বৃহস্পতিবার, ৪ জুন, ২০১৫ ০০:০০ টা

মোদির জন্য প্রস্তুত ঢাকা

মোদির জন্য প্রস্তুত ঢাকা

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের জন্য ঢাকার প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়ে গেছে। সফরসূচিও চূড়ান্ত। এখন চলছে সর্বশেষ খুঁটিনাটি বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা। ঢাকায় কাজ করছে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা দল। আজ নয়াদিল্লি থেকে ঢাকায় এসে পৌঁছাবে মোদির বিশেষ গাড়ি। ইতিমধ্যে সব অনুষ্ঠান স্থানকে নিয়ে আসা হয়েছে নিরাপত্তা বেষ্টনীর অধীনে। আগামীকাল ঢাকার প্রধান প্রধান রাজপথ বাংলাদেশ-ভারতের পতাকা ও দুই শীর্ষ নেতার ছবি দিয়ে সজ্জিত করা হবে। ইতিমধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মোদির বৈঠকের এজেন্ডাগুলো। বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল ইতিমধ্যে স্বাগত জানিয়েছে নরেন্দ্র মোদির সফরকে। সীমান্ত বিল পাস করায় ভারতের জনগণ ও নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানিয়ে গতকাল ধন্যবাদ প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে। ভারতের ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর প্রথমবারের মতো দুই দিনের সফরে আসছেন নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে শনিবার সকালে ভারতীয় বিমানবাহিনীর বিশেষ বিমানে তিনি ঢাকা এসে পৌঁছবেন। পরদিন রাতে ঢাকা ত্যাগ করবেন। দুই দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ সফরে সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়নের ঘোষণা ছাড়াও প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে দেড় ডজন চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে। গত মাসের মাঝামাঝি থেকেই মোদির সফরের জন্য প্রস্তুতি শুরু হয়। সফরসূচি অনুসারে, ৩৬ ঘণ্টার এ সফরে নরেন্দ্র মোদি ব্যস্ত সময় কাটাবেন। শনিবার সকালে শাহজালাল (রহ.) বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালে তাকে স্বাগত জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছোট্ট দুই শিশু তার হাতে তুলে দেবে ফুলের তোড়া। ১৯ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে তাকে অভ্যর্থনা জানানো হবে। বিমানবন্দরে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেবে বিভিন্ন বাহিনীর সুসজ্জিত দল। বিমানবন্দর থেকে মোদি যাবেন সাভারে জাতীয় সৃতিসৌধে। সেখানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো শেষে গাছের চারা রোপণ ও ভিজিটর বুকে স্বাক্ষর করবেন। পরে মোদির জন্য নির্ধারিত হোটেল সোনারগাঁও বা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যাবেন। সেখানে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিকালে মোদি যাবেন তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সেখানে দুই প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক ও একান্ত বৈঠক শেষে স্বাক্ষর হবে বেশকিছু চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ও বিনিময়পত্র। রাতে মোদির জন্য বিশেষ নৈশভোজের আয়োজন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে দেশের সব মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও বিরোধীদলীয় নেতা উপস্থিত থাকবেন। পরদিন সকালে মোদি যাবেন ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে। সেখানে তাকে স্বাগত জানাবেন ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রধান সেবায়েত। ঘুরে দেখবেন মূল মন্দির প্রাঙ্গণের শিব মন্দির ও কালী মন্দির। পূজা ও পুরোহিতের আশীর্বাদ গ্রহণ শেষে ৪০ জন হিন্দু নেতার সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। পরে মোদি যাবেন রামকৃষ্ণ মিশনের মঠ ও মন্দির পরিদর্শনে। এরপর বারিধারায় ভারতীয় হাইকমিশনের নতুন চ্যানসারি ভবনে অনুদানের প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। পরে যাবেন বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। সেখানে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির পক্ষে মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা গ্রহণ করবেন মোদি। এরপর আবাসস্থলে ফিরে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে নরেন্দ্র মোদির। সন্ধ্যায় মোদি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে উন্মুক্ত ভাষণ প্রদান করবেন। এটাই হবে ঢাকায় তার শেষ কর্মসূচি। এরপর শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে ভারতীয় বিশেষ বিমানে ঢাকা ত্যাগ করবেন নরেন্দ্র মোদি। তাকে বিদায় জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অন্য যে কোনো দেশের প্রধানমন্ত্রীর সফরের চেয়ে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে নরেন্দ্র মোদির সফরে। এ উপলক্ষে তিন স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনীর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছে ভারতীয় স্পেশাল প্রটেকশন গ্রুপ বা এসপিজি ও ব্ল্যাকক্যাট। এসবের প্রস্তুতি নিয়ে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের জন্য ভারতীয় অগ্রগামী দল ঢাকায় এসেছে। সোমবার ঢাকায় আসা সে দেশের ব্ল্যাকক্যাট কমান্ডো ও এসপিজির ২৪ সদস্যের দল গত দুই দিনে ঢাকায় কর্মসূচি থাকা প্রতিটি স্থানে গিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছে। নিরাপত্তাব্যবস্থাও খতিয়ে দেখেছে ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রসহ মোদির থাকার জন্য নির্ধারণ করে রাখা স্থানও। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় কোথায় অবস্থান করবেন সে বিষয়টি চূড়ান্ত হলেও তা প্রকাশ না করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অগ্রগামী নিরাপত্তা দল শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ, ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু জাদুঘর থেকে তেজগাঁওয়ের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও বঙ্গভবনে যাতায়াতের পথগুলোও সরেজমিন খতিয়ে দেখেছে দফায় দফায়। ঢাকায় চলাচলে ভারতের বিশেষ গাড়ি আসছে নয়াদিল্লি থেকে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর গাড়ির সামনে পেছনে যাতায়াতে এসপিজির জন্যও অন্তত দুটি বিশেষ আর্মাড ভেহিক্যাল আসবে। বিশেষ এ গাড়িগুলো নিয়ে ভারতীয় বিমানবাহিনীর সদস্যরা আজ ঢাকায় এসে পৌঁছতে পারেন বলে সূত্র জানিয়েছে। অবশ্য শুধু সড়কপথে নয়, নরেন্দ্র মোদির নিরাপত্তার জন্য নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যদের নিয়ে আকাশেও চক্কর দেবে বাংলাদেশের বিশেষ হেলিকপ্টার। অন্যদিকে, নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রথমবারের মতো ভারতের পাঁচ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ঢাকায় আসছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা, আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ ও মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লাল থানওয়ালা। তারা প্রত্যেকেই বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের ঘোষণার সময় উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া কলকাতা-ঢাকা-ত্রিপুরা বাস সার্ভিস উদ্বোধনের সময় উপস্থিত থাকবেন সংশ্লিষ্ট মুখ্যমন্ত্রীরা। মমতা ব্যানার্জি অবশ্য মোদির সফরের আগের রাতে অর্থাৎ আগামীকাল শুক্রবার রাতে ঢাকা এসে শনিবার রাতেই চলে যাবেন। তিনি তিস্তা চুক্তির বিষয়ে কথা বলতে আপত্তি জানালেও অন্যান্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা বাংলাদেশের সঙ্গে রাজ্যগুলোর সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কথা বলতে নরেন্দ্র মোদির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার, বিদ্যুৎ সহযোগিতাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলতে চান। তেমনি আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ গতকাল বাংলাদেশ আসাম নৌসড়ক যোগাযোগের বিষয়ে কথা বলার আহ্বান জানিয়েছেন। পাঁচ মুখ্যমন্ত্রীসহ ভারতের ২৪ জনের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি রয়েছেন মোদির সফরসঙ্গীর তালিকায়। এর মধ্যে আছেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও পররাষ্ট্র সচিব সুব্রানিয়াম জয়শঙ্কর। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ তার সঙ্গে সফরে না এলেও ভারতের অর্থ, বাণিজ্য, যোগাযোগ, নৌ মন্ত্রী ঢাকা আসতে পারেন।
তিস্তা চুক্তির বিষয়ে কথা তুলবে বাংলাদেশ : নরেন্দ্র মোদির সফরে ঐতিহাসিক সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের ঘোষণাপত্র বিনিময় ছাড়াও দুই দেশের সড়ক ও নৌ পথে যোগাযোগ এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রস্তুতি আছে ৩০টি চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের, তবে শেষ পর্যন্ত এ চুক্তির সংখ্যা ২০টির বেশিও হতে পারে। তবে এর মধ্যে বহুল প্রকাশিত তিস্তা চুক্তি নেই। কিন্তু তিস্তা চুক্তির বিষয়ে বাংলাদেশ কোনো কথা বলবে না, তা নয়। এ সফরেই তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে এমন অবস্থানে না থাকলেও দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে তিস্তা চুক্তির বিষয়টি উত্থাপিত হবে। সেখানে বাংলাদেশের প্রত্যাশা তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে একটি অগ্রগতির ঘোষণা আসবে ভারতীয় পক্ষ থেকে।

সর্বশেষ খবর