বৃহস্পতিবার, ৪ জুন, ২০১৫ ০০:০০ টা

সড়ক রেল নৌ : যোগাযোগে নতুন অধ্যায়ের লক্ষ্য

বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন সফরের সময় শুধু দুই দেশের জনগণের যোগাযোগকে ঘনিষ্ঠ করার প্রক্রিয়া সংশ্লিষ্টই ডজনখানেক সমঝোতা স্মারক ও বিনিময়পত্র হস্তান্তর হবে।
উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপগুলো হচ্ছে, দুই দেশের মধ্যে দুটি নতুন রুটে সরাসরি বাস চলাচল, নতুন রুটে রেল বিদ্যমান রুটে ট্রেনের সংখ্যা ও গুণগত মান বৃদ্ধি, উপকূলে নৌপরিবহনের মাধ্যমে পর্যটকদের চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এ ছাড়া সীমান্তবর্তী মানুষের সাপ্তাহিক সম্মিলন ও বাণিজ্যিক যোগাযোগের পরিধি বাড়াতে বাড়ানো হচ্ছে সীমান্ত হাটের সংখ্যা। বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ভারতে অন-অ্যারাইভাল ভিসার সুবিধা সংবলিত ই-ভিসা চালুর ঘোষণাও আসছে নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময়। ঢাকা ও দিল্লির পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জনগণের যোগাযোগকেই সহযোগিতার প্রথম সোপান ধরে নিয়ে এসব উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ঢাকা থেকে সিলেটের তামাবিল ও ভারতের মেঘালয়ের রাজধানী শিলং হয়ে আসামের রাজধানী গৌহাটি পর্যন্ত বাস চলাচল শুরু হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই সার্ভিসের উদ্বোধন করবেন আগামী ৬ জুন বিকালে। প্রথমে ৩০ সিটের মিনিবাস চলাচল করবে। চাহিদা অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে বাসের সংখ্যা বাড়ানো হবে। এসব বাসে ওয়াই-ফাই ও ট্র্যাকিং প্রযুক্তি থাকবে। যাত্রীদের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস সুবিধা পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হবে। সপ্তাহে দুই দিন ‘শ্যামলী-বিআরটিসি’ নামে ঢাকা-গৌহাটির পথে বাস চলাচল করবে। সড়ক পথে এটি চতুর্থ আন্তর্জাতিক রুট। এর আগে ঢাকা-কলকাতা, ঢাকা-শিলিগুড়ি ও ঢাকা-আগরতলা রুটে সরাসরি বাস চলাচল শুরু হয়। এখন আলাদা আলাদাভাবে কলকাতা থেকে ঢাকা এবং ঢাকা থেকে আগরতলা বাস সার্ভিস থাকলেও এই সফরে সরাসরি কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা আরেকটি রুট চালু হতে পারে। ভারতের দীর্ঘ দিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই রুট চালু হতে যাচ্ছে। অবশ্য আরও কয়েকটি রুটেও বাস চলাচল নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন দুই দেশের কর্মকর্তারা। ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম-কলকাতা, চট্টগ্রাম-শিলং, খুলনা-কলকাতা ও যশোর-কলকাতা রুটে বাস সার্ভিস চালুর সম্ভাবনা নিয়ে এরই মধ্যে দিল্লিতে আলোচনা করেছেন দুই যোগাযোগমন্ত্রী। বাসের পাশাপাশি রেল যোগাযোগকেও দেওয়া হচ্ছে গুরুত্ব। সম্প্রতি ঢাকা-কলকাতা রুটে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের ট্রিপ সপ্তাহে দুই দিন থেকে বাড়িয়ে সপ্তাহে তিন দিন করা হয়েছে। মৈত্রী ট্রেন আগে শুক্র ও বুধবার ঢাকা থেকে কলকাতা যেত। আর শনি ও মঙ্গলবার কলকাতা থেকে ঢাকায় আসত। নতুন নিয়ম অনুযায়ী এখন থেকে ট্রেনটি শুক্র, সোম ও বুধবার কলকাতা যাবে এবং শনি, রবি ও মঙ্গলবার কলকাতা থেকে ঢাকায় আসবে। ভারত এরই মধ্যে মৈত্রী এক্সপ্রেসে কোচের সংখ্যাও বাড়িয়েছে। সে হিসেবে ৩৮৬ আসন এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫৯। এখন মৈত্রী ট্রেনের যাত্রীদের সুবিধা নিশ্চিত করতে দুই প্রান্তে শুল্ক পরীক্ষা ও অভিবাসনের কাজ করা যায় কিনা- তা খতিয়ে দেখতে এবং পুরো ট্রেন এসি করতে দুই দেশ একটি বিনিময়পত্র স্বাক্ষর করতে পারে। সূত্র জানায়, নতুন করে সরাসরি খুলনা-কলকাতা ট্রেন চালুর সিদ্ধান্তটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়, স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে যাত্রী পরিবহনে নৌপথ ব্যবহার বিষয়ে প্রথম আলোচনা হয়েছিল। এরপর দীর্ঘ চার দশক অপেক্ষা করে এখন এটি চূড়ান্ত রূপ পেতে যাচ্ছে। কারণ ভারতের স্বাক্ষরিতব্য ‘কোস্টাল শিপিং অ্যাগ্রিমেন্ট’র অধীনে পণ্য পরিবহনের পাশাপাশি যাত্রী পরিবহনের সুযোগও থাকবে। বর্তমানে নৌ প্রটোকলের আওতায় তিনটি রুটে দুই দেশের মধ্যে দুই শতাধিক পণ্যবাহী নৌযান চলাচল করছে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর ভারতের কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের সঙ্গে বাংলাদেশের কয়েকটি নদীবন্দরের সরাসরি যাত্রী ও পর্যটক চলাচলের সুযোগ হবে। অন্যদিকে সীমান্ত এলাকার জনগণের যোগাযোগ ও বাণিজ্যের জন্য বাংলাদেশ-ভারত চতুর্থ ‘সীমান্ত হাট’ চালু করতে যাচ্ছে। পশ্চিম ত্রিপুরার কসবাতে উদ্বোধন হতে যাওয়া এই হাট ইতিমধ্যেই ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে। আগরতলা থেকে ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত এই হাটে স্থানীয় ১৫-১৬ রকমের কৃষিজ ও প্রাণিজ পণ্য ছাড়াও ক্ষুদ্রশিল্পের পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা থেকে পরবর্তী ছয় ঘণ্টার জন্য বসবে এই হাট। এখানে প্রবেশ করতে আশপাশের পরিবারগুলোকে একটি করে কার্ডও দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে সপ্তাহে একদিন করে আশপাশের মানুষের মধ্যে দেখা সাক্ষাতে হৃদ্যতাও বাড়বে। এর আগে কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলার বালিয়ামারী সীমান্তে (ভারতের পশ্চিম গারো হিলের কালাইয়ের চর সীমান্তে), সুনামগঞ্জ সদরের ডলোরা সীমান্তে (ভারতের পূর্ব খাশি হিলের বালাত সীমান্তে) এবং ফেনীর ছাগলনাইয়ার পূর্ব মধুগ্রাম-ছয়ঘরিয়ার মধ্যবর্তী স্থানের সীমান্তে (ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরার শ্রীনগর সীমান্তে) তিনটি সীমান্ত হাট চালু হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখবে বাংলাদেশিদের জন্য ভারতের ভিসা সহজীকরণের উদ্যোগ।
এতদিন বাংলাদেশে ভারতীয় ভিসার জন্য বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। অনলাইনে ই-টোকেন পেয়ে সাক্ষাৎকারের তারিখের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়েছে। সম্প্রতি এই ভোগান্তি কমাতে ট্যুরিস্ট ভিসা ছাড়া অন্য ভিসার বিষয়ের জন্য সাক্ষাৎকারের সময় ছাড়াই ভিসা সেন্টারে জমা দেওয়ার নিয়ম চালু করা হয়েছে। এখন নরেন্দ্র মোদি সফরে এসে ভারতের নতুন চালু করা ইলেকট্রনিক ভিসা পদ্ধতিতে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্তির ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন। এর ফলে বাংলাদেশিরা অনলাইনে আবেদন করে এক মাস মেয়াদের ট্যুরিস্ট ভিসা পেয়ে যাবেন। ভারতীয় হাইকমিশন বা ভিসা সেন্টারেও যেতে হবে না । এই পদ্ধতিতে অনলাইনে আবেদন করতে হবে।
 সেখানেই ছবি ও পাসপোর্টের কপিসহ অন্যান্য তথ্য আপলোড করতে হবে। ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে প্রায় ৬০ মার্কিন ডলার বা পাঁচ হাজারের কিছু কম টাকা ভিসা ফি পরিশোধ করতে হবে। তখন ফিরতি ই-মেইলে একটি ইলেকট্রনিক ট্যুরিস্ট ভিসা (ইটিভি) ভিসার কপি চলে আসবে। এই কপি দেখিয়ে আবেদনের চার দিন পর থেকে ৩০ দিনের মধ্যে ভারতের নয়াদিল্লি, মুম্বাই, কলকাতা, বেঙ্গালুরু, কোচিন, গোয়া, হায়দ্রাবাদ, ও ট্রিভানড্রাম এ নয়টি বিমানবন্দরের যে কোনো একটি দিয়ে প্রবেশ করা যাবে। তবে আবেদনকারীকে অবশ্যই রিটার্ন এয়ার টিকিট ও পর্যাপ্ত অর্থ জমা দেখাতে হবে। ভারতে প্রবেশের পর থেকে মোট ৩০ দিন মেয়াদ থাকবে। বছরে দুবার এমন ভিসায় ভারতে ভ্রমণ করা যাবে।

সর্বশেষ খবর