বুধবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা

দুর্নীতির ১৭ মামলার আসামি মির্জা আব্বাস

মি. টুয়েন্টি পার্সেন্ট খোকা এখন আমেরিকায়

দুর্নীতির ১৭ মামলার আসামি মির্জা আব্বাস

বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা ডিসিসির মেয়র থাকাকালে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতির অজস্র অভিযোগে অভিযুক্ত। বিএনপির অন্য একজন নেতা মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে রয়েছে দুর্নীতির ১৭টি মামলা। খোকা এখন আমেরিকায়। খোকার দুর্নীতির বেশ কয়েকটি মামলার ইতিমধ্যেই চার্জশিট হয়েছে, চলছে বিচারিক কার্যক্রম। তিনি মেয়র থাকাকালে সিটি করপোরেশনের সব বিভাগে 'মিস্টার টুয়েন্টি পার্সেন্ট' নামেও আখ্যায়িত হয়েছিলেন। অভিযোগ রয়েছে উন্নয়নমূলক টেন্ডার কার্যক্রম থেকে শুরু করে মশক নিধনের ওষুধ ছিটানো কার্যক্রম পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই মেয়রের টুয়েন্টি পার্সেন্ট পরিশোধ করে তবেই কাজ শুরুর নির্দেশনা ছিল। সাবেক মেয়র খোকার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ছাড়াও ডিসিসির ৮০০ কোটি টাকার সম্পদ ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগ রয়েছে। সাবেক মেয়রের টুয়েন্টি পার্সেন্টেজের সাম্রাজ্য শেষ হতেই বিএনপির আরেক নেতা মির্জা আব্বাস ডিসিসি (দক্ষিণ) মেয়র পদে লড়াই করছেন, তার কাঁধে রয়েছে দুর্নীতির ১৭ মামলা। মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে ১৪৩ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ আছে। ইতিমধ্যে দুদক সেসব অভিযোগের প্রমাণাদিসহ আদালতে চার্জশিটও দাখিল করেছে। ঘুরেফিরে ডিসিসির কাঁধে যাতে আবারও দুর্নীতিবাজ কোনো মহাভূত এসে চেপে বসতে না পারে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। টুয়েন্টি পার্সেন্টেজ এবার কত পার্সেন্টে গিয়ে পৌঁছে- এমন প্রশ্ন ছড়িয়ে পড়ছে মুখে মুখে।

ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস এ মুহূর্তে ১৪৩ কোটি টাকার দুর্নীতিসংক্রান্ত ১৭ মামলার আসামি। এসব মামলার কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে আব্বাস রিট করলেও উচ্চ আদালত তা খারিজ করে দেন। মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে সর্বশেষ মামলাটি দায়ের হয় ২০১৪ সালের ৬ মার্চ। (মামলা নম্বর-১১/২০১৪)। এ মামলায় মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটিয়ে সরকারের ১৮ কোটি ৯১ লাখ ৩০ হাজার ৯০০ টাকা দামের সাত একর জমি মাত্র ৩ কোটি টাকায় বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এতে সরকারের সরাসরি ক্ষতি হয় ১৫ কোটি ৫২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ঢাকার দুটি বিশেষ জজ আদালত ও মহানগর দায়রা জজ আদালতে আব্বাসের বিরুদ্ধে বিচারাধীন দুর্নীতি মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করে এসব তথ্য জানা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুর্নীতির মামলা ছাড়াও আব্বাসের বিরুদ্ধে তিনটি হত্যা মামলা ছিল, কিন্তু এ মামলাগুলোর তদন্ত শেষে চূড়ান্ত রিপোর্ট দেওয়ায় তিনি মামলা থেকে অব্যাহতি পান। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ কোনো বিরোধিতা না করার কারণে দুই বছর আগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র আরিফ মোর্শেদ খান আজিজ হত্যা মামলায় পুলিশের দাখিল করা চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করেন আদালত। আব্বাসকে নির্দোষ দেখিয়েই পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। জানতে চাইলে পিপি আবদুল্লাহ আবু বলেন, 'আব্বাসের বিরুদ্ধে হত্যা মামলায় পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছিল কি না তা আমার জানা নেই। তার বিরুদ্ধে কয়টি মামলা বিচারাধীন তা বলতে হলেও নথিপত্র খতিয়ে দেখতে হবে।' দুদক সূত্র আরও জানায়, দুর্নীতির ১৭ মামলা ছাড়াও মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের আরও ২০টি মামলা বিচারাধীন। ফলে আব্বাসের বিরুদ্ধে চলমান মোট ৩৭টি মামলার বিচারকাজই চলছে কচ্ছপ গতিতে। জানতে চাইলে দুদক কমিশনার মোঃ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ১৭ মামলাই তিন আদালতে বিচারাধীন, কোনোটাই স্থগিত নয়। প্লট সংক্রান্ত ১২৭ কোটি টাকার দুর্নীতি মামলাও সচল রাখার ব্যাপারে উচ্চ আদালত রায় দিয়েছেন। বর্তমানে মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে ঢাকার বিশেষ জজ-৩ আদালতে দুর্নীতির ১৫টি, ঢাকার বিশেষ জজ-৪ আদালতে একটি ও মহানগর দায়রা আদালতে একটি দুর্নীতির মামলা বিচারাধীন। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী থাকাবস্থায় মির্জা আব্বাস এসব দুর্নীতি করেন বলে মামলাগুলোয় উল্লেখ রয়েছে।

ঢাকার বিশেষ জজ-৪ আদালতে বিচারাধীন মামলার (নম্বর- বিশেষ মামলা ৩/২০০৮) ব্যাপারে আদালতের তৎকালীন বিচারক শামসুননাহার বেগম বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। অভিযোগ গঠনের আদেশে উল্লেখ করা হয়, মির্জা আব্বাস গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজে লাভবান হন এবং দলীয় একজন সংসদ সদস্য আলী আজগার লবীর মালিকানাধীন প্যাসিফিক কেমিক্যালস লিমিটেডের মাধ্যমে তাকে আর্থিকভাবে লাভবান করার অসদুদ্দেশ্যে তেজগাঁও শিল্প এলাকায় নবসৃষ্ট শিল্প প্লট বরাদ্দে বিনিয়োগ বোর্ডে সুপারিশ করেন। এমনকি পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্যাদির অভাবে আবেদনটি অসম্পন্ন থাকা সত্ত্বেও শিল্প প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে ২০০৬ সালের ১৯ অক্টোবর ১৯.৪৪ কাঠার পরিবর্তে ২০.৯৬ কাঠা জমির দখল হস্তান্তর ও পরবর্তী সময়ে লিজ দলিলের রেজিস্ট্রির ব্যবস্থা করেন। এ অনিয়ম করে মির্জা আব্বাস ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ও দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারা লঙ্ঘন করেছেন; যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আব্বাসের বিরুদ্ধে আরও যত মামলা : মামলার নথিপত্র পর্যালোচনায় জানা গেছে, মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে ২০০১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি রমনা থানায় জননিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। মামলাটি বর্তমানে ঢাকার জননিরাপত্তা ট্রাইবুন্যালে বিচারাধীন। মামলা নম্বর-৩৫। অন্যদিকে ২০০৪ সালের ২৮ মার্চ শাহজাহানপুর ঝিল মসজিদ পুকুর পাড়ে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এআইইউবি) ছাত্র আরিফ মোরশেদ খানকে হত্যার অভিযোগে মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় হত্যা মামলা হয়। এর এক বছর পর ২০০৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর শাহজাহানপুরে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে রকিবুল ইসলামকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার অভিযোগে রকিবুলের চাচা আবদুল গফুর মতিঝিল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০০৮ সালে রকিবুল হত্যা মামলা ও ২০১২ সালে মোরশেদ হত্যা মামলায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। ২০০৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি আব্বাসের বাড়িতে বৈদেশিক মুদ্রা রাখার অভিযোগে মতিঝিল থানায় বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়। মতিঝিল থানার মামলা নম্বর-৭০। মামলাটি বিচারাধীন। আরও জানা গেছে, ২০০৭ সালের ২২ মার্চ আব্বাসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা হয়। মতিঝিল থানার মামলা নম্বর-১৪০। এর চার মাস পর শাহবাগ থানায় তার বিরুদ্ধে আরেকটি দুর্নীতির মামলা হয়। শাহবাগ থানার মামলা নম্বর-৩০। ২০০৭ সালের ১৫ জুলাই আরেকটি মামলা হয়। এর এক মাস পর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলা হয় আব্বাসের বিরুদ্ধে। মতিঝিল থানার মামলা নম্বর-৩৫। ২০০৭ সালের ৫ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে আব্বাসের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির মামলা হয়।

 

সর্বশেষ খবর