলার বৈঠকে কে কে ছিলেন। সেখানে কী আলোচনা হয়েছে। অভিজিতের সঙ্গে তার সম্পর্ক কেমন ছিল সে বিষয়ে ডিবি পুলিশকে জানিয়েছেন ফারসীম মান্নান।
এফবিআইয়ের ভূমিকা : অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের পর ফেসবুক ও ব্লগে যারা হুমকি দিয়েছিলেন, তাদের খুঁজে বের করার জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে বলে জানায় যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত সংস্থা এফবিআই। পরে গত ৫ মার্চ এফবিআইয়ের চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসে। প্রথমে তারা ডিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ডিবি পুলিশ ফারাবীর মতো অন্তত ১০ জনের বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নিতে তাদের নাম এফবিআইয়ের কাছে জমা দেন। এই ১০ জন সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে অভিজিৎকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিলেন। সর্বশেষ গত ১১ মার্চ ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জব্দকৃত ১৩ ধরনের আলামত এফবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করে মামলার তদন্ত সংস্থা ডিবি পুলিশ। প্রসঙ্গত, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি একুশের বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন অভিজিৎ। সঙ্গে থাকা তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকেও গুরুতর আহত করে দুর্বৃত্তরা। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠানো হয়। তারা বহুদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র  প্রবাসী।

সর্বশেষ খবর